সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে

সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে

শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না বলে আবারও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। সংসদ বিলুপ্ত করে নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা দিতে হবে। সেই সরকার নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করবে। নতুন নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ নির্বাচন করবে। 

শনিবার শেষ বিকেলে বরিশাল নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যানে বিএনপি’র বিভাগীয় গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। 

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, বরিশালের সমাবেশস্থলে ৩ দিন ধরে অবস্থান করেছেন নেতাকর্মী সমর্থকরা। অধিকার ফিরে পাবার দাবিতে সমাবেশে এসেছেন তারা। আওয়ামী লীগ দেশের সকল অর্জন ধ্বংস করে দিয়েছে। তারা ৭৫ সালে বাকশাল কায়েম করেছিলো। গত ১৫ বছর ধরে একই কায়দায় দেশ শাসন করছে তারা। উপরে শুধু গণতন্ত্রের খোলস। তারা বিএনপির লাখ লাখ নেতাকর্মীকে মামলা দিয়েছে। জেলে পুড়েছে। তাদের হাতে এই দেশের কেউ নিরাপদ নয়। 

 

বিএনপি মহাসচিব বলেন, তারা সমস্ত টাকা বিদেশে পাঁচার করেছে। বিদ্যুৎ নিয়ে ঢাকঢোল পিটিয়েছে। শতভাগ বিদ্যুতায়নের ঘোষণা দিয়েছে। হাতিরঝিলে বিদ্যুতের উৎসব করেছে। এখন বিদ্যুৎ নেই। রিজার্ভ নেই। কিছুই নেই। তারা ১০ টাকা কেজি দরে চাল এবং ঘরে ঘরে চাকরি দেওয়ার কথা বলেছিলো। এখন চালের দাম ৭০ থেকে ৮০ টাকায় ওঠানামা করছে। সাধারণ মানুষকে কোনো চাকরি দেয়নি। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের চাকরি দিয়েছে। প্রত্যেকের কাছ থেকে তারা ২০ লাখ করে টাকা নিয়েছে। 

আওয়ামী লীগ ‘বর্গি’র রূপ নিয়েছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, তারা যখই ক্ষমতায় আসে তখনই ভোট চুরি করে। তারা যখনই ক্ষমতায় আসে তখনই চুরি আর সন্ত্রাস করে। এখন আবার নতুন করে ভোট চুরির পায়তারা করছে ইভিএম দিয়ে। 

বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই সরকার এতদিন মানুষকে উন্নয়নের গল্প শুনিয়েছে। এখন দুর্ভিক্ষের কথা বলছে। দেশে এখনও ৪২ ভাগ মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে বাস করছে। ৩০ ভাগ মানষ এখনও খাবার পায় না। এই দেশের মানুষ তাদের হাত থেকে মুক্তি চায়। 

সমাবেশ মাঠে উপস্থিত জনতার উদ্দেশে মির্জা ফখরুল আরও বলেন, এই আন্দোলন বিএনপি’র জন্য নয়, সমগ্র জাতীকে রক্ষার আন্দোলন। এই আন্দোলনের ফয়সাল হবে রাজপথে। এই আন্দোলনে সবাইকে ঐক্যবব্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। 

গণসমাবেশের প্রধান বক্তা বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, তারেক রহমানের ডাকে মানুষ জেগে উঠেছে। সকল বাধা উপেক্ষা করে বরিশালের বিভাগীয় গনসমাবেশ সফল হয়েছে। বরিশালের গণসমাবেশ যাতে গণমাধ্যমে প্রচার হতে না পারে সে জন্য ফ্রিকোয়েন্সি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। গণমাধ্যম লিখতে পারে না। এডিট করে তাদের মূল কথা বাদ দিয়ে লিখতে হয়। সারা দেশে গণগ্রেফতার চলছে। শত বাধা বিপত্তি উপেক্ষা করে যেভাবে বরিশালের সমাবেশে মানুষ এসেছে এর চেয়ে বড় আন্দোলন আর হতে পারে না। 

ইভিএম- এ কোনো নির্বাচন হবে না দাবি করে মির্জা আব্বাস আরও বলেন, নতুন প্রজন্ম জানে না ভোট কেমন। নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মকে ভোট দেওয়ার সুযোগ দিতে হবে। 

গণসমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, দেশে সততা নেই। মানবাধিকার নেই। নারী ও শিশুর নিরাপত্তা নেই। জনগণের অধিকার নেই। ব্যাংকে টাকা নেই। তারা (আওয়ামী লীগ) সত্য কথা বলে না। তারা মুখে যা বলে তা করে না। আর যা করে সেটা মুখে বলে না।

স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বরিশালের মানুষ আন্দোলনকে বিপ্লবে পরিণত করেছে। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের উদ্বৃতি দিয়ে তিনি বলেন, তিনি মাঠে খেলার কথা বলেছেন। বিএনপি তো প্রথম ডিভিশন টিম। আওয়ামী লীগের মতো সেকেন্ড ডিভিশন টিমের সাথে বিএনপি’র খেলা মানায় না। আগে পদত্যাগ করে মাঠে আসুন তখন খেলা হবে। 

আরেক বিশেষ অতিথি বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বলেন, শেখ হাসিনার অধিনে এই দেশে আর কোনো নির্বাচন হবে না। 

বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম বিএনপি ক্ষমতায় গেলে সাম্প্রতিক আন্দোলনে নিহতদের পরিবারকে পুনর্বসনের প্রতিশ্রুতি দেন। 

আরেক ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বীর উত্তম বলেন, দেশে এখন চাঁদাবাজী লীগ, হাইজ্যাক লীগসহ দুর্বৃত্ত সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশ পৃথিবীর একমাত্র দেশ যার রিজার্ভ পর্যন্ত চুরি হয়েছে। এক তরফা ভোটে তারা কোটি টাকায় চেয়ারম্যান এবং ১০ লাখ টাকায় মেম্বারের মনোনয়ন বিক্রি করে বলে তিনি অভিযোগ করেন। 

মহানগর বিএনপি’র আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুকের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব মীর জাহিদুল কবির ও জেলা বিএনপি’র সদস্য সচিব আক্তার হোসেন মেবুলের সঞ্চালনায় গণসমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন বরিশালের গণসমাবেশের প্রধান সমন্বয়কারী ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান প্রফেসর ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু, অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদিন, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ার, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ও হাবিব উন নবী সোহেল, আন্তর্জাতিক সম্পাদক মাসুদ আহমেদ তালুকদার, সাবেক সাংসদ নাজিম উদ্দিন আলম, বিএনপি’র প্রশিক্ষণ সম্পাদক এবিএম মোশাররফ হোসেন, বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরি, দুই সহসাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান ও মাহবুবুল হক নান্নুসহ বিভাগের ৬ জেলা বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা। 

এর দুই দিন আগে থেকেই সমাবেশস্থলে অবস্থান নেন দক্ষিণের বিভিন্ন জেলা উপজেলাসহ প্রত্যন্ত এলাকার বিএনপি নেতাকর্মীরা। সকাল থেকেও দলে দলে মিছিল আসে সমাবেশস্থলে। প্রখর রোদ থাকায় বিকেল ৩টা পর্যন্ত মাঠের অনেকাংশ ছিলো ফাঁকা। সমাবেশে আগত নেতাকর্মীরা বাইরের বিভিন্ন সড়কে গাছের নীচে ছায়ায় অবস্থান নেন। রোদ পরে যাওয়ার পর শেষ বিকেলে সমাবেশস্থল লোকারন্য হয়।