সোনাইল জয় করে আছে প্রকৃতি

সোনাইল জয় করে আছে প্রকৃতি

সোনার ঝুমকা নয়, সোনার সঙ্গে কোন মিল আছে কি না জানি না। তারপও সোনাইল ফুল জয় করে আছে প্রকৃতি। নামটা তার সোনামাখা সোনাইল রয়ে গেছে। গ্রাম বাংলায় হোনাইল বা সোনালু নামে অধিক পরিচিত। এই গ্রীষ্মের দুপুরে ঝুমকা ফুলের মত সারি ঝুলে থাকে গাছ জুড়ে। দেখলে পরান ঝুড়িয়ে যায় পথিকের।

দখিন হওয়ার দোলুনীতে সোনাইন ফুল দুলতে দেখে সুপ্ত প্রাণ জেগে না ওঠে পারে না পথিকের। এই সময় গ্রামবাংলার অনেক কিশোরীর কানে ঝুমকোর মতো দুলতে দেখা যায় সোনাইন ফুল। গ্রীষ্মের উন্মাতাল উজ্জ্বল হলুদ বর্ণের সোনাইল ফুল যে কাউকে আকৃষ্ট করে। তাই বোধ করি  ঠাকুর রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, ‘দখিন হাওয়া জাগো জাগো,  জাগাও জাগাও জাগাও আমার সুপ্ত এ প্রাণ...’।

এক সসময় সোনাইল গাছ নেই এমন গ্রাম খুঁজে পাওয়া যেত না। বর্তমানে প্রাকৃতিক বন উজার করার কারণে এখন প্রায় দুর্ভল জাতের তালিকায় নাম ওঠাতে যাচ্ছে সোনাইল গাছ। এবার করোনার প্রাদুর্ভাব থাকলেও প্রকৃতি যেন নতুন সাজে সাজতে শুরু করে। তার সঙ্গে মিল রেখে সোনাইল ছাড়াচ্ছে সোনার আলো। তবে শহুরে আধুনিক শিক্ষার্থীদের অনেকে চেনে-ই না এটার পরিচয়। অথচ এর রয়েছে অনেক ওষধি গুণ।

সোনাইল গাছের পরিচিতি: সোনাইল গাছেন বৈজ্ঞানিক নাম Cassia Fastula, পরিবার Legumonosae, এর ফল লম্বা লাঠির আকৃতির হয়ে থাকে যা বানরের বিশেষ খাবার হিসেবেও পরিচিত। শক্ত ফলের কারণে গাছের নাম হয়েছে বাঁদর লাঠি। এজন্য স্থানীয়ভাবে এটাকে বানরের লাঠি বা বান্দর লাঠি, সোনালু বা সোনাইল নামে ডাকা হয়। 

গাছের আকৃতি: সাধারণত সোনাইল গাছ বা বৃক্ষ মধ্যম আকৃতির হয়ে থাকে। এর পাতা পক্ষল যৌগিক।

সোনাইল ফুল: সোনাইল গাছের ফুল মঞ্জুরীতে জন্মায়। অনেকটা কানের ঝুমকা ফুলের মত। পাঁচটি পাপড়ি থাকে। ফুলের রঙ উজ্জ্বল হলুদ বর্ণের হয়ে থাকে। ফল: লম্বা নলাকার।

গাছের ওষধি গুণাগুণ: সোনাইল ফলের মজ্জা, গাছের ছাল উৎকৃষ্ট জোলাপ, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে ব্যাপকভাবে ব্যহৃত হয়। অন্যদিকে গ্যাসট্রিকের ব্যাথা, ক্ষুধামন্দায়, বাতের চিকিৎসায় এবং টনসিলের চিৎিসায় এর ফল ব্যবহৃত হয়। এ ছাড়া সোনাইল গাছের পাতার রস বাত রোগ, ক্ষয়, মেহ রোগের উপকারী হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

বরিশাল সরকারি ব্রজমোহন কলেজের উদ্ভিদ বিদ্যা বিভাগের সাবেক অ্যধ্যাপক মো. রফিকুল ইসলাম ভোরের আলোকে বলেন, সোনাইল ফুল গাছ হিসেবে প্রকৃতির একটি বড় অংশ দখল করে আছে। অথচ এর ওষধী গুণ সম্পর্কে তেমন কোন প্রচার পায়নি। এর ওষধী গুণ যা আমাদে অনেকেরই জানার বাইরে। কিন্তু এত সুন্দর এই জাতটি প্রকৃতি থেকে আস্তে আস্তে বিলিণ হয়ে যাচ্ছে। একে রক্ষা রকতে উদ্যোগ নিতে হবে।