স্ত্রীকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে আত্নগোপনে মুরাদ

পদ হারানো সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানের বিরুদ্ধে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগে ধানমন্ডি থানায় সাধারণ ডায়েরী (জিডি) করেছেন তার স্ত্রী ডা. জাহানারা এহসান।
এর আগে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এ ফোন করে পুলিশের সহযোগিতা চান ডা. জাহানারা এহসান। ঘটনার পর থেকেই ডা. মুরাদ হাসান আত্নগোপনে আছেন।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ জার্নালকে জিডির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ধানমন্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইকরাম আলী মিয়া।
তিনি বলেন, সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে ধানমন্ডি থানায় এসে ডা. মুরাদ হাসানের বিরুদ্ধে জিডি করেন তার স্ত্রী ডা. জাহানারা এহসান।
ওসি বলেন, ডা. মুরাদের স্ত্রী দুপুরে ৯৯৯ এ ফোন দিয়ে পারিবারিক কলহের জের ধরে আইনি সহায়তা চান। পরে ফোন করে জানান, তাকে মারধর করা হচ্ছে। এমনকি প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের একটি টিম তার বাসায় যায়। পরে তিনি থানায় আসেন, তার অভিযোগের বিষয়ে আমরা জানার চেষ্টা করেছি।
ইকরাম আলী মিয়া বলেন, পারিবারিক কলহের বিষয়গুলো ডা. জাহানারা এহসান আমাদের জানিয়েছেন। মানসিক এবং প্রাণনাশের হুমকির অভিযোগ এনে তার স্বামী মুরাদ হাসানের বিরুদ্ধে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে ধানমন্ডি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সাইফুল ইসলাম বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, অভিযোগ পেয়ে আমি নিজে ফোর্সসহ ওই বাসায় যাই। এ সময় ডা. জাহানারা এহসান তার স্বামীর বিরুদ্ধে শারীরিক নির্যাতন এবং প্রাণনাশের হুমকির অভিযোগ করেন।
ডা. মুরাদ হাসান তখন বাসায় ছিলেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে সাইফুল ইসলাম বলেন, আমরা যখন ঘটনাস্থলে পৌছে ডা. মুরাদকে বাসায় দেখতে পায়নি। তার আগেই তিনি বাসা থেকে বেরিয়ে যান।
এদিকে জিডির বিষয়ে জানতে ডা. জাহানারা এহসানের সঙ্গে মুঠোফনে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
জিডিতে উল্লেখ করা হয়, বিগত ১৯ বছর বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছি। বিবাহিত জীবনে আমাদের সংসারে এক মেয়ে রামিসা ফারিহা রাজকন্যা (১৬) এবং এক ছেলে হাসান আবরার মাহির যুবরাজ (১১) রয়েছে। বিবাদী আমার স্বামী। তিনি বর্তমান সরকারের সংসদ সদস্য এবং সাবেক প্রতিমন্ত্রী।
সাম্প্রতিক সময়ে তিনি কারণে-অকারণে আমাকে এবং সন্তানদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করাসহ শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে আসছেন। এবং হত্যার হুমকিও দিচ্ছেন। আজ ৬ জানুয়ারি, সময় অনুমান ২টা ৪৫ মিনিটের দিকে আগের ন্যায় আমাকে এবং আমার সন্তানদের গালিগালাজ করে এবং মারধর করার জন্য উদ্ধত হলে আমি ৯৯৯-এ কল করি। পরে ধানমন্ডি থানা পুলিশ উক্ত বাসার ঠিকানায় পৌঁছালে বিবাদী বাসা থেকে বের হয়ে যায়। এমতাবস্থায় আমি নিরাপত্তাহীনতায় আছি। বিবাদী আমাকে এবং আমার সন্তানদের যেকোনো সময় ক্ষতিসাধন করতে পারে।’
এর আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অসৌজন্যমূলক বক্তব্য দেয়া ও অশালীন কথোপকথনের অডিও ফাঁস হওয়ায় ডা. মুরাদকে গত ৭ ডিসেম্বর মধ্যে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করতে বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ নির্দেশনার পর পদত্যাগ করেন মুরাদ। ৭ ডিসেম্বর রাতে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
একই দিন রাতে জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের এক জরুরি সভায় মুরাদ হাসানকে জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদকের পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।
এর ধারাবাহিকতায় তাকে সরিষাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। এরপর মুরাদ হাসানকে তার নিজ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।
এরপর গত ৯ ডিসেম্বর রাত ১টা ২০ মিনিটে কানাডার উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন মুরাদ হাসান। এমিরেটস এয়ারলাইনসের ফ্লাইট ইকে ৮৫৮৫-এ তিনি প্রথমে দুবাই যান, এরপর সেখান থেকে আরেকটি ফ্লাইটে কানাডার উদ্দেশে যাত্রা করেন। তবে টরন্টোর পিয়ারসন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাকে ফিরিয়ে দেয় কানাডীয় কর্তৃপক্ষ।
মুরাদ হাসান এরপর মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতে ঢোকার চেষ্টা করেন। দুবাই ইমিগ্রেশনও আটকে দেয় সাবেক এই প্রতিমন্ত্রীকে। এরপর তিনি বাধ্য হয়ে গত ১২ ডিসেম্বর বিকেল ৪টা ৫১ মিনিটে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একে-৫৮৬ ফ্লাইটে দেশে ফেরেন তিনি।