স্বপ্নের নাম পদ্মা সেতু:বরিশাল জেলা প্রশাসকের বাণী

স্বপ্নের নাম পদ্মা সেতু:বরিশাল জেলা প্রশাসকের বাণী

বাংলাদেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের মানুষের এক চোখ ধাঁধানো স্বপ্নের নাম পদ্মা সেতু। রাজধানী ঢাকার সাথে সুন্দর ও নিরাপদ যাতায়াত ব্যবস্থার মাধ্যমে এ অঞ্চলের সরাসরি সংযোগ স্থাপনের জন্য মানুষ অপেক্ষা করেছে দীর্ঘদীন। অবশেষে শত বাধা পেরিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের  সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক ইচ্ছায় স্বপ্নের পদ্মা সেতু এখন বাস্তবে রূপ লাভ করেছে। তাই পদ্মা সেতু শুধু একটি সেতুই নয়, এটি আমাদের অনন্য গৌরব, মর্যাদা আর অহংকারের নিদর্শন। 

পদ্মা সেতু স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প। প্রমত্তা পদ্মার দুই পাড়কে সংযুক্ত করে এ সেতু নির্মাণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০০৯ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। ২০০৯ সালের পর বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুতে অর্থায়নে আগ্রহ প্রকাশ করলে তাদের সাথে ঋণচুক্তি হয় । কিন্তু ২০১২ সালে ঋণচুক্তি বাতিল করে বিশ্বব্যাংক; অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে পদ্মা সেতু প্রকল্প । বিশ্বব্যাংক ঋণচুক্তি স্থগিত করলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে ঘোষণা দেন পদ্মা সেতু অবশ্যই হবে এবং তা নিজস্ব অর্থায়নেই। তার ঘোষণার প্রেক্ষিতে নিজস্ব অর্থায়নে ২০১৭ সালে উপরে মোটরযান সড়ক এবং নিচে রেলপথের ব্যবস্থা রেখে বহুল আকাঙ্ক্ষিত এ সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের চেহারা বদলে দেওয়া ৬.১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ১৮.২ মিটার প্রস্থের পদ্মা বহুমুখী সেতু বাংলাদেশের সবচেয়ে বৃহৎ সেতু। 

 অসংখ্য নদ-নদী, খাল-বিল, প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য ও ঐতিহাসিক নিদর্শন সমৃদ্ধ রূপসী বাংলার জেলা বরিশাল। শিল্প ও পর্যটনের অপার সম্ভাবনা সত্ত্বেও যোগাযোগ অবকাঠামোর অভাবে আর্থ-সামাজিকভাবে পিছিয়ে ছিল বরিশাল। নদীকেন্দ্রিক যোগাযোগ ব্যবস্থাকে কাজে না লাগানোর ফলে তেমন গড়ে ওঠেনি ভারী শিল্প-কারখানাও। সেতুটি চালু হলে সড়কপথের উন্নয়নের পাশাপাশি অবকাঠামোরও উন্নয়ন হবে, যা ব্যবসা-বাণিজ্যেরও প্রসারে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। পদ্মা সেতু চালুর পরে বরিশাল জেলার শিল্প ও পর্যটন খাতে বিশেষ উন্নয়ন সাধিত হবে। বরিশাল জেলার দূর্গাসাগর দীঘি, সাতলা বিল, গুঠিয়া মসজিদ, অক্সফোর্ড মিশন চার্চ, কড়াপুর মিয়াবাড়ি মসজিদ, সুগন্ধা শক্তিপীঠ, মাহিলাড়া মঠ প্রভৃতি পর্যটক আকর্ষণযুক্ত স্থানকে ঘিরে পর্যটকদের সমাগম বাড়বে। এসব পর্যটন এলাকা ঘিরে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে এবং কর্মসংস্থানের নতুন দুয়ার খুলবে। পদ্মা সেতু ঘিরে এ অঞ্চলে এরই মধ্যে গড়ে উঠছে একের পর এক শিল্প-কারখানা, কৃষি শিল্প, পর্যটন শিল্প, স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ নানা প্রতিষ্ঠান। আর এসব খাতে উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারীদের মাধ্যমে সৃষ্টি হচ্ছে বিশাল কর্মসংস্থানের। 

সকল বাধা অতিক্রম করে আত্মমর্যাদা, আত্মপরিচয় ও সক্ষমতার প্রতীক পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। আগামী ২৫ জুন ২০২২ তারিখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বপ্নের পদ্মা সেতুর শুভ উদ্বোধন করবেন। সাথে সাথে জ্বলে উঠবে এদেশের কোটি মানুষের হৃদয় থেকে উৎসারিত আলো, যে আলোয় এগিয়ে যাবে দক্ষিণাঞ্চলসহ পুরো বাংলাদেশ । আর দৃঢ় মনোবল, আত্মবিশ্বাস ও আত্মমর্যাদার সাক্ষী হয়ে প্রমত্তা পদ্মার বুকে যুগ থেকে যুগান্তরে দাঁড়িয়ে থাকবে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। 

কোটি মানুষের স্বপ্নের পদ্মা সেতুর সফল বাস্তবায়নের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধান নদী খালের জেলা বরিশালের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।