হাসান আরিফের বিদায়-কষ্টের,সোহেল তাজের পদযাত্রা-কঠিন

হাসান আরিফের বিদায়-কষ্টের,সোহেল তাজের পদযাত্রা-কঠিন

মানুষের নানাবিধ নিত্য টানাপোড়েন ক্রমশ মনের সকল প্রশান্তিগুলোকে নাই করে তুলছে। কোন মুখেই যেন আর হাসি নেই। যা দেখি সে সকলই হাসির অভিনয়। তাই হয়তো হাসির বিষয়-বস্তুগুলো পারতপক্ষে আমাদের এড়িয়ে চলে। তারইবা কি করবার আছে? সেওতো পাচ্ছে না কোন প্রশান্ত মন, প্রাণ। যাকে ধারণ করে সে তাকে প্রকাশ্যে উদ্যোগী করে তুলতে পারে। আগে অনেক সময় চোখে পরতো পেস্টের বিজ্ঞাপন। সে বিজ্ঞাপনের দুটি বিষয় একেবারেই অবধারিত ছিলো। প্রথমত দেখবার মত দুপটি দাঁত আর দি¦তীয়ত তার সহযোগে মিষ্টি হাসি। সে ধারা এখন বিলীন। সেদিন দেখলাম পেস্টের এক নতুন বিজ্ঞাপন। অদ্ভুত অসাধারণ।

এক মাহুত তার হাতি নিয়ে এসে দাঁড়ালো এক ঝকঝকে বিপনি বিতানের সামনে। অত:পর হাতির শুরে করে তুলে ধরলো এক বিশাল মালামালের ফর্দ। কিন্তু বিপনি বিতানের মালিক মালামাল দিতে নারাজ। সে বললো ‘তোকে কোন মালামাল দেওয়া যাবে না। কারণ তোর হাতির দাঁত অপরিষ্কার, আগে হাতির দাঁত পরিষ্কার করে নিয়ে আয়। এই নে পেস্ট।’ বলে একটা পেস্ট ছুড়ে দিল মাহুতের দিকে। মাহুত সেই পেস্ট হাতির দাঁতের দিকে তুলে ধরতেই ঝকঝক করে উঠলো হাতির দাতঁ! এক লোক এটা দেখে অবাক বিষ্ময়ে দোকানিকে জিজ্ঞেস করলো ‘ভাই এটা কি?’ দোকানি বললো ‘এটা দাঁত মাজার পেস্ট।’ লোকটি প্রশ্ন করলো। হাতির? দোকানি বললো ‘আরে না মানুষের।’ আরে বাপ্স মানুষের পেস্টেই হাতির দাঁত পরিষ্কার? দিনতো ভাই আমাকেও দুটো। 

এটা নিতান্তই বিজ্ঞাপন। যেখানে সত্যের, স্বাভাবিকত্বের লেসমাত্র চিহ্ন নাই। তবু এমন চিন্তাকল্পের মানুষেরা, এই অদ্ভুত গল্পের রূপ মানুষের সামনে তুলে ধরে মানুষকে জয় করে। মানুষ ওই পন্যাকৃষ্ট হয়, তাকে গ্রহণ করে। সফল হয়, জনপ্রিয় হয় বিজ্ঞাপন। সে হাতির দাঁতের পেস্টই হোক আর আখের রসের চিনির তৈরি খেজুরের গুড়ই হোক। আখেরে অর্থযোগ ঘটে বিজ্ঞাপন নির্মাতারই। মূলত সাধারণ মানুষ আমরা বোকা, অথচ ভাবতে পছন্দ করি আমরা বুদ্ধিমান।

এমন ভুরি ভুরি উদাহরণের কোন অভাব নেই। এই তো সে দিন একটি আবৃত্তি সংগঠনের বিশ বছর পূর্তির আনুষ্ঠানিকতা নিয়ে কাথা হচ্ছিল শিল্পকলা প্রাঙ্গনে। এই জায়গাটি নিতান্তই সামাজিক, সাংস্কৃতিক, কখনো রাজনৈতিক কিংবা প্রশাসনিক মানুষদের সম্মিলনের জায়গা। কিন্তু না। দেখলাম হঠাৎ সেখানে হাজির, সমাজের প্রবীণ কিছু মানুষ। কোন না কোনভাবে তারা পরিচিত মুখ এবং বয়সে তারা প্রায় সবাই প্রবীণ। তারা এসে আমাদের মাধ্যে যিনি সর্বাপেক্ষা তরুণ-প্রবীণ তাকে বলতে শুরু করলো। এবং কথাগুলো মূলত একটি নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয়ে যা যা বলা যায়। সংগত-অসংগত, উচিত-অনুচিত, প্রাসঙ্গিক-অপ্রাসঙ্গিক। তার সবই তারা বলে চললো অনেকটা সময় নিয়ে। শুধু উল্লেখ করবার মতো ভালো বিষয় ছিলো, তাদের কথায় কোন উত্তেজনার আভাস ছিলো না! তবে অন্যকে দোষারোপ করবার প্রয়াস ছিলো। ছিলো রাজনৈতিক লেজুরভিত্তিক পথ খোঁজার দুষ্ট বুদ্ধি। 

বিষয়টি আমাদের ভালো না লাগলেও যেহেতু আমাদের কথার মধ্যে তারা প্রবেশ করেছিল, তাই আমাদের মধ্যেও কেউ কেউ প্রশ্ন তুলে বলেছিলো। কেন সকাল বিকাল রাতে হাঁটার জন্য একটি কমিটি করতে হবে? কেন সেখানে ভোটের মত কার্যক্রমের প্রয়োজন পরবে? আপনারা নির্বাচিত হয়ে এমন কি কি সুবিধা প্রদান করবেন যারা হাঁটাহাঁটি করে তাদের জন্য? তারাতো কেউ ডাক্তারের পরামর্শে, কেউ নিজ উদ্যোগে নিজ বুদ্ধি বিবেচনায় হাঁটতে আসেন। তাদের মধ্যে এই বিভাজন কেন? অপনারা তাদের কি কি উপকারে আসবেন? কি প্রতিশ্রুতি দিবেন? তাদের হাঁটা আপনারা সভাপতি/ সম্পাদক কিংবা সদস্যরা কি হেঁটে দেবেন? না কি বিজয়ী হয়ে বলতে শুরু করবেন- আপনি এই মাঠে, আপনি ওই মাঠে হাঁটবেন। এটি শুধুমাত্র মহিলাদের হাঁটার মাঠ। এখানে পুরুষের প্রবেশ নিষেধ! নাকি নির্বাচনে বিজয়ী হবার পরে ধীরে ধীরে বুঝাতে সচেষ্ট হবেন- কেউ যেনো আপনার অনুমতি ছাড়া কোন মাঠে হাঁটতে না যান। তা নাহলে সুস্থ থাকবার জন্য মুক্ত বাতাসে খোলা মাঠে হাঁটবার জন্য, নেতা হতে হবে কেন? নেতৃত্বের প্রয়োজন পরবে কেন? তার জন্য জীবন সায়াহ্নে এসেও বিভাজিত হয়ে নির্বাচন কেন?  

তাহলে কোথাও কি যোগ্যতা, বয়স, সম্পর্ক, সহনশীলতা থাকবেই না, শুধুই বিভাজন, সকল ক্ষেত্রে? জীবনের প্রতিটা জায়গা যদি অর্থ উপর্জনের ক্ষেত্র বানানো হয়, প্রতিটা জায়গা যদি মানবিক বোধ শূন্য হয়ে কেবলই শক্তির দুয়ারের ভিখারী হয়ে যায়। তাহলে লজ্জা এসে দুয়ারে দাঁড়িয়ে বলতে বাধ্য হবে না ‘আমায় চিনতে পারো? আমি লজ্জা!’ তাই হলো অবশেষে লজ্জাই লজ্জিত হলো লজ্জায়।

না, থামানো গেলো না। নির্বাচনটা হলোই, সুস্থ থাকতে প্রত্যয়ী সান্ধ্য ও প্রভাতে হাঁটা পার্টিদের। শতকরা ৯৪ ভাগ ভোট কাষ্ট হলো যথাযথ নির্বাচনের নিয়মে। বাংলাদেশের কোন নির্বাচনে আর কোন দিন এমনটা সম্ভব হবে বলে মনে হয় না। এখানে হলো। শান্তিপ্রিয়, শান্ত, স্বাস্থসচেতন কিছু মানুষ সেটা করে দেখাতে পারলো। বিপত্তিটা হলো, এখানেও দেখা গেল স্বাস্থের জন্য নয়, শক্তি আর আধিপত্যের জন্য ফুল নিয়ে তারা হাজির হয়ে গেল রাজনীতির আশীর্বাদের দুয়ারে। না, কোন ডাক্তারের দুয়ারে নয়। যারা পয়সার বিনিময়ে হলেও বলে, হাটো সুস্থ থাকো।

না কিছু করবার নেই। এখন সর্বত্র সবকিছুই গয়রহ। বিন্দু বিসর্গও যেন ব্যাতিক্রম নেই কোথাও। তার মধ্যেও যদি কেউ একটু মাথা তুলে দাঁড়ায়, সেও যেন অসহ্য বিধাতার। তাকেও সে তুলে নিয়ে যায়। তবু কেউ প্রশ্ন করি না তাকে। ‘কেনরে বিধাতা পাশান হেন?’ কি হয় এক আধখানা ব্যাতিক্রমকে ফেলে রাখলে? ¯্রষ্টাও কি তার ব্যাতিক্রম সৃষ্টি দেখে ভিত হন? তারও কি ধৈর্য্যশক্তি রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণে চলে গেল? প্রতিদিন কত শত হাজার মানুষ চলে যায়, চলে যাচ্ছে, চলে যাবে। একদিন সময় করে আমরাও যে কেউ এই পথেরই পথিক হবো। নিশ্চিতভাবেই এই কথাটা জানি, কেবল জানি না তার সময়। এমনই এক নির্ধারিত সময় সেদিন এসে হাজির হোল বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে খুব কম বয়সে ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিত্বে রূপান্তরিত এক মানুষর কাছে। নাম হাসান আরিফ। জন্ম ১৯৬৩সাল। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক। 

যদিও এই পরিচয়ে তার সঙ্গে পরিচিত নই। তার সঙ্গে প্রথম দেখা ঢাকা শিল্পকলা একাডেমির পুরাতন অডিটরিয়ামে এক আবৃত্তির অনুষ্ঠানে। তখনো আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ এতটা বিস্তার লাভ না করলেও বাংলাদেশব্যাপী তার কার্যক্রম সরব ছিল। নব্বইয়ের শুরুর দিকে আমরা বরিশাল নাটাক আবৃত্তি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র তার সদস্য। তখন থেকেই দেখেছি হাসান আরিফের সাংগঠনিক দক্ষতা, তার বিচক্ষণতা, সবার সঙ্গে সুসম্পর্কের  সেতু স্থাপন করে চলা। সেই থেকেই যথাযথ দূরত্ব বজায় রেখেই একটা অদ্ভুত সর্ম্পকের রূপ গড়ে উঠল আরিফ ভাইয়ের সঙ্গে। প্রায়শই কথা হতো নানান বিষয়ে। অকপটে যে কোন কঠিন কথা সহজ করে বলে ফেলতেন তিনি। সবশেষ বাদ যায়নি পরিমনিকে নিয়ে ঘটে যাওয়া বিষয়ের প্রতিবাদের কথাও। সহমত পোষণ করতে পারিনি। তবু সে বলেছে। ‘আজ যা দেখছি তার তো প্রতিবাদ হতে হবে। কাল যদি এ ঘটনা সত্যি অন্য কোন পথে যায়, কি আর করার। কষ্ট পাবো।’ বলেছিলাম শখ করে এই কষ্ট সবার বিরুদ্ধে যেয়ে কেন করেন? তার স্বভাব সুলভ সমস্ত শরীর মন প্রাণ উজার করা হাসিটি দিয়ে বললো ‘সমাজে কারোর না কারো দায় তো থাকতে হবে কষ্ট করবার। যারা অনবরত নন্দিত হয় তারা সেটা বুঝতে চায় না। এই যে সমাজটা তাকে সুন্দর করবে কে? আমাদের দায় আছে, আমরা যে যেখানে যে কাজ করছি সেই জাগায়। এই কাজটাকে বাঁচাতে হবে। জানি কঠিন, কিন্তু হাল ছাড়া যাবে না।’ এই কথা বলতে বলতে হঠাৎ চিৎকার করে বলে উঠলো ‘হাল ছেড়ো না বন্ধু।’

এই হাসান আরিফ কবিতার মানুষ। না তিনি কবি নন। কিছু কিছু লিখেছেন তাতে করে তাকে কবি বলা যায় কিনা আমি জানি না। তবে আরিফ ভাই নিজেকে কবি বলতে নারাজ। তিনি আবৃত্তি কিংবা বলা যায় বাচিক শিল্পী। তার ভাষায় আবৃত্তি শিল্পের মত এত সহজে কঠিন ভাবনার জগতে পরিভ্রমণ অন্য কোন শিল্প মাধ্যমে সম্ভব নয়। তিনি অপকটে বলতেন কবির আছে কবিতা, গল্পকারের আছে গল্প, ঔপন্যাসিকের আছে উপন্যাস, নাট্যকারের আছে নাটক। সঙ্গীত শিল্পীর আছে সুর ও বাণী, আবৃত্তিকারের কি আছে? তার আছে সুতিক্ষè নান্দনিক শানিত বোধ। যার দ্বারা সে সকল শিল্পের সমস্ত উপকরণকে ধারণ করে এক অসাধারণ চিত্রকল্প এঁকে দিতে পারেন অনায়াসে।

তেমনটাই দেখেছি যখন সে মঞ্চে দাঁড়িয়েছেন, উদাত্ত উচ্চারণ করেছেন ‘নদীর জলে আগুন ছিলো, আগুন ছিলো বৃষ্টিতে।’ কিংবা ‘আমি ছাপলে হবে নারে, কাগজগুলো টাকা হবে গভরমেন্টে ছাপলে।’ শুনেছি তার কন্ঠে এমন অজ¯্র উচ্চারণ ‘দুয়ারে খারাইয়া আছি, মা জননী খুলবা না দুয়ার?’ জানি মাও আপনার গত হয়েছেন প্রায় দুবছর। বলেছিলেন আমার শান্তির কিংবা আস্থার ছায়া বলতে যেটুকু সেটাও হারিয়ে গেল রে। তাই কি আপনার এই প্রস্থান? ফের মায়ের দুয়ারে দাঁড়িয়ে বলবেন ‘আইসাগেছি মা জননী, খুলবা না দুয়ার?’

মরণ ব্যাধি করোনাকে নিয়ে বড় চিন্তা ছিলো আপনার। মনে পরে, একটা লেখা পঠিয়ে বলেছিলেন ‘ শোন এটা তোর পরিচিত সব ডাক্তারদের পাঠাবি। বলবি এটা পড়তে। আমার এক ডাক্তার বন্ধু পাঠিয়েছে। আমি এই নির্দেশটা মানছি, ঔষধগুলো খাচ্ছি। তোরাও মেনে চল। আমরা সবাই মিলে ভালো থাকি। তবেই করোনা পরাজিত হবে। হলো না গো আরিফ ভাই, হলো না। 

আবৃত্তির উৎকর্ষ সাধনের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কতৃক বঙ্গবন্ধুর নামে আবৃত্তি পদক প্রদান অনুষ্ঠানের জন্য আপনি ব্যস্ত হলেন অনুষ্ঠান নির্মাণে। রেকর্ডিং স্টুডিও ধ্বনিচিত্রে প্রায় বিশজন আবৃত্তি শিল্পীর সমন্বয়ে আপনার দায়িত্বে শুরু করলেন আবৃত্তির রেকর্ডিং। সেখানেই ছোবল হানলো করোনা। সংক্রামিত হলো প্রায় আঠারো জন। সবাই সাধারণ চিকিৎসায় শরীরিক শক্তিতে সুস্থ হয়ে গেল। হাসপাতালে যেতে হলো আপনাকে। পরিবারসহ মাসুদুজ্জামানকে। মাসুদও কিছুদিন বাদে স্বপরিবারে সুস্থ হয়ে বাড়ি চলে গেল। শুধুই রয়ে গেলেন আপনি একা।
দিনের পর দিন চলে গেল। প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠানও শেষ হলো। পুনরায় সারা দেশের আবৃত্তি শিল্পীরা একত্রিত হলো জাতীয় শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে। কথা বললেন সভাপতি নূর ভাই, সম্পাদক আহাকামউল্লাহ। নানান জনকে প্রদান করা হল আবৃত্তি উৎসব স্মারক। সেই মঞ্চে উপস্থাপিত হলো আপনার সমন্বয়ে নির্মিত আবৃত্তি অনুষ্ঠান। আপনাকে হাসপাতালে রেখেই আমরা তা উপভোগ করলাম, হাততালি দিলাম, আপনার সুস্থতা কমনা করলাম।

তারপর আবার ফিরে গেলাম যে যার যায়গায়। ব্যস্ত জীবনের পথ আমাদেরকে ফের টেনে নিয়ে গেল তার আপন পথে। শুধু ফোনে খবর নিতে পেরেছি। কখনো শুনেছি ভালো, কখনো হতাশা ভরা দীর্ঘশ^াস। বিশ^াস করেছিলাম ফিরে আসবেন। হলো না। নির্ধারিত হয়ে গেলো পহেলা এপ্রিল শুক্রবার  ১টা ৫৫ মিনিটে আপনার চলে যাওয়া। থেমে গেল সেই হাসি, থেমে গেল সেই প্রশ্ন তোরা কেমন আছিস? আবার কবে কবিতা পরবো একসাথে?

না আর হবে না। যেমনটা হয়েছিল বরিশাল নাটক আবৃত্তি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের যুগপূর্তি উৎসবে। নিখিল সেনের প্রয়াণে স্মরণ সভায়। যেভাবে ভুল করে একদিন আরিফ রেহমান মনে করে আপনার ফোনে ফোন দিয়ে অকথ্য ভাষায় গালি গালাজ আর রাগারাগি করেছিলাম। আপনি কি অসাধারণভাবে আমার ভুল বুঝে কতো শান্ত ভাবে বলতে পেরেছিলেন ‘লাবু শোন, আমি বুঝতে পেরেছি তুই আরিফকে ফোন করেছিস। শোন রাগ করিস না, আরিফ তোর সঙ্গে দুষ্টমি করেছে। আমি আর আহাকাম লঞ্চে উঠেছি বরিশালে আসছি।’

যার কোমরে কোনদিন অস্ত্র ছিলো না, পকেটে ছিলো না উপচেপরা অর্থ, বোগলে যার রাখতে হয়নি কখনো রাজনীতির শক্তি। সেই অসাধাণর মানুষ হাসান আরিফ, আবৃত্তি শিল্পী হাসান আরিফ, সাংস্কৃতিক আন্দলনের পুরোধা, স্বৈরাচার বিরোধী আন্দলনের সক্রিয় সংগ্রামী, দেশপ্রেমিক, সমাজ সচেতন বাস্তববাদী মানবিক এক মানুষ হাসান আরিফ। মৃত্যুর পরেও মানবতার সেবায় চিকিৎসা বিজ্ঞানের প্রয়োজনে যিনি তার শরীরকে দান করে যেতে পেরেছেন। কবিতার স্বশব্দ উচ্চারণের নান্দনিক প্রয়োগে তুমি বেঁচে থাকবে আমাদের মাঝে। তুমি বেঁচে থাকবে হে বন্ধু আমার। তোমার মৃত্যুর আগে জানা ছিল না তোমার আর আমার বয়স এক হয়ে যাবার। ঢের বড় ছিলে তুমি গুণে, মানে, সম্মানে। জানি না বিধাতা কেন নিয়ে গেল?
আজ বেঁচে থাকলে নিশ্চয়ই জিজ্ঞেস করতাম ‘আরিফ ভাই তুমি সোহেল তাজের পদযাত্রায় যাবে?’ অবধারিত তোমার উত্তর হতো ‘আমি যবোই, কারণ আমিও চাই দশই এপ্রিল প্রথম বাংলাদেশ সরকার গঠন হওয়ার দিনটি প্রজাতন্ত্র দিবস ঘোষণা হোক। তিন নভেম্বরের জেল হত্যা দিবসকে রাষ্ট্রীয় শোক দিবসের মর্যাদা দেওয়া হোক। পাঠ্য পুস্তকে সত্য-মিথ্যা, সঠিক-বেঠিক নয়, মুক্তি যুদ্ধের ইতিহাস সন্নিবেশিত হোক।’ এই দাবিটি-ই এতদিন প্রচ্ছন্ন ছিলো বাংলাদেশে, এবার সে পথে এলো। এই পথ এবার বলবে সবাই এসেছে, তুমি আসনিকো, ডাকে মিছিল।’ 

লেখক: আজমল হোসেন লাবু, বাচিক শিল্পী, সভাপতিম-লীর সদস্য, বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ।