হিজলায় প্রাথমিকে স্কুল খোলা থেকে বন্ধ পর্যন্ত একাই সামলান শিক্ষক মনির

প্রাক-প্রাথমিক থেকে ৫ম শ্রেণি। ৬টি শ্রেণির ক্লাস হয় দুই শিফটে সকাল ৯টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত। মাঝখানে বেলা ১২টায় দুই শিফটের শিক্ষার্থীদের শরীর চর্চা (জাতীয় সঙ্গিত)। ৯টা থেকে সাড়ে ৩ টা পর্যন্ত টানা ৬টি ক্লাস নেয়া থেকে শুরু করে, স্কুল খোলা-বন্ধ, জাতীয় পতাকা টাঙানো-নামানো, টয়লেটসহ চত্ত্বর পরিস্কার রাখাসহ সব কিছুই করতে হয় একজন মাত্র সহকারী শিক্ষককে।
প্রধান শিক্ষক ও ৪ সহকারী শিক্ষকসহ মোট ৫টি পদ থাকলেও ৪টি পদ শূন্য থাকায় সহকারী শিক্ষককেই সামলাতে হয় সব। এ কারণে সকালের শিফটে ৩ শ্রেণির ৬টি এবং বিকেলের শিফটে ৩ শ্রেণির ৬টি ক্লাশ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বরিশাল জেলার হিজলা উপজেলার প্রত্যন্ত মেমানিয়া চরাঞ্চলের ৩ নম্বর ডিগ্রিচর আলাবক্স হাওলাদার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১০৩ জন কোমলমতি শিক্ষার্থী।
এতে পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়ে ঝড়ে পড়ার উপক্রম হয়েছে তাদের। প্রতিটি গ্রামে একটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে ২০১৫ সালে ৩ নম্বর ডিগ্রিচর আলাবক্স হাওলাদার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। স্থানীয় ইউপি সদস্য মনির চৌকিদার সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের কথা বিবেচনা করে বিদ্যালয়ে জমি দান করেন। এই স্কুলে দুই শিফটে প্রাক-প্রাথমিক থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত ৬টি ক্লাসে ১০৩ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। প্রাক-প্রাথমিকে ৪ জন, প্রথম শ্রেণিতে ১০ জন, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ২২ জন, তৃতীয় শ্রেণিতে ৩৩ জন, চতুর্থ শ্রেণিতে ২০ জন এবং পঞ্চম শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ১৪ জন। প্রথম শিফট সকাল ৯টা থেকে ১২টা এবং দ্বিতীয় শিফট সাড়ে ১২টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা। দুই শিফটে একেক শ্রেণিতে একটি করে টানা ৬টি ক্লাশ নেয়া, ১২টায় দুই শিফটের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে জাতীয় সঙ্গীত ও শরীর চর্চা, স্কুল খোলা-বন্ধ, জাতীয় পতাকা টাঙানো-নামানো, অফিস রুম, ৩টি ক্লাশ রুম ও চত্ত্বর পরিস্কার রাখা সহ সব কিছুই করতে হয় একমাত্র সহকারী শিক্ষক মনির হোসেনকে।
আগে এই স্কুলে ডেপুটেশনে আবুল কালাম নামে একজন সহকারী শিক্ষক থাকলেও ডেপুটেশনের সকল শিক্ষককে পূর্বের স্ব-স্ব কর্মস্থলে যোগদানের সরকারী নির্দেশ দেয়ায় তিনি গত ১৬ জানুয়ারী আলাবক্স হাওলাদার স্কুলে যোগদানের পর মনির ওই স্কুলের একমাত্র শিক্ষক। মনির হোসেন বলেন, তিনি ২০২০ সালের ৩ মার্চ যোগদানের পর থেকেই দুইজন শিক্ষক দিয়ে স্কুলটি চলছিলো। তখন সকালের শিফটে ৩ শ্রেণিতে দুটি করে ৬টি ক্লাশ এবং বিকেলের শিফটে ৩ শ্রেণিতে ২টি করে ৬টি ক্লাশ হতো। মাঝে মধ্যে এলাকার উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের দিয়ে ক্লাশ নেয়া হতো। তারা অনিয়মিত। তাদের দায়বদ্ধতা নেই। একদিন আসলে তিন দিন আসে না। দুই শিফটে একটি করে ক্লাস নেয়া যেত না। ওই শিক্ষক পূর্বের স্কুলে যোগদান করায় ১৬ জানুয়ারী থেকে সব শ্রেণিতে ৩টি করে ক্লাসের বিপরীতে ১টি করে ক্লাস নেয়া হচ্ছে। এছাড়া কি করার আছে- প্রশ্ন তার।
স্কুলের জমিদাতা ও স্থানীয় ইউপি সদস্য মনির চৌকিদার বলেন, সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের সু-শিক্ষায় শিক্ষিত করতে তিনি স্কুলে জমি দিয়েছেন। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই স্কুলটি খুড়িয়ে চলছে। আগে ৫ জন শিক্ষকের জায়গায় ২ জন দিয়ে চলতো। এখন একজন মাত্র শিক্ষককে ৬টি শ্রেণি সামলাতে হয়। একজন দপ্তরিও নেই। ক্লাশ না হওয়ায় অনেক শিক্ষার্থী স্কুলে আসে না। এতে তাদের ঝড়ে পড়ার উপক্রম হয়েছে। তিনি ওই স্কুলে শিক্ষকের শূন্য পদ পূরণ এবং একজন দপ্তরি নিয়োগের দাবি জানান।
এ বিষয়ে হিজলা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুল গাফ্ফার জানান, এই স্কুলসহ চরাঞ্চলে ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠিত সরকারী প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষক সংকট রয়েছে। শিক্ষকের শূন্য পদের তালিকা জেলা কার্যালয়ে দেয়া হয়েছে। একজন মাত্র শিক্ষক দিয়ে ৬টি শ্রেণির সব ক্লাস নেয়া সম্ভব নয় বলেও তিনি স্বীকার করেন। দপ্তরি নিয়োগ, খেলার মাঠ ও একটি ঘণ্টা দেয়ার বিষয়টি বিবেচনাধীন বলে তিনি জানান।
স্কুলটির সার্বিক চিত্র শুনে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহন লাল দাস জানান, এই সমস্যা থাকবে না। সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষকদের ২৩ জানুয়ারীর মধ্যে পদায়ন করা হবে। তখন সমস্যা কেটে যাবে। তবে সব শূন্য পদ এই মুহূর্তে পূরণ করা সম্ভব হবে না। ধাপে ধাপে শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে শূন্য পদ পূরণ করার কথা বলেন তিনি। ওই স্কুলে একটি ঘণ্টার ব্যবস্থা করে দেয়ার বিষয়টি বিচেনা করার কথা বলেন তিনি।