৮ শর্তে রাজশাহীতে সমাবেশের অনুমতি পেল বিএনপি

৩ ডিসেম্বর বিএনপিকে রাজশাহী বিভাগীয় গণসমাবেশ করার অনুমতি দিয়েছে পুলিশ। তবে, এজন্য তাদেরকে ৮টি শর্ত দেওয়া হয়েছে।
বুধবার (৩০ নভেম্বর) রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিকের পক্ষে বিশেষ পুলিশ সুপার (সিটিএসবি) মুহম্মদ আব্দুর রকিব সই করা এক চিঠিতে বিএনপিকে এই অনুমতি দেওয়া হয়।
বিএনপি নেতারা বলছেন, তারা অনুমতির চিঠি হাতে পেয়েছেন। তবে, যেসব শর্ত দেয়া হয়েছে সেগুলো মানলে তো আর সমাবেশ করা যাবে না।
এদিকে, সমাবেশের দুই দিন বাকি থাকতেই রাজশাহীতে আসতে শুরু করেছে বিএনপির নেতা কর্মীরা।
বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনুর বরাবরে চিঠি দিয়ে সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে পুলিশ। পুলিশের দেওয়া শর্তগুলো হলো: মাদ্রাসা ময়দান চত্ত্বরের মধ্যে সমাবেশের যাবতীয় কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। সমাবেশস্থলের আশপাশসহ রাস্তার কোনো অবস্থাতেই সমবেত হওয়া এবং যান ও জন চলাচলে কোনো প্রকার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না। নিরাপত্তার জন্য সমাবেশে আগতদের চেকিং এর ব্যবস্থা করতে হবে এবং নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পর্যাপ্ত সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক (দৃশ্যমান আইডি কার্ডসহ) নিয়োগ করতে হবে, দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও সামাজিক-ধর্মীয় মূল্যবোধ, রাষ্ট্রীয় ভাবমূর্তি ও জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় এমন কোনো কার্যকলাপ এবং উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান ও প্রচারপত্র বিলি করা যাবে না, সমাবেশে আসা-যাওয়ার পথে শোভাযাত্রা ও মিছিল করাসহ আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এরূপ কর্মকাণ্ড করা যাবে না। ব্যানার-ফেস্টুন-পতাকাতে কোনো লাঠি-সোঁটা ও রড ব্যবহার করা যাবে না। ব্যানার-ফেসটুন ইত্যাদির ব্যবহার সীমিত করতে হবে। আযান, নামাজ ও অন্যান্য ধর্মীয় সংবেদনশীল সময় মাইক / শব্দযন্ত্র ব্যবহার করা যাবে না। ধর্মীয় অনুভূতির ওপর আঘাত আসতে পারে এমন কোনো বিষয়ে ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন, বক্তব্য প্রদান বা প্রচার করা যাবে না। মঞ্চ তৈরির সঙ্গে যারা জড়িত (আইডি কার্ডসহ) তারা ব্যতীত অন্য কেউ আগামী ০৩/১২/২০২২ তারিখ সমাবেশ পূর্বে সমাবেশস্থলে প্রবেশ কিংবা অবস্থান করতে পারবে না। সমাবেশের যাবতীয় কার্যক্রম ওইদিন দুপুর ২টা থেকে শুরু করে বিকেল ৫টার মধ্যে শেষ করতে হবে। সমাগত নেতাকর্মীরা যাতে কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দ বা আয়োজকদের সেই দায়িত্ব নিতে হবে। নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সমাবেশস্থলের অভ্যন্তরে ও বাইরে উন্নত রেজ্যুলেশনযুক্ত সিসি ক্যামেরা স্থাপন করতে হবে। সমাবেশস্থলের বাইরে বা সড়কের পাশে প্রজেক্টর/মাইক/সাউন্ড বক্স ব্যবহার করা যাবে না। সমাবেশস্থলে ইন্টারনেট সংযোগ, ব্রডব্যান্ড সংযোগ ও রাউটার ব্যবহার করা যাবে না। যানবাহন শহরের ভেতরে প্রবেশ করানো যাবে না। রাস্তা বন্ধ করে সমাবেশের কর্মসূচি পালন থেকে বিরত থাকতে হবে। পার্কিং এর জন্য নির্ধারিত স্থানে গাড়ি পার্কিং করতে হবে। মূল সড়কে কোনো পার্কিং করা যাবে না। এই অনুমতিপত্র স্থান ব্যবহারের অনুমতি নয়। স্থান ব্যবহারের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট থেকে অনুমোদন নিতে হবে। জনস্বার্থে কর্তৃপক্ষ কোনো কারণ দর্শানো ব্যতিরেকে অনুমতি আদেশ বাতিল করার ক্ষমতা সংরক্ষণ করেন।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, আমরা এইমাত্র হাতে চিঠি পেয়েছি। তবে তারা যে শর্ত দিয়েছে সেগুলো মানলে তো আর সমাবেশ করা যাবে না। আমাদের অনেক লোকজনই বিভিন্ন জেলা থেকে আজকেই এসে যাবে।
এদিকে, বিএনপির সমাবেশস্থল রাজশাহীর মাদ্রাসা মাঠে বুধবার সকাল থেকে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। গত কয়েকদিন থেকেই এই মাঠে অল্পসংখ্যক পুলিশ অবস্থান করছিলো। বুধবার এই সংখ্যা কয়েকগুণ বাড়ানো হয়েছে। মাদ্রাসা মাঠের ভেতরে ছাড়াও প্রবেশ পথে পুলিশ অবস্থান করছে। মাঠে কাউকেই তারা প্রবেশ করতে দিচ্ছেন না।
বিএনপি নেতা কর্মীরা রাজশাহী আসতে শুরু করেছে
বিএনপি বিভাগীয় গণসমাবেশ উপলক্ষে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে আসতে শুরু করেছেন নেতাকর্মীরা। ১ ডিসেম্বর থেকে পরিবহন ধর্মঘটের ঘোষণা থাকায় তারা আগে আগেই রাজশাহীতে এসে অবস্থান নিতে চাচ্ছেন। রাজশাহীতে আসলেও এখনও কাউকে মাঠে প্রবেশ করতে দেখা যায়নি। বুধবার অনেককেই বিএনপির দলীয় কার্যালয় বা আশপাশে অবস্থান নিতে দেখা গেছে।
বুধবার সাকলে বগুড়া থেকে রাজশাহীতে এসেছেন আব্দুল গফুর। তিনি বলেন, বাস তো বন্ধ হয়ে যাবে তাই ৭ টায় গাড়িতে উঠেছিলেন। সকাল ১১ টায় রাজশাহীতে এসেছেন তিনিসহ আরও কয়েকজন।
বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলা থেকে এসেছেন সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, বিরোধী দল অবরোধ বা হরতাল দেয় শুনেছি। কিন্তু এখন তো সরকারই হরতাল দিচ্ছে। তাই আগেই চলে এসেছি।
সাইফুল বলেন, সাথে করে চিড়া মুড়ি ও গুড় নিয়ে এসেছি। এসব খেয়েই দিন রাত কাটাব।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু বলেন, রাজশাহীতে মানুষ পদ্মা নদীর স্রোতের মতই আসবে। ১৫ লাখ মানুষ এই সমাবেশে আসবেন বলে আশা প্রকাশ করেন এই বিএনপি নেতা।
মিনু বলেন, আমরা রাজশাহীর মানুষ অতিথি পরায়ন। প্রতিটি বাড়িতে বাড়িতে আমাদের নেতাকর্মীদের স্থান দেবে। নিজেরা না খেয়ে হলেও তারা তাদের খেতে দেবে।
বিএনপির সংবাদ সম্মেলন
৩ ডিসেম্বরের রাজশাহী বিভাগীয় সমাবেশকে কেন্দ্র করে গায়েবি মামলা-হামলায় ত্রাস ছড়ানো হচ্ছে। তারপরও সমাবেশ সফল হবে বলে জানিয়েছে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু। বুধবার রাজশাহী নগরীর মালোপাড়া বিএনপি অফিসে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ১ ডিসেম্বর থেকে পরিবহন ধর্মঘট। নেতাকর্মীরা এখনই রাজশাহী চলে আসছেন। তাহলে তারা কোথায় থাকবেন। মাদ্রাসা মাঠ ১ তারিখের আগে ব্যাবহার করতে দেবো না। আমরা বিভিন্ন কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া করেছিলাম। কিছু পুলিশ কর্মকর্তা তাদের গ্রেপ্তারের হুমকি দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, পুলিশ যদি সরকারি দলের দায়িত্ব পালন করে তাহলে কোথায় যাবো? গুটি কয়েক পুলিশের জন্য পুরো পুলিশের দোষ হবে।
দুলু বলেন, হুমকি দেওয়া হচ্ছে। গায়েবি মামলা দিয়ে ত্রাস সৃষ্টি করা হচ্ছে। আতংক সৃষ্টি করা হচ্ছে। সব বাধার পরেও এই সমাবেশ সফল করা হবে। আজকের মধ্যেই লাখে লাখে মানুষ আসবে। তাদের আপনারা কোথায় রাখবেন? আমরা শান্তিপূর্ণভাবেই সমাবেশ করতে চাই। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু, রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, রাজশাহী বিভাগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ শাহীন শওকত ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ।