৯ মাসে বেড়েছে ধর্ষণ, নারী ও সাংবাদিক নির্যাতন

৯ মাসে বেড়েছে ধর্ষণ, নারী ও সাংবাদিক নির্যাতন

মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) জানিয়েছে, চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে ধর্ষণ, নারী ও সাংবাদিক নির্যাতন বেড়েছে। এ সময়ে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১০৮৫ নারী। পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে একজন সাংবাদিক গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত এবং ১৫৪ সাংবাদিক বিভিন্নভাবে নির্যাতন, হামলা-মামলা ও হয়রানির শিকার হয়েছেন।

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নয় মাসে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আসকের প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে আসে। 

আসক তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করে, এ সময়ে দেশে সাংবাদিক নির্যাতন, নারী-শিশু নির্যাতন, সীমান্ত সংঘাত, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, হেফাজতে মৃত্যু, ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন অভিযোগ ও ভয়াবহতা বৃদ্ধি পেয়েছে।

তারা ১০টি জাতীয় দৈনিক ও বিভিন্ন অনলাইন পোর্টালে প্রকাশিত সংবাদ ও নিজস্ব সূত্র থেকে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদন তৈরি করেছে বলে জানায়।   

শুক্রবার গণমাধ্যমে আসক তাদের এ প্রতিবেদন পাঠায়। 

তারা জানায়, নির্যাতিত সাংবাদিকদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটজন, রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্মীদের দ্বারা ১৪ জন, স্থানীয় পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ১৩ জন, হেফাজতে ইসলামের ডাকা হরতালে ১৩ জন সাংবাদিক আহত হন। এ ছাড়া ১০৬ সাংবাদিক ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, স্থানীয় প্রভাবশালী মহল ও সন্ত্রাসীদের দ্বারা বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।

আসাক জানায়, জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর (২০২১) পর্যন্ত গত নয় মাসে প্রধান প্রধান জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে দেখা গেছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে এবং ‘ক্রসফায়ারে’ মোট ৪৮ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনীর সঙ্গে ‘ক্রসফায়ার’, ‘বন্দুকযুদ্ধ’, ‘গুলিবিনিময়’ বা ‘এনকাউন্টারে’ নিহত হয়েছেন ৩৪ জন। বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে নয়জন ও নির্যাতনে চারজন মারা গেছেন। এ ছাড়া গ্রেফতারের পর হার্ট অ্যাটাকে (পুলিশের ভাষ্যমতে) একজনের মৃত্যু হয়।

তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, এ বছরের নয় মাসে কারাগারে অসুস্থতাসহ বিভিন্ন কারণে মারা যান ৬৭ জন। এর মধ্যে কয়েদি ২৫ জন এবং হাজতি ৪২ জন। দেশের জাতীয় দৈনিকসমূহে প্রকাশিত খবরের ভিত্তিতে জানা যায়, গত নয় মাসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে অপহরণ বা গুমের শিকার হন ছয়জন। এর মধ্যে পরবর্তী সময়ে তিনজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে এবং নিখোঁজ রয়েছেন আরো ৩ জন।

নারীর প্রতি সহিংসতা বিষয়ে প্রতিবেদনে আসক জানায়, এ বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ধর্ষণ, দলবদ্ধ ধর্ষণ, যৌন হয়রানি ও সহিংসতা, ধর্ষণ ও হত্যা, পারিবারিক নির্যাতন, যৌতুকের জন্য নির্যাতন, গৃহকর্মী নির্যাতন, এসিড নিক্ষেপসহ নারী নির্যাতনের ঘটনা গত বছরের (২০২০) নয় মাসের তুলনায় বেড়েছে। এসময় ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১০৮৫ নারী, যার মধ্যে একক ধর্ষণের শিকার হন ৮৭৯ জন এবং দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন ২০৩ নারী। ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হন ৩৯ জন এবং আত্মহত্যা করেছেন ৮ নারী। এ ছাড়া ধর্ষণচেষ্টার ঘটনা ঘটেছে ২৫৬টি। গত বছরের জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নয় মাসে মোট ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন ৯৭৫ নারী। 

এ ছাড়া এতে বলা হয়, নয় মাসে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন ১০১ নারী, এর মধ্যে ১০ নারী আত্মহত্যা করেছেন এবং হত্যার শিকার হয়েছেন ৩ নারী। এ ছাড়া যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন ৭১ জন পুরুষ, যার মধ্যে ৪ জন পুরুষ খুন হয়েছেন।

আসক জানায়, শিশুর প্রতি সহিংসতা ও নির্যাতন সংক্রান্ত পরিসংখ্যানও উদ্বেগজনক। গত নয় মাসে হত্যা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে ১ হাজার ৬৩৬ শিশু। এর মধ্যে হত্যার শিকার হয় ৪৭১ জন এবং শারীরিক ও যৌন নির্যাতনসহ নানাভাবে সহিংসতার শিকার হয় ১১৬৫ শিশু। 

তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, এ সময়ের মধ্যে হিন্দু সম্প্রদায়ের ১০২টি বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। প্রতিমা, মন্দির ও পারিবারিক পূজামন্ডপে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে ৭৮টি। এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন ৭ জন। 

আসক জানায়, এই সময়কালে ভারত সীমান্তে মোট নিহত হয়েছেন ১১ জন। এর মধ্যে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ-এর গুলিতে ৯ জন, শারিরিক নির্যাতনে একজন এবং বিএসএফ এর ধাওয়া খেয়ে পানিতে ডুবে একজন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া আহত হয়েছেন ছয় জন এবং অপহরণের শিকার হয়েছেন তিন জন।

তারা জানায়, গত নয়মাসে প্রধান প্রধান জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে দেখা গেছে, রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে মোট ৩২১টি। এতে নিহত হয়েছেন ৬৪ জন এবং আহত হয়েছেন ৪ হাজার ৪০৫ জন। এর মধ্যে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে সহিংসতা ও সংঘর্ষের ১৬৭টি ঘটনায় আহত হয়েছেন ১ হাজার ৯৪২ জন এবং নিহত হন ৩০ জন।