‘পৃথিবীর ফুসফুস’ আমাজন পুড়ে ছাই হচ্ছে

ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ দাবানলে প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে জ্বলছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন আমাজন । স্থানীয় পশুপালক, কাঠুরে ও কৃষকদের দেওয়া আগুন থেকেই এ দাবানল সৃষ্টি হয়েছে বলে দাবি করেছে পরিবেশবাদী সংগঠন ও গবেষকরা। বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সিএনএনের এক প্রতিবেদনে একথা জানানো হয়েছে।
পৃথিবীর অক্সিজেনের প্রায় ২০ শতাংশ আসে এই আমাজন বন থেকে। প্রতিবছর ২০০ কোটি মেট্রিক টন কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে এই বন। যে কারণে এটাকে ‘পৃথিবীর ফুসফুস’ বলা হয়। এছাড়া পৃথিবীর বেশির ভাগ নদীর উৎস আমাজন। এখানে রয়েছে ৪৫ লাখ প্রজাতির পোকামাকড়, বাস করে তিন শতাধিক উপজাতি। অথচ ‘পৃথিবীর ফুসফুস’ খ্যাত আমাজন আজ হুমকির মুখে। প্রতিনিয়ত অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা এই বনকে পুড়িয়ে ছাই করে দিচ্ছে।
ব্রাজিলের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্পেস রিসার্স (আইএনপিই) বলছে, চলতি বছরে এখন পর্যন্ত আমাজানের ব্রাজিল অংশে ৭২ হাজার ৮৪৩টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। গত বছরের তুলনায় যা ৮০ শতাংশ বেশি এবং ২০১৩ সালের তুলনায় দ্বিগুণ।
মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসার উপগ্রহ চিত্রেও ধরা পড়েছে আমাজনের ৯ হাজার ৫০৭টি নতুন দাবানলের চিত্র। আমাজনের আগুনের ওপর নজর রাখছে নাসা। আগুনের তীব্রতার ছবিও পাঠাচ্ছে নাসার একাধিক স্যাটেলাইট। তবে আগুনের থেকেও বিজ্ঞানীদের বেশি ভাবিয়ে তুলছে আগুন থেকে উৎপন্ন ধোঁয়া।
শুক্রবার (২৩ আগস্ট) এ টুইটে ম্যাক্রোঁ বলেন, আমাদের ঘর পুড়ছে। এ গ্রহের ২০ শতাংশ অক্সিজেন উৎপাদন করা আমাজন বনে আগুন লেগেছে। এটা আন্তর্জাতিক সঙ্কট। জি-সেভেনের সদস্যরা আসুন, দু’দিনের মধ্যে এ বিষয়ে জরুরি ভিত্তিতে প্রথমে আলোচনা করি।
তার এ মন্তব্যের কড়া প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জাইর বোলসোনেরো। ম্যাক্রো ‘রাজনৈতিক সুবিধা লাভের’ জন্য আমাজনের অগ্নিকাণ্ডকে ব্যবহার করছেন বলেও তিনি অভিযোগ করেছেন, জানিয়েছে বিবিসি।
আমাজনের আগুন নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসও। বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) এক টুইটে তিনি বলেন, আমাজন বনের অগ্নিকাণ্ডে আমি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। জলবায়ু সঙ্কটের মধ্যেই অন্যতম প্রধান অক্সিজেনের উৎস ও জীববৈচিত্র্যের আরও ক্ষতি আমরা পোষাতে পারবো না। আমাজনকে অবশ্যই রক্ষা করতে হবে।
অন্যদিকে আমাজনে এই পরিস্থিতির জন্য ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জাইর বোলসোনারোর নীতিকে কাঠগড়ায় তুলেছেন পরিবেশবিদরা। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ক্ষমতায় আসার আগে আন্তর্জাতিক হুঁশিয়ারির তোয়াক্কা না করেই আমাজন অঞ্চলকে চাষ ও খনিজ উত্তোলনের কাজে ব্যবহারের কথা বলেছিলেন তিনি। তার এ উদ্যোগের ফলে বন উজাড় হয়ে যেতে পারে, আন্তর্জাতিক মহলের এমন উদ্বেগ দিনের পর দিন উপেক্ষা করে গেছেন বোলসোনারো। ফলস্বরূপ আমাজনে অন্তত ৭২ হাজার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। প্রাণ হারিয়েছে অসংখ্য পশুপাখি।
বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট বলেন, আমাজন ইউরোপের চেয়েও বড়। এত বড় এলাকায় আগুনের সঙ্গে কীভাবে লড়বেন? এর জন্য আমাদের পর্যাপ্ত উপকরণ নেই।
বিশ্বের প্রায় ২০ শতাংশ অক্সিজেন তৈরি করে আমাজন। এ কারণে, এটিকে ‘পৃথিবীর ফুসফুস’ বলা হয়। ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ড লাইফ ফান্ড জানিয়েছে, আমাজন যদি এভাবে জ্বলতেই থাকে, তাহলে একসময় সেটি উল্টো কার্বন নিঃসরণ শুরু করতে পারে।
শুধু কার্বন গ্রহণই নয়, প্রায় ৩০ লাখ উদ্ভিদ ও প্রাণী, ১০ লাখ আদিবাসীর আবাস এ বনাঞ্চলে। দ্রুত এ আগুন নেভানো না গেলে গোটা বিশ্বের পরিবেশেই এর মারাত্মক প্রভাব পড়বে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা।
শুষ্ক আবহাওয়া, প্রবল বাতাস ও গরমের কারণে আমাজনে আগুন লেগেছে বলে দাবি করেছেন ব্রাজিলের পরিবেশমন্ত্রী রিকার্ডো সালেস। কিন্তু, সিএনএনের আবহাওয়াবিদ হেইলি ব্রিঙ্ক বলেন, এটি অবশ্যই মনুষ্য-সৃষ্ট। একে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বলার সুযোগ নেই। এবারের আগুনের ঘটনাও প্রচলিত কৃষিভিত্তিক কারণের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে।