নতুন বছরের আহ্বান, শান্তি চাই

নতুন বছরের আহ্বান, শান্তি চাই

 

‘ডাকছে নতুন শতক, চল উজানে দেই পাড়ি, থাক পরে পিছুটান, তোর থাক পরে...’ একুশ শতক শুরু হয়েছে আরও কিছু দিন আগে। তারপরও নতুন শতাব্দির ঘ্রাণ এখনো ফিকে হতে শুরু করেনি। এই নতুন শতক আমাদের অনেক সম্ভাবনার দিকে নিয়ে যাবে এটা আমরা বিশ^াস করতে চাই। কিন্তু এই শতাব্দি যেভাবে বারুদের গন্ধ বাতাসকে বিষাক্ত করতে শুরু করেছে তাতে সম্ভাবনার পথে নতুন অন্তরায় হয়ে দেখো দিচ্ছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল। শিশু ও নারীরা অসহায় হয়ে পড়েছে। এর ফলে যে কেবল ওই দুই দেশ ক্ষতির মুখে পড়ছে তা কিন্তু নয়। যুদ্ধের প্রভাব ছড়িয়ে পড়ছে গোটা দুনিয়ায়। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে স্বল্পোন্নত দেশগুলো। বাংলাদেশও জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়িয়ে দিচ্ছে। মানব সভ্যতা ঝুঁকির মধ্যে পরছে। এমন বাস্তবতায় বারুদের গন্ধ থামানো অতি আবশ্যক। তাই এবারের নতুন বছরের আহ্বান, বারুদের গন্ধ নয়, শান্তি চাই।

২০২০ সালে করোনা নামের এক ক্ষুদ্র ভাইরাস গোটা বিশ^কে নাড়িয়ে দিয়েছিলো। তার প্রভাব কমলেও এখনও নিশে^স হয়নি। করোনার ছোবলে ৬৫ লাখের বেশি মানুষকে প্রাণ দিতে হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছে ৬১ কোটির বেশি মানুষ। করানার ভয়বহতা এমনই তীব্র ছিল স্বজনের লাশ ফেলে পালিয়েছে অনেকে। একটু বিশুদ্ধ অক্সিজেনের জন্য বিত্তবানদের হাহাকার করতে দেখা গেছে। বেঁচে থাকার শেষ আশ্রয় খুঁজতে ব্যাকুল ছিল বিশ^মানবতা। মৃত্যুহীন শান্তির বিশ^ গড়ে তুলতে নানা ধরেণের পদক্ষেপ নিতে হয়েছে উন্নত কিংবা অনুন্নত সব দেশকে। একবারের জন্যও কেউ পারমানবিক অস্ত্রো ব্যবহারের কথা চিন্তাও করেনি। এর মধ্য দিয়ে শান্তির পথে হাঁটতে শুরু করে বিশ^। মনে হয়েছিল যত অশুভ শক্তির বিনাশ হয়েছে। হিংসা, বিদ্বেষ, হানহানি, অহংকার, ক্ষমতা আর লোভ ভুলে মানুষ সত্যিকার মানুষ হয়ে উঠেছে। মানুষের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ প্রেথিত হয়েছে। শান্তির শোপান রচনা করেতে সহযোগী হয়েছে করেনা।
করোনার ছোবল যে শিক্ষা দিয়েছে, তাতে মনে হয়েছে পৃথিবীতে আর কোন অস্ত্রো ও যুদ্ধের দামামা দেখতে হবে না। কমে আসবে কার্বনডাই অক্সাইডের ব্যবহার। কমে আসবে বিশে^র উষ্ণতা। জলবায়ু প্রভাব থেকে মুক্ত হবে বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশ। কিন্তু না। তেমনটি ঘটেনি। ঘটেছে উল্টো। করোনার প্রভাব কমতে শুরু করলে মানুষের রিপুর তাড়ণা উর্ধ্বমূখী হতে শুরু করে। আবারো লোভ, শক্তি ও অহংকারের পুরানো পথে মানুষ যাত্রা করে। শান্তির পরিবর্তে অশান্তির পথের সন্ধান করতে শুরু হয়ে যায়। অবশ্য এই অশান্তি সৃষ্টিকারীরা সবাই মুখে শান্তির বিশ^ গড়ে তোলার কথাই বলেন। মূলত ক্ষমতা এবং লোভ আমাদের সংকটের মধ্যে ফেলে দেয় এবং দিয়েছে। সেই সংকট যেমন বিশে^র দেশে দেশে আছে, তেমনি আমাদের দেশেও আছে। ক্ষমতা, লোভ আর হিংসা ত্যাগ করা যাবে না। এটা যেন আমাদের রক্তে-মাংসে মিশে গেছে। 

প্রবাদ আছে, ‘বাঘে-মষে লড়াই করে আর নলখাগড়ার প্রাণ যায়’। শাক্তিতে শক্তিতে টানাটানি, হানাহানি ও মারামারির কুফল ভোগ করতে হয় অতি সাধারণদের। সেই ধারার অবসান হওয়া অত্যন্ত জরুরী। মজার ব্যাপার হলো, যারা এই শক্তি প্রয়োগ করেন তারা এর পরিণতি জেনেও কেবল মোড়লত্ব বজায় রাখতেই লড়াই লড়াই খেলায় মাতেন। অবশ্য এরাই বলবেন শান্তি চাই। এই মুহূর্তে যদি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের কাছে জানতে চাওয়া হয় জিজ্ঞেস করা হয়, আপনি কি চান, তিনি অবশ্যই বলবেন শান্তি চাই। আবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির জেলনস্কির কাছে বিনয়ের সঙ্গে জানতে চান, তিনিও বলবেন শান্তির কথা। এখন প্রশ্ন হচ্ছে তাহলে যুদ্ধ কেন? ওই যে, কথায় আছে না, ‘শালিস মানি, তাল গাছ আমার’। শক্তি এবং পরাশক্তি এই শব্দ দুটি বিশে^ ব্যাপকভাবে আলোচিত ও সমালোচিত। তারপরও চলে এই শক্তির খেলা। কে কার চেয়ে বড়। যুদ্ধ ষড়ঞ্জাম কার বেশি, কার কত বেশি পারমানবিক অস্ত্রো আছে, আছে যুদ্ধ জাহাজ। সেই সঙ্গে পেশি শক্তিতে কে আগানো এমনসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে চলছে মাতুব্বরী। এই মাতুব্বরীতে নিষ্পেষিত মানুষ ও বিশ^মানবতা। এর মধ্যেই নতুন বছর আসে। জাগায় নতুন নতুন আশা। নতুন আশায় বুক বেঁধে মানুষ অবিরাম সামনে যেতে চায়। সেই সামনের পথ সুগম হবে এমন প্রত্যাশাও তাদের।

আজ নতুন একটি বছর শুরু হবে। সারা বিশে^র সঙ্গে একযোগে আমরা নতুন বছরকে আহ্বান জানাবো। ২০২২ সালে রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক নানা অশান্তির মধ্যেও বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি অর্জনে আমরা আশান্বিত হয়েছি। এই ছন্দ ২০২৩ সালকে আরও উজ্জ্বল করবে বলে আমরা বিশ^াস করি। শিক্ষা, সংস্কৃতি ও অর্থনীতির চাকা সচল থাকবে এমনটাই প্রত্যাশা সবার।

আজ ২০২৩ সালে নতুন যে সূর্য উঠবে, সেই সূর্য আমাদের সকল দু:খ-কষ্টকে মুছে দিয়ে সুন্দর পৃথিবীর দিকে নিয়ে যাবে। তাই ব্যাথা, কষ্ট, বাধাকে পেছনে ফেলে ২০২৩ সালকে স্বাগত জানাতেই হয়। নতুন বছরে বাংলাদেশসহ গোটা পৃথিবীর মানুষের জন্য আমাদের শুভকামনা। বাংলাদেশ সত্যিকার সোনার বাংলা হয়ে উঠতে আরো একধাপ এগিয়ে যাবে ২০২৩ সালে।

নির্মল এবং সুন্দর পৃথিবী গড়ে তুলতে আমাদের অনুপ্রেরণা দেবে ২০২৩ সাল। ধর্মান্ধতাকে দূরে ঠেলে দিয়ে বাস্তবতার বিচারে নিজে এবং দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবো। নতুন বছরে আমরা সকল অমঙ্গলকে দূরে রেখে মঙ্গল ও কল্যাণের পথে হাঁটবো। একটি সুন্দর বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সবাই একযোগো কাজ করবো। সৃজনশীল কাজের সঙ্গে যুক্ত হবার চেষ্টা করবো। আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতিকে রক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা রাখবো। ইভটিজিং, মাদক, বাল্য বিবাহ, হত্যা, ধর্ষণ ও দুর্নীতি মুক্ত সোনার বাংলাদেশ গড়তে আত্মপ্রত্যয়ী হবো।

আমরা বলতে চাই, নতুন বছর হয়ে উঠুক সাধারণ মানুষের জীবন ও জীবিকার উপযোগী শান্তির শোপান। দেশ-কাল-পাত্র ভেদে বিশে^ শান্তি ফিরে আসুক। যুদ্ধের নামে মৃত্যুর মিছিল বন্ধ হোক। বাংলাদেশ ও বিশ^ হয়ে উঠুক হাসি-গানে মুখরিত শান্তির ঠিকানা। তবে সেটা অবশ্যই মোড়লরা যে অশান্তির শান্তি চায়, সেই চান্তি আমাদের কাম্য নয়।