বরিশালে উচ্চতা নিয়ে জটিলতায় সেতুর নির্মাণ কাজ বন্ধ

বরিশালে উচ্চতা নিয়ে জটিলতায় সেতুর নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে দীর্ঘদিন। বিআইডব্লিউটিএ এবং সড়ক ও সেতু বিভাগের সমন্বয়হীনতার কারণে নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকা সেতু পরিদর্শন করেছেন বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান। এসময় সেতু বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী মো. মহিদুল ইসলামসহ বিশেষজ্ঞ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এ বিষয়ে ঢাকায় ফিরে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা জানিয়েছেন তারা।
গত বৃহষ্পতিবার বিকেলে বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার রাঙ্গামাটি নদীর ওপর সড়ক যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রণালয়ের নির্মাণাধীন গোমা সেতু পরিদর্শন করেছেন বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক।
পরিদর্শন শেষে বিআইডব্লিউটিএ কর্মকর্তারা জানান, নৌ-চলাচল স্বাভাবিক রাখতে নির্মানাধীন সেতুটি পরিদর্শন করেছেন সংস্থার চেয়ারম্যান। পরিদর্শনকালে সওজ বরিশাল জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সুশীল কুমার সাহা, নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাসুদ খান, সংশ্লিষ্ট সেতু নির্মাণের ঠিকাদার মাহফুজ খানসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
সড়ক ও জনপথ বরিশাল জোনের কর্মকর্তারা জানান, সেতুর উচ্চতা প্রশ্নে গত বছরের ২২ ডিসেম্বর আন্তঃমন্ত্রণালয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে যেসব সেতুর নেভিগেশন ক্লিয়ারেন্স নতুন সংশোধনীর পূর্বে নেওয়া হয়েছিলো এবং অধিকাংশ কাজ সমাপ্ত হয়ে গেছে তার ভার্টিক্যাল ক্লিয়ারেন্স বিআইডব্লিউটিএর সঙ্গে যতটুকু সম্ভব সংশোধন আনায়নপূর্বক সেতুর কাজ অবিলম্বে শুরু করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
সওজ বরিশালের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাসুদ খান জানান, চলতি বছরের জুলাই মাসের শেষের দিকে বিষয়টি সম্পর্কে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সকল তথ্যাদিসহ অবহিত করা হয়। নির্মাণাধীন গোমা সেতুর ভিত্তিসহ পিলার ও এবাটমেন্টের নির্মাণ কাজ ইতোমধ্যে বিয়ারিং সীট লেভের পর্যন্ত সম্পন্ন হয়েছে। এ কারণে সেতুর ভার্টিক্যাল ক্লিয়ারেন্স বৃদ্ধি করতে হলে সেতুটির পিলারসমূহ ও এবাটমেন্ট উভয় ভেঙে পুনঃনির্মাণ করতে হবে। যা স্ট্র্যাকচারের জন্য ক্ষতিকর। তাছাড়া ভার্টিক্যাল ক্লিয়ারেন্স বৃদ্ধি করলে সেতুর লোড বৃদ্ধি পাবে। যা সেতুর ইতিমধ্যে সম্পন্ন হওয়া ভিত্তির জন্য অতিরিক্ত লোড হবে, যা ডিজাইন প্রনয়ণে বিবেচনা করা হয়নি।
বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তারা জানান, গত বছর মে মাসে সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) মো. আশরাফুর রহমান সড়ক ও জনপথ অধিধপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী বরাবর গোমা সেতুর নৌ-পথ ২য় শ্রেণিতে উন্নীত হওয়ার বিষয়টি জানিয়ে সেতুটির ভার্টিক্যাল ক্লিয়ারেন্স ১২ দশমিক ২০ মিটার এবং হরাইজেন্টাল ক্লিয়ারেন্স ৪০ মিটার রেখে ব্রীজটি নির্মাণের বিষয়টি অবহিত করেছেন।
তবে সওজ’র একাধিক কর্মকর্তা জানান, পাশর্^বতী পেয়ারপুর সেতুটির চেয়ে ৩ মিটার উচ্চতা বেশি রয়েছে। তারপরও গোমা সেতুর অনুমোদন পরবর্তীতে ৬৫ ভাগ কাজ শেষে এখন বিআইডব্লিটিএর আপত্তি গ্রহণযোগ্য নয়।বিভাগীয় শহর বরিশাল থেকে বাকেরগঞ্জ হয়ে পটুয়াখালী দুমকি পর্যন্ত সহজ যাতায়াতের লক্ষ্যে বরিশাল-দিনারেরপুল-লক্ষ্মীপাশা-দুমকি জেলা মহাসড়কের ১৪তম কিলোমিটারে বাকেরগঞ্জের রাঙ্গামাটি নদীতে ২০১৪ সালে সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা করে সড়ক ও জনপথ (সওজ)। ২০১৫ সালে সম্ভাব্যতা যাচাই শেষে প্রকল্প প্রনয়ন ও অনুমোদন, বাজেট বরাদ্দ এবং টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্নের পর ২০১৮ সালের মে মাসে শুরু হয় সেতুর নির্মাণ কাজ।
২০১৫ সালে গোমা সেতুর উচ্চতার বিষয়ে ‘ভার্টিক্যাল ক্লিয়ারেন্স ষ্ট্যান্ডার্ড হাই-ওয়াটার লেভেল হতে কমপক্ষে ৭ দশমিক ৬২ মিটার এবং হরাইজেন্টাল ক্লিয়ারেন্স ৩০ দশমিক ৪৮ মিটার রেখে নির্মাণে আপত্তি নেই জানালেও ২০১৯ সালে আপত্তি তোলে বিআইডব্লিউটিএ। বিআইডব্লিউটিএর ওই চিঠি পাওয়াপর পর বন্ধ হয়ে যায় সেতুর নির্মাণ কাজ। গত বছরের ডিসেম্বরে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকে সেতুর কাজ শুরু করতে বলা হলেও কয়েক দিন কাজ চলার পর বিআইডব্লিউটিএ’র হস্তক্ষেপে তা পুনরায় বন্ধ হয়ে যায়। এরমধ্যে সেতুর ৬৫ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়। ২০২১ সালের মধ্যে সেতুর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে।
এদিকে রাঙ্গামাটি নদীর উপর নির্মাণাধীন বহুলপ্রতীক্ষিত গোমা সেতুর নির্মাণকাজ বন্ধ থাকায় এই রুটে যাতায়াতকারীদের মাঝে সংশয় দেখা দিয়েছে।