বরিশালে পরীক্ষামূলক ড্রাগন চাষে সাফল্য পেয়েছে কৃষি গবেষণা কেন্দ্র

বরিশালে পরীক্ষামূলক ড্রাগন চাষে সাফল্য পেয়েছে কৃষি গবেষণা কেন্দ্র


বরিশালে পরীক্ষামূলকভাবে বারি-১ জাতের ড্রাগন চাষ করে সাফল্য পেয়েছে আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্র। ড্রাগন ফলের বাজার মূল্য ভালো থাকায় কৃষক লাভবান হবে আশা বিজ্ঞানীদের। বরিশাল অঞ্চলে ড্রাগন চাষে উদ্বুদ্ধ করতে কৃষক পর্যায়ে ছড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে কৃষি গবেষণা কেন্দ্র।

বরিশাল আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, দক্ষিণাঞ্চলের আবহাওয়া ও মাটিতে এই ড্রাগন চাষ উপযোগী করতে দির্ঘদিন ধরে গবেষণা করেছেন কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা। জেলার রহমতপুর আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে পরীক্ষামূলকভাবে বারি-১ জাতের ড্রাগন চাষ করে সাফল্য পেয়েছেন তারা। পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এই ফলের বাজার মূল্যও অনেক। তাই এই ফলের চাষ করলে কৃষক লাভবান হবে। তা ছাড়া একবার চারা রোপন করলে টানা ২০ থেকে ৩০ বছর ফলন পাওয়া যাবে বারি-১ জাতের ড্রাগন ফলের।

বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ড্রাগন দ্রুত বর্ধনশীল ক্যাকটাস প্রজাতির বহুবর্ষী একটি উদ্ভিদ। ফল উৎপাদন ছাড়াও অনেক দেশে শোভা বর্ধনকারী উদ্ভিদ হিসেবে এর চাষ হয়। ড্রাগনের অনিন্দ সুন্দর ফুলকে ‘সম্ভ্রান্ত নারী’ আবার ‘রাতের নারী’ নামেও অভিহিত করা হয়। ড্রাগনের উৎপত্তি মেক্সিকো এবং দক্ষিণ ও মধ্য আমেরিকা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, তাইওয়ান, শ্রীলঙ্কা এবং অস্ট্রেলিয়া-আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাণিজ্যিকভাবে ড্রাগন চাষ হয়। ২০১৪ সালে থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও মালয়েশিয়া থেকে ড্রাগনের চারা সংগ্রহ করে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এর চাষাবাদের উপযোগীতা পরীক্ষা করা হয়। যে জাতটি বাংলাদেশে সব চেয়ে কার্যকর হয়েছে সেটি হচ্ছে বারি-১। এই বারি-১ জাতীয় বীজ বোর্ড বাংলাদেশে মুক্তায়িত করে। বর্তমানে ঢাকা, সাভার, উত্তরাঞ্চল, চট্টগ্রাম এবং পাহাড়ি অঞ্চলে ড্রাগনের চাষ হচ্ছে।
বরিশাল আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা রাশেদুল ইসলাম জানান, বারি-১ জাতের ড্রাগন বরিশালের মাটিতে চাষের উপযোগী। আবহাওয়াও অনুকূলে। আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে পরীক্ষামূলক চাষ করে সফল হয়েছে। এখন কৃষক পর্যায়ে ড্রাগন চাষ ছড়িয়ে দেওয়ার কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। 

ড্রাগন চাষ পদ্ধতির কথা জানাতে গিয়ে গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক সহকারী তপন কুমার দাস জানান, বারি-১ ড্রাগন চাষের শুরুতে প্রথমে গর্ত তৈরি করে ১৫ থেকে ২০ কেজি শুকনো গোবর সার, ৩০০ গ্রাম টিএসপি ও দেড়শ গ্রাম এমপি সার দিয়ে ১০ থেকে ১৫ দিন রেখে দিতে হবে। এরপর প্রতিটি বেডে একটি আরসিসি পিলার স্থাপন করে চারপাশে ৪টি চারা রোপন করতে হবে। চারা রোপনের দেড় থেকে দুই বছরের মধ্যে ড্রাগন ফল ধরবে। ফলন ধরার এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে ফল সংগ্রহ করা সম্ভব। পাকলে ড্রাগন লাল রং ধারণ করে।

আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের আরেক বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা সুরমা দাস সেতু বলেন, একবার ড্রাগনের চারা রোপন করলে টানা ২০ থেকে ৩০ বছর ফলন পাওয়া যাবে। মে থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতি বছর ফলন হয়। প্রতিটি গাছে ২০ থেকে ৩০টি ফল হয়। প্রতিটি ফলের গড় ওজন ৩৫০ গ্রাম থেকে ৪০০ গ্রাম। এই ফলের পুষ্টিগুণ অনেক বেশি। ক্যান্সার প্রতিরোধেও ড্রাগন বেশ কার্যকরী। ডায়াবেটিস রোগীরাও অনায়াসে এই ফল খেতে পারবেন।

আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মুহাম্মদ সামসুল আলম বলেন, ফসলী জমি ছাড়াও বসত বাড়ির আঙিনা এবং আশপাশের পতিত জমিতে ড্রাগন চাষ করা সম্ভব। এই ফলের বাজার মূল্যও অনেক বেশি। বারি-১ জাতের ড্রাগন চাষ করলে কৃষক অধিক লাভবান হবে। তাই ড্রাগন চাষ করার জন্য কৃষকদের প্রতি আহ্বান জানান এই কৃষি বিজ্ঞানী।