শিশু ও নারী বান্ধব বাজেট প্রণয়নে শিখন কর্মশালা

বাংলাদেশের ৭৫ ভাগ হচ্ছে নারী ও শিশু। আগামীর নেতৃত্ব দেবে আজকের শিশুরা। এই বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে উন্নয়নের মূল ধারায় রাখতে হবে। তাই তাদের স্বাস্থ্য ও শিক্ষা সুরক্ষার দিকটি সবার আগে বিবেচনায় নিতে হবে। সেই জন্য স্থানীয় সরকারের প্রথম স্তর ইউনিয়ন পরিষদের বাজটে শিশু এবং নারী স্বাস্থ্য বিশেষ করে প্রজনন স্বাস্থ্য সেবার জন্য পৃথক বরাদ্দ থাকতে হবে। বাংলাদেশে পরষ্পর শিখন কর্মসূচি অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে যাচ্ছে।
ঢাকায় অনুষ্ঠিত জাতীয় স্থানীয় সরকার ইন্সটিটিউট কর্তৃক আয়োজিত থিমেটিক কর্মশালায় এসব কথা বলেন স্থানীয় সরকার বিভাগের দায়িত্বশীল ব্যক্তি এবং বিশিষ্ট নাগরিকরা।
গত বুধবার ৭ সেপ্টেম্বর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলের পদ্মা সম্মেলন কক্ষে ওই কর্মশালার আয়োজন করে জাতীয় স্থানীয় সরকার ইন্সটিটিউট।
কর্মশালার শুরুতে পরষ্পর শিখন কর্মসূচির ওপর গুরুত্ব দিয়ে ভালো উদাহরণ হিসেবে সুন্দর চর্চার ওপর দুটি পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনা করা হয়। সান্তনু লাহিড়ির সঞ্চালনায় এই উপস্থাপনায় উঠে আসে ইউনিয়ন পরিষদ সহ স্থানীয় সরকারের পারষ্পরিক শিখন কার্যক্রমের ইতিবাচক বিভিন্ন দিক। তবে এসব উদাহরণ কেবল প্রকল্প এলাকার বাইরেও ছড়িয়ে দেওয়ার ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়। যা আগামীতে শিশু ও নারীবান্ধব বাজেট প্রণয়নে সারা দেশে নতুন ধারা সৃষ্টি করতে পারবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
কর্মশালায় স্থানীয় সরকার ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সচিব মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, শিশুরা সমাজ বদলে দিতে পারে। তাই আমদের আত্মবিশ^সী শিশু গড়ে তুলতে কাজ করতে হবে। দেশে নারী ও শিশু মোট জনসংখ্যার ৭৫ ভাগ। তাই সবার আগে তাদের কথা আমাদের শুনতে হবে। আমি আগেও দেখেছি, এখনও দেখিছি। মাঠ পর্যায়ে অনেক ভালো কাজ হয়। এই কাজগলোকে সমন্বয় করতে হবে। প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হবে। বড় কিছু করতে হলে বড় আকাঙ্খাই করতে হবে। আমি মনে করি উত্তম বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হলে কেবল প্রকল্প এলাকা নয় সারা দেশে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।
সংসদ সদস্য অ্যারোমা দত্ত বলেন, পারষ্পরিক শিখন একটি উন্নত টুলস। নারীর ক্ষমতায়ন এবং শিশুবান্ধব বাজেট প্রণয়নে জাতীয় পর্যায়ে এই প্রকল্প নিয়ে এসেছে। স্থানীয় সরকারের প্রথম ধাপ ইউনিয়ন পরিষদের বাজেট দিয়ে এম্বুলেন্স, রাস্তা, আসবাবপত্র সহা নানা উপকরণ কেনা সম্ভব এটা ভাবনার বাইরে ছিল। এটা একটা যুগান্তকারী ও অনন্য দৃষ্টান্ত। আমাদের দেশে শিশু ও নারীবান্ধব বাজেট খুবই প্রয়োজন। নারী এবং শিশুদের মূল ধারায় আনতে দেশের সব ইউপিতি এই বাজেট বরাদ্দ এবং ইতিবাচক উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। সেজন্য জাতীয় পর্যায়ে নীতিমালা ও তার বাস্তবায়ন করতে হবে।
যুগ্ম সচিব ইসরাত হোসেন খান বলেন, পরিবার পরিকল্পনা হলো একটা দর্শন। যেসব ইউনিয়ন পরিষদের পরিবার পরিকল্পনা খাতে বাজেট বরাদ্দ দিয়ে উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন, তাদের এসব উদ্যোগ প্রশংসীয়। যে কোন ভালো জিনিষ সারা দেশে ছড়িয়ে দিলে মানুষ উপকৃত হবে।
কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সচিব মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী, সম্মানিত অতিথি ছিলেন, সংসদ সদস্য আরমা দত্ত, বিশেষ অতিথি ছিলেন, জাতীয় স্থাানীয় সরকার ইন্সটিটিউট এর যুগ্ম সচিব ইসরাত হোসেন খান। সভাপতিত্ব করেন জাতীয় স্থানীয় সরকার ইন্সটিটিউটের মহাপরিচালক সালেহ মোহাম্মদ মোজাফফর।
মেরি স্টোপস বাংলাদেশ ও সুশীলন কর্তৃক বাস্তবায়িত প্রকল্পের আওতায় নন্দিত শিখন কার্যক্রম ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগে নারী বান্ধব বাজেট বরাদ্দ জাতীয় পর্যায়ে বেস্ট শিখন হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।
পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনায় সান্তনু লাহিড়ি বলেন, আমরা দেখি, পলিসি সাধারণত উপর থেকে নীচের দিকে যায়। কখনো নীচ থেকে উপরে আসে না। যদি নীচ থেকে পর্যায়ক্রমে উপরে এসে পলসি নির্ধারণ করা যায় তাহলে সেটা হবে পরষ্পর শিখন কর্সসূচির অনন্য দৃষ্টান্ত।
খুলনা বিভাগের সাতক্ষিরা, বাগের হাট, বরিশাল বিভাগের পিরোজপুর, বরিশাল জেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের নারীবান্ধব বাজেট বরাদ্দ নিয়ে কথা বলেন স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক, পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপ-পরিচালক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, উপকারভোগী, নারী ও শিশুরা।
পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ বরিশালের উপ-পরিচালক মো. মিজানুর রহমান বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের বাজেট দিয়ে পরিবার পরিকল্পনা খাতকে শক্তিশালী করতে সুশীলন কাজ করেছে। যার মাধ্যমে একটা আমূল পরিবর্তন এসেছে। এই উদ্যোগ সারা দেশে ছড়িয়ে দিলে নারীর প্রজন স্বাস্থ্য সেবার মান আরও বৃদ্ধি পাবে।
বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান তার বাজেট থেকে পরিবারপরিকল্পনা খাতে বরাদ্দ দিচ্ছে। তারা নারী ও শিশু বান্ধব বাজেট করছে যা অনন্য উদাহরণ। সাতক্ষিরা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাতেমাতুজ জোহরা বলেন, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে এই উদ্যোগ অব্যাহত থাকা দরকার। একই জেলার তালা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা প্রশান্ত কুমার বিশ^াস ইউনিয়ন পরিষদের এই চর্চা সারা দেশে ছড়িয়ে দেয়ার উদ্যোগ নেওয়া এখন সময়ের দাবি। সেজন্য কেন্দ্রীয়ভাবে একটি নির্দেশনা এবং তা বস্তবায়নে কাজ করতে হবে।
অর্জনের কথা বলতে গিয়ে বাগেরহাটের উপজেলা নারী ভাইস চেয়ারম্যান রিজিয়া পারভীন বলেন, আমাদের উদ্যোগের ফলে ৩২৩ ইউনিয়নে ১৬ কোটি ৪৪ লাখ ১৪ হাজার ২২৭ টাকা পরিবার পরিকল্পনা খাতে বরাদ্দ দিয়েছে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারমম্যানরা। বাগেরহাট জেলার চিতলবারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিউটি আক্তার বলেন, আমি আমার ইউনিয়নের বোজেট থেকে পরিবার পরিকল্পনা খাতে বরাদ্দ দিয়ে একটি অ্যাম্বুলেন্স কিনে দিয়েছি। ওই এম্বুলেন্স গর্ভবতী মা এবং নারী স্বাস্থ্য সেবায় ভূমিকা রাখছে। এছাড়া একই বাজেট দিয়ে তিনটি বালিকা বিদ্যালয়ে স্যানিটারী প্যাডসহ অন্যান্য উপকারণ কিনে দিয়েছি। একই উদাহরণের কথা জানালেন, ইউপি চেয়ারম্যান শেখ আক্তারুজ্জামান বাচ্চু।
কর্মশালায় জাতীয় স্থানীয় সরকার ইন্সটিটিউট কর্তৃক শিশু বান্ধব বাজেট এবং বেসরকারি সংস্থা মেরি স্টোপস-সুশীলনের নন্দিত কার্যক্রম নারী বান্ধব বাজেট (পরিবার পরিকল্পনা এবং প্রজনন স্বাস্থ্য) কার্যক্রমটি বেস্ট কার্যক্রম হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে এবং পলিসি পরিবর্তনে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার খুব দ্রত বাংলাদেশের সকল ইউনিয়ন পরিষদ যাতে প্রজনন স্বাস্থ্য এবং পরিবার পরিকল্পনা বাজেট বরাদ্দ করেন সেই লক্ষ্যে নির্দেশনা জারি করবেন বলে জানানো হয় কর্মশালায়।