সারাদেশে ৩২ হাজারের বেশি মণ্ডপে দুর্গাপূজা

করোনাভাইরাস মহামারীর দুই বছর পরে এবার দুর্গাপূজা উৎসবের রঙে ফিরছে। সারাদেশে ৩২ হাজার ১১৮টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ।
শনিবার সকালে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির মিলনায়তনে এবারের দুর্গোৎসব নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন হিন্দু ধর্মীয় নেতারা।
গত বছরের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এবার নিরাপত্তা নিশ্চিতে সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন পরিষদের নেতারা।
বাঙালি হিন্দুদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজার ঘণ্টা বাজবে ২৫ সেপ্টেম্বর মহালয়ার মধ্য দিয়ে। ১ অক্টোবর শুরু হবে মূল পূজা যা ৫ অক্টোবর প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে।
মতবিনিময় সভায় পরিষদের সভাপতি জে এল ভৌমিক বলেন, গত বছরের ঘটনার প্রেক্ষাপটে এবছর সরকার চাচ্ছে, কোনো অবস্থাতেই যেন কোনো অঘটন না ঘটে। আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা গত বছরের তুলনায় এ বছর অনেক বেশি সক্রিয়। আমরা মনে করি, আমাদের ৩২ হাজার ১৬৮টি মন্দিরের সুরক্ষা দেয়া খুব কঠিন। তাই আমরা এবছর প্রত্যেক মন্দিরে স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করছি, যারা রাতেও পাহারা দেবে।
জে এল ভৌমিক বলেন, আমরা সম্পূর্ণভাবে নিরাপদ, একথা বলা যাবে না। ঘটনা ঘটতে পারে, তবে আমরা এবার খুব সচেতন। সর্বোচ্চ সিসিটিভির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। গ্রামে বিভিন্ন বার্তা পৌঁছে দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে সেই মন্দিরগুলো বেশি ঝুঁকিপূর্ণ যেগুলো অস্থায়ী মন্দির। স্থায়ী জায়গায় না হয়ে মাঠে, ময়দানে বা বিভিন্ন রাস্তাঘাটে যেসব মণ্ডপ স্থাপন করা হয়, সেগুলো বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। সেখানে আমাদের বেশি বেশি পাহারা দিতে হবে এবং সারারাত্র বসে থাকতে হবে।
জে এল ভৌমিক আগামী নির্বাচনের আগেই ধর্মীয় সংখ্যালঘু সুরক্ষায় আইন প্রণয়ন করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণেই বার বার ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর হামলা হচ্ছে। ২০১৮ সনের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ইশতেহারে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইনের কথা বলা হয়েছে। আগামী নির্বাচনের আগেই এটা করতে হবে। আমরা বলেছি, আমাদের জন্য এমন একটি আইন করতে হবে, যারা অপরাধী তাদের জন্য সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান করতে হবে এবং স্পেশাল আদালতে কম সময়ের মধ্যে বিচার করতে হবে।
মতবিনিময় সভায় পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক চন্দ্রনাথ পোদ্দার জানান, গত বছর সারাদেশে দুর্গাপূজার সংখ্যা ছিল ৩২ হাজার ১১৮টি। এবার এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২ হাজার ১৬৮টি। ঢাকা মহানগরে পূজার সংখ্যা ২৪১টি, যা গত বছরের থেকে ৬টি বেশি।
পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক চন্দ্রনাথ পোদ্দার বলেন, বর্তমান সরকার রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে আসার পর প্রতিবছর ধারাবাহিকভাবে পুজোর সংখ্যা বাড়ছে। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, ও শুভানুধ্যায়ীদের অনুদান নিঃসন্দেহে পূজার সংখ্যা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে বলা যায়। পূজার সংখ্যা বৃদ্ধি নিশ্চয়ই আনন্দদায়ক। তবে পুজোর সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে পুজাকেন্দ্রিক নিরাপত্তার বিষয়টিও সবাইকে বিবেচনায় নেয়া দরকার।
চন্দ্রনাথ পোদ্দার বলেন, পূজা, ঈদ, বড়দিন, বৌদ্ধ পূর্ণিমা প্রত্যেক সম্প্রদায়ের কাছে অত্যন্ত পবিত্র। আমরা এমন একটি সমাজের অপেক্ষায় আছি, যে সমাজে ঈদ-পূজা-বড়দিন-বৌদ্ধ পূর্ণিমাসহ অন্যান্য ধর্মীয় ও সার্বজনীন সামাজিক অনুষ্ঠানগুলো নির্বিঘ্নে, অসাম্প্রদায়িক পরিবেশে, কোনো ধরনের ভয়ভীতি এবং পুলিশি পাহারা ব্যতিরেকে অনুষ্ঠিত হবে।
মতবিনিময় সভায় তিনটি বিষয়ের প্রতি সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। সেগুলো হলো- দুর্গাপূজা চলাকালীন কোনো ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি না দেয়া; দুর্গাপূজাসহ অন্যান্য প্রধান ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সময় স্কুল, কলেজ, পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন বিভাগে পরীক্ষা না রাখা; দুর্গাপূজা সহ অন্যান্য প্রধান ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সময় সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পরীক্ষা না রাখা।
দুর্গাপূজার প্রাক্কালে বিভিন্ন সাংগঠনিক পর্যায়ে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভা এবং কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের সভার মতামতের ভিত্তিতে সভা থেকে বিভিন্ন দাবি উত্থাপন করা হয়।
দাবিগুলো হলো-
দুর্গাপূজায় ২ (দুই) দিনের সরকারি ছুটি ঘোষণা করা।
দুর্গাপূজাও জাতীয় মর্যাদায় পালনের পদক্ষেপ নেয়া।
পূজার দিনে কারাগার, হাসপাতাল, অনাথ আশ্রমে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা।
সরকারি অনুদান পূজা উদযাপন পরিষদের স্থানীয় কমিটির তালিকা অনুযায়ী বণ্টন করা।
দেবোত্তর সম্পত্তি পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ আইন প্রণয়নে সাম্প্রতিক সময়ে সরকার কর্তৃক গৃহিত পদক্ষেপ দ্রুত বাস্তবায়ন করা।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে নির্বাচনী ইশতেহারে ঘোষিত ধর্মীয় সংখ্যালঘু বিশেষ সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন, অর্পিত সম্পত্তি ফেরত প্রদানে প্রশাসনিক জটিলতা নিরসন এবং সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়া এবং দুস্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচারের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করার প্রতিশ্রুতি সরকারের এই মেয়াদে বাস্তবায়ন করা।
হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের পরিবর্তে হিন্দু ফাউন্ডেশন গঠন করা।
প্রতিটি জেলায় একটি করে মডেল মন্দির কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠা করা।
টোলসমূহের সংস্কার ও টোল শিক্ষকদের উপযুক্ত বেতন ধার্য করা।
২০২১ সালে দুর্গাপূজার সময়ে সংগঠিত সহিংসতাসহ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন স্থানে দেশব্যাপী হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি-ঘর, মন্দিরে হামলা, লুটপাট, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগের ঘটনা সমূহের তদন্ত ও দ্রুত বিচার করা।