স্যালাইনের সংকট কেটে গেলেও বেড সংকটে হাসপাতালগুলো

করোনা মহামারির মধ্যে দক্ষিনাঞ্চল তথা বরিশাল বিভাগে বাড়ছে ডায়রিয়ায় প্রকোপ। অল্প সময়ে বিপুল পরিমানে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা এবারই প্রথম বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্যবিভাগ।
সূত্র বলছে, গত কয়েকদিনে বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় গড়ে মোট দেড়হাজারের মতো রোগী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালের দ্বারস্থ হচ্ছেন। যেমন গত মঙ্গলবারের ২৪ ঘন্টায় ১ হাজার ৫২৪ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন, আর তার আগেরদিন ১ হাজার ৫১২ জন রোগী ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়েছেন। যা নিয়ে বুধবার সকাল পর্যন্ত সাড়ে ৩ মাসের অধিক সময়ে ৩৩ হাজার ৬৩৮ জন রোগী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন এবং ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। যদিও স্থানীয় পরিসংখ্যানে মৃত্যুর খবর আরো কিছুটা বেশি বলে খবর পাওয়া গেছে।
এদিকে হঠাৎ করে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয় পর্যায়ে আইভি স্যালাইনের সংকট দেখা দিয়েছিলো। যার সমাধান প্রথমে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সহায়তায় করা হলেও বুধবার স্থাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে সংকট মোচনে ৩৫ হাজার পিস আইভি স্যালাইন বিভাগের বিভিন্ন জেলায় দিয়েছে।
এখন শুধু উপদ্রুত এলাকার হাসপাতালগুলোর ডায়রিয়া ওয়ার্ডগুলোতে রোগীদের বেড সংকট রয়েছে। যদিও বেড সংকুলন না হলেও রোগীদের হাসপাতালের ভেতরেই বিভিন্নভাবে রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে, চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যাওয়ার কোন খবর পাওয়া যায়নি। অনেক ক্ষেত্রে ডায়রিয়া ওয়ার্ডের সামনে প্যান্ডেল করেও রোগীদের রাখার ব্যবস্থা করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানাগেছে, বিভাগের ৪০টি উপজেলার মধ্যে ডায়রিয়ায় উপদ্রুত ১৮টি এলাকায় ৪০৬ টি মেডিকেল টিম কাজ করছে। আর হিসেব বলছে উপকূলীয় জেলাসমূহে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা সবথেকে বেশি। কারণ সংক্রমণের প্রথম স্থানে রয়েছে উপকূলীয় জেলা ভোলা, এরপর দ্বিতীয় অবস্থানে পটুয়াখালী ও তৃতীয় অবস্থানে বরগুনা জেলা রয়েছে। যদিও মৃত্যুর হিসেবে বরিশাল জেলা প্রথম অবস্থানে রয়েছে। এ জেলায় মোট ৪ জন এ পর্যন্ত ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। এছাড়া বাকী ৪ জনের মধ্যে পটুয়াখালী ও বরগুনায় ২ জন করে মৃত্যুবরণ করেছেন।
এদিকে দক্ষিণের এ অঞ্চলে ডায়রিয়ার প্রকোপ শুরু হওয়ার পর জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) থেকে গবেষক টিম এসে কাজ শুরু করে। তারা যেটা পেয়েছেন, সেখানে উঠে এসেছে নদী বিধৌত এই অঞ্চলের মানুষ টিউবয়েলের পানি পান করলেও অধিকাংশরা খাল, নদী বা ডোবার পানি রান্না ও থালাবাসন ধোয়ার কাজে ব্যবহার করেন। ফলে ডায়রিয়ার সংক্রমণ বেশি।
আইইডিসিআর এর সমীক্ষার বরাত দিয়ে বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, বরগুনা জেলায় ৯৪ শতাংশ মানুষ টিউবয়েলের পানি পান করেন। অথচ ৭১ শতাংশ মানুষ তাদের নিত্য প্রয়োজনীয় তৈজসপত্র খাল, নদী, পুকুর বা ডোবার দূষিত পানিতে ধুয়ে থাকেন। ফলে ৯৪ শতাংশ মানুষ টিউবয়েলের পানি পান করে নিরাপদ থাকলেও তাদের ৭১ শতাংশ মানুষ যখন দূষিত পানিতে বাসন-কোসন ধুচ্ছে, যা থেকে ডায়রিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আর সার্বিক বিষয়ে বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. বাসুদেব কুমার দাস জানান, ডায়রিয়া রোধে সবাইকে আরো সচেতন হতে হবে। বিশুদ্ধ পানির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি বলেন, এবারে হঠাৎ করে সংক্রমণ শুরু হওয়ায় এবং বেড়ে যাওয়ায় অনেক স্থানে পরিস্থিতি সামাল দিতে কিছুটা কষ্ট হয়েছে। তবে যেভাবেই হোক চিকিৎসা না নিয়ে কোন রোগী বাসায় ফেরেনি। স্বাস্থ্যকর্মীরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছেন রোগীদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে।