আমতলীতে মাঠে মাঠে সূর্যমুখী,কৃষকের মুখে হাসি

আমতলীতে মাঠে মাঠে সূর্যমুখী,কৃষকের মুখে হাসি

বরগুনার আমতলী উপজেলাসহ উপকূলীয় এলাকায় রবিশস্যের আবাদে নতুন মাত্রা যোগ করেছে সূর্যমুখী ফুল চাষ। চলতি বছর এ অঞ্চলে সূর্যমুখী ফুলের বাম্পার ফলন হয়েছে। অর্থনৈতিক সচ্ছলতা অর্জনে এর আবাদে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের। পাশাপশি সরাসরি কৃষি বিভাগ সহায়তা করায় সূর্যমুখী আবাদে দিন দিন ঝুঁকছে এ অঞ্চলের কৃষক। এ অঞ্চলের মাটির গুণাগুণ, আবহাওয়া ও জলবায়ূ সূর্যমুখী ফুল চাষের উপযোগী হওয়ায় কৃষকের কাছে এর আবাদ এখন লাভজনক হয়ে উঠছে।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানাগেছে, সূর্যমুখী ফুল একটি তৈল জাতীয় ফসল। এটি স্থানীয়ভাবে উচ্চমূল্যের ফসল হিসেবেও পরিচিত। ভোজ্যতেলের মধ্যে সূর্যমুখী শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এটি শরীরের কোলেস্টরল ঠিক রাখে। তাই সূর্যমুখীর আবাদ কৃষকের কাছে জনপ্রিয় করে তুলতে রবিশস্যের প্রণোদনার আওতায় সরকার কৃষককে বিনামূল্যে বীজ ও সার সরবরাহ করছে। 

চলতি বছরে উপজেলার ৩২০ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। আবাদ হয় প্রায় ২৮৯ হেক্টর জমিতে। উপজেলার প্রায় ১ হাজার থেকে ১২’শ জন কৃষক এ বছর সূর্যমুখীর আবাদ করেছেন। প্রতিটি ইউনিয়নে কমবেশি সূর্যমুখীর আবাদ হলেও বেশী আবাদ হয়েছে গুলিশাখালী, কুকুয়া, আঠারোগাছিয়া, আমতলী ও হলদিয়া ইউনিয়নে। সাধারণত জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতে সূর্যমুখীর আবাদ হয়ে থাকে। সূর্যমুখী আবাদের এ সময়টায় এ অঞ্চলের অনেকটা জমি ফাঁকা থাকে। মার্চ- এপ্রিলের মধ্যে ফসল কাটার উপযোগী হয়। কৃষকদের পাওয়ার টিলার দিয়ে জমি প্রস্তুত, বীজ রোপণ, সার প্রয়োগ, আন্তঃপরিচর্যা, সেচ ও বালাইনাশক প্রয়োগে হেক্টর- প্রতি খরচ হয়েছে ৫৫ থেকে ৬০ হাজার টাকা। হেক্টর- প্রতি কমপক্ষে ৫০ থেকে ৫৫ মণ ফলন হলেও তা বিক্রি হবে প্রায় ১ লক্ষ থেকে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকায়। 

উপজেলার গুলিশাখালী ইউনিয়নের উত্তর খেকুয়ানী গ্রামের কৃষক মোঃ শহিদুল ইসলাম বলেন, আমি এ বছর ২ একর জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেছি। এতে আমার জমি প্রস্তুত করতে খরচ হয়েছে প্রায় দশ হাজার, সেচ দিতে চার হাজার তিনশত, আগাছা নিধন নিরানি বেড তৈরিতে প্রায় দশ হাজার ও বালাই নাশক প্রয়োগে এগারো শত টাকা। সব মিলিয়ে মোট খরচ হয়েছে পঁচিশ হাজার চার শত টাকা। আগামী সপ্তাহে আমি ফসল কেঁটে ঘরে তুলবো, আশাকরি আনুমানিক ৪০ থেকে ৪৫ মন সূর্যমুখী ফলের দানা পাবো। প্রতি মণ সূর্যমুখীর দানা স্থানীয় বাজারে দুই হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এতে আমি ৯০ হাজার টাকার ফসল বিক্রি করতে পারবো। তিনি আরো বলেন, এ বছর কৃষি বিপণন অধিদপ্তর মাঠপর্যায়ে কৃষকের কাছ থেকে ন্যায্যমূল্যে সূর্যমুখীর দানা কেনার কথা রয়েছে। আশাকরছি তাহলে আমি সন্তোষজনক মূল্য পাবো। 

অপর কৃষক কুকুয়া ইউনিয়নের আমড়াগাছিয়া গ্রামের আবুবক্কর এ বছর এক একর জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন। তিনি জানান, উপজেলা কৃষি অফিস তাকে বিনামূল্যে বীজ ও সার সরবরাহ করা ছাড়াও মাঠপর্যায়ে এসে সার্বক্ষণিক পরামর্শ দিয়েছেন।

হলদিয়ার ইউনিয়নের পশ্চিম চিলা গ্রামের কৃষক মনিরুল ইসলাম বলেন, সে এবছর একবিঘা জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর ফলন অনেক ভাল হয়েছে।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ রাসেল বলেন, এ বছর উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের দক্ষিন রাওঘা গ্রামসহ পাঁচটি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে পঞ্চাশ একর জমিতে বড় সূর্যমুখী ফুলের (জাত প্রর্দশনী) হাইসান- ৩৩ প্রদর্শিত হয়েছে। কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থায়নে এগুলো উপজেলা কৃষি অফিস বাস্তবায়ন করছে। এছাড়াও সরকারের রাজস্ব অর্থায়নে উপজেলা ৬০টি স্পটে (একবিঘা) করে ৬০টি সূর্যমুখী ফুলের প্রর্দশনী রয়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সিএম রেজাউল করিম বলেন, সূর্যমুখী একটি উচ্চ মূল্যের তৈল জাতীয় ফসল। এটি ভোজ্য তৈল হিসেবে শরীরের জন্য খুব উপকারী। এ অঞ্চলের মাটি কিছুটা মৃদু ধরনের লবণাক্ততা সহনশীল হওয়ায় আবহাওয়া ও জলবায়ু সূর্যমুখী ফুল চাষাবাদের জন্য উপযোগী। তাই কৃষককে সূর্যমুখী ফুল চাষে আগ্রহী করার জন্য আমরা বীজ, সারসহ নানা ধরনের সহায়তা দিচ্ছি, যাতে কৃষকরা স্বল্প খরচে অধিক লাভবান হতে পারেন।