পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার বহরমপুর ইউনিয়নের দক্ষিন আদুমপুর গ্রামের মৃত জয়নাল হাং ছেলে মোঃ খোকন একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী।
তাঁর বয়স এখন ৩৬ বছর। ২ বছর আগে বাউফল উপজেলার কালাইয়ার দাসপাড়ায় একটি ছোয়ামিলে দুর্ঘটনায় হারিয়ে ছিলেন তার বাম হাত। কিন্তু এ জন্য দমে যাননি তিনি।
জীবন যুদ্ধে টিকে থাকার জন্য তিনি এখন দশমিনায় এক হাতে রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। প্রতিবন্ধী ভাতার একটি কার্ডের জন্য একাধিকবার চেষ্টা করলেও তা পাননি। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় যাত্রী নিয়ে এক হাতে রিকশা চালাতে দেখা যায় মোঃ খোকনকে। কীভাবে এঅবস্থা হলো খোকনের জানতে চাইলে খোকন বলেন এ প্রতিনিধির কাছে, কীভাবে এঅবস্থা হলো খোকনের জানতে চাইলে খোকন বলেন এ প্রতিনিধির কাছে, বাউফল উপজেলার কালাইয়ার দাসপাড়ারা ছোয়ামিলে গাছ কাটার সময় আকস্মিকভাবে আমার এ অবস্থা হয়েছে।
এতে তাঁর বাম হাত সম্পূর্ণ ঝলসে যায়। এরপর দীর্ঘদিন বাউফল হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা চলে। ওই মিলের মালিকই চিকিৎসার খরচ দেন। ওই সময় প্রাণে বেঁচে গেলেও তাঁর বাম হাতের অর্ধেকটা কেটে ফেলা হয়। বাম হাত হারিয়ে খোকন হয়ে যান পঙ্গু। এরপর দশমিনার দক্ষিন আদুমপুর গ্রামের বাড়িতে চলে আসেন বাড়িতে এসে কয়েক বছর বিশ্রামে থাকেন তিনি। ২২ বছর বয়সে খোকন বিয়ে করেন প্রতিবেশী এক দিনমজুরের মেয়েকে। এরপর জীবিকার তাগিদে ভাড়া নিয়ে রিকশা চালাতে শুরু করেন তিনি। প্রথম প্রথম এক হাত দিয়ে রিকশা চালাতে কষ্ট হতো। যাত্রীরাও তাঁর রিকশায় ওঠতে ভয় পেতেন। কিন্তু আস্তে আস্তে রিকশা চালানোয় তাঁর হাত পাকা হয়ে ওঠে। এখন এক হাত অর্থাৎ শুধু ডান হাতেই তিনি দক্ষতার সঙ্গে রিকশা চালাতে পারেন। প্রায় প্রতিদিনই দক্ষিন আদুমপুর গ্রামের বাড়ি থেকে দশমিনা শহরে এসে দিনভর রিকশা চালান। শরীর খারাপ থাকলেও রিকশা চালান। খোকনের ঘরে ২ছেলে ২ মেয়ে জন্ম নিয়েছে। এতে তাঁর দুঃখ নেই। বড় মেয়ে মানসুরা(১২) ৭ম শ্রেনিতে ও মেঝ ছেলে সায়েম(১১) ৬ষ্ঠ শ্রেনিতে নেহলগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয় অধ্যয়নরত। আর সেঝ মেয়ে মারুফা(৮) নেহলগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত এবং ছোট ছেলে কাইউম(২)।
খোকনের ইচ্ছে ছেলে মেয়েকে লেখাপড়া করানোর। যাতে তারা বড় হয়ে স্বাবলম্বী হতে পারে। খোকন বলেন, ‘সারাদিন রিকশা চালায়া আয় হয় ২৫০ থাইক্যা ৩০০ টাকা। কিন্তু এই আয় দিয়া সংসার চলে না। আগে প্যাডেল মাইরা রিকশা চালাইতাম। কিন্তু ওই রিকশায় অহন বেশি যাত্রী উঠতে চায় না। তাই আমি এনজিও থেকে ৩০হাজার টাকা ঋণ নিয়েছি। এই টাকা দিয়া ব্যাটারিচালিত একটা রিকশা কিনছি। এতে শরীরের ওপর কিছুটা চাপ কমছে। কিন্তু আয় বেশি বাড়ে নাই। পঙ্গু হইলেও জীবনতো চালান লাগবে। তাই রিকশার চাকা ঘুরাইয়াই জীবন চালাই। খোকন, সরকার প্রতিবন্ধীদের অনেক সুবিধা দেয়, ভাতা দেয়। তিনি প্রতিবন্ধী ভাতার একটি কার্ডের জন্য স্থানীয় ইউপি মেম্বারের কাছে বেশ কয়েক বার গিয়েছি। কিন্তু আজো কোন কার্ড পাননি।
একটি কার্ড পেলে তাঁর সংসার চালানো ও ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া করানোয় অনেক সুবিধা হবে বলে তিনি জানান। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বহরমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, খোকন হাং শারীরিক প্রতিবন্ধিতার বিষয়টি আমার। আমার কাছে খোকন এসেছিলেন প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ডের জন্য আবেদন করা হয়েছে। তবে অবশ্যই তাঁকে একটি কার্ড করে দেওয়া হয়ে।