বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পানি সংকট

বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পানির তীব্র সংকট। খাবার, গোসল, টয়লেট-বাথরুম, কাপড় ধোয়া এবং খাওয়ার জন্য পানি পাচ্ছেন না রোগীরা। যেটুকু পানি পাওয়া যাচ্ছে ত লবনযুক্ত নোংরা লালচে ব্যবহার অনুপযোগী।
গত সোমবার (১৭ আগস্ট) দুপুরে কিছু সময়ের জন্য পানি সরবরাহ করা হলেও লবনযুক্ত লালচে পানি হওয়ায় তা ব্যবহার করতে পারছেন না রোগী ও তাদের স্বজনরা। জরুরীভাবে কিছু পানি সরবরাহ হলেও আজ মঙ্গলবারও পানি সমস্যা স্বাভাবিক হয়নি।
হাসপাতালের পানি ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা গণপূর্ত বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. সেলিম তালুকদার জানান, হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার সময় স্থাপন করা দুটি গভীর নলকূপ (টিউবওয়েল) থেকে রোগী ও স্বজনদের পানি সরবরাহ করা হয়ে থাকে। ইদানিং একটি গভীর নলকূপ থেকে ঘোলা ও লবনযুক্ত পানি উঠছে। নতুন নলকূপ স্থাপনের জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। নতুন নলকূপ স্থাপন না করা পর্যন্ত পুরাতন নলকূপ দিয়ে কাজ চালানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জনা যায়, গত রোববার রাত থেকে পুরো হাসপাতালের পানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। গতকাল মঙ্গলবারও পানির সমস্যা সমাধাণ করা সম্ভব হয়নি। গতকাল রোববার বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৯২জন করোনা রোগীসহ ১ হাজার ১৯৬জন রোগী ভর্তি ছিল। প্রতি রোগীর সঙ্গে থাকছেন এক থেকে দুই-তিন জন স্বজন। এছাড়া প্রতি শিফটে হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স, কর্মচারীরও রয়েছে ৫ শতাধিক। অথচ রোগী, স্বজন ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নিরবচ্ছিন্ন ব্যবহারযোগ্য পানি সরবরাহ করতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। গতকাল সোমবার দুপুরে কিছু সময়ের জন্য পানি সরবরাহ করা হলেও ফের সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।
হাসপাতালের রোগীরা জানান, রোববার রাতে কোন পূর্ব ঘোষনা ছাড়া পানি সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ায় বেকায়দায় পড়েন তারা। টয়লেট, বাথরুম, গোসল, কাপড় ধোয়া এবং খাওয়ার পানি নিয়ে তীব্র সমস্যা দেখা দেয়। বাধ্য হয়ে বাইরের গভীর নলকূপ থেকে আবার কেউ বোতলজাত পানি কিনে সাময়িক প্রয়োজন মেটালেও সার্বিকভাবে পানি সংকটে পড়েছেন হাজারো রোগী ও তাদের স্বজন এবং হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এমনকি টয়লেট-বাথরুমে পানি ব্যবহার করতে না পেরে অনেকেই পড়েছেন বেকায়দায়।
হাসপাতালে কর্মরত কোতয়ালী থানার উপ-পরিদর্শক মো. নাজমূল হুদা জানান, গত রোববার রাত থেকে পানি সরবরাহ না থাকায় হাজার হাজার রোগী ও তাদের স্বজনরা অবর্ননীয় দুর্দশার মধ্যে পড়েছেন। গত সোমবার দুপুরে কিছু সময়ের জন্য পানি সরবরাহ চালু হলেও সরবরাহ করা পানি লালচে নোংরা এবং লবনযুক্ত। ওই পানি খাওয়া এবং ব্যবহার উপযোগী নয়। বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। গতকালও একই অবস্থা ছিল।
বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. বাকির হোসেন তিনি বলেন, হাসপাতালে পানির সমস্যা দেখা দিয়েছে। হাসপাতালের অবকাঠামো ব্যবস্থাপনা ও পানি সরবরাহের দায়িত্ব গণপূর্ত বিভাগের। পানি সংকটের কথা তাদের জানানো হলেও তারা নানা অজুহাত দেখায়। হাসপাতালের জন্য জরুরী টিউবওয়েলের ব্যবস্থা রাখা হয়নি। কেন রোগীরা পোকা-ময়লাযুক্ত লালচে পানি ব্যবহার করবে। হাসপাতালের পানি সমস্যার দ্রুত সমাধান করার জন্য গণপূর্ত বিভাগকে বলা হয়েছে। তারা আশ^াস দিয়েছে সমস্যা সমাধানের।
গণপূর্ত বিভাগের মেডিকেল উপ-বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. সেলিম তালুকদার বলেন, হাসপাতাল চত্ত্বরের নার্সিং হোস্টেল ও ডাক্তার কোয়ার্টারে ১৯৬৮ সালে স্থাপিত দুটি টিউবওয়েল থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে পানি এনে হাসপাতালের ওভারহেড ট্যাংকিতে রিজার্ভ করা হয়। পরে সেই পানি পাইপ লাইনের মাধ্যমে বিভিন্ন ওয়ার্ডে সরবরাহ করা হয়। ‘এ’ ব্লকের একটি রিজার্ভ ট্যাংকি পরিবর্তনের কারণে কিছু সময়ের জন্য পানি সরবরাহ বন্ধ ছিলো। টিউবওয়েল দুটি পুরনো হওয়ায় লবনযুক্ত ঘোলাটে পানি আসছে।
গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জেরাল্ড অলিভার গুডা বলেন, হাসপাতালের পরিচালক পানি সংকটের কথা তাকে জানিয়েছেন। তিনি বিশেষজ্ঞ পাঠিয়ে সার্ভে করে ওই টিউবয়েল সংস্কার করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে হাসপাতালের জন্য নতুন একটি টিউবওয়েল স্থাপনের জন্য ৬২ লাখ টাকার একটি প্রাক্কলন চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ বা বরাদ্দের প্রতিশ্রুত পাওয়া গেলে দ্রুত সময়ের হাসপাতালে নতুন টিউবয়েল স্থাপন করা হবে।