এবারের ঈদযাত্রায় যাত্রী সঙ্কটে ভুগছে পরিবহনগুলো

এবারের ঈদযাত্রায় যাত্রী সঙ্কটে ভুগছে পরিবহনগুলো

এবারের ঈদযাত্রায় গণপরিবহনের সংখ্যা কমিয়ে মাত্র ৩০ শতাংশ পরিচালনা করা হবে। কিন্তু এরপরও যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন পরিবহন মালিকরা। তারা বলছেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখেই গণপরিবহন পরিচালনা করা হবে। আর কাউন্টারের পাশাপাশি অনলাইনেও অগ্রিম টিকিট সংগ্রহ করা যাবে। ফলে অন্যান্য ঈদে যাত্রীর তুলনায় গণপরিবহন সংকট থাকলেও এই ঈদে সেই আশঙ্কা করছেন না তারা।

পরিবহন মালিকদের এমন আয়োজনের পরেও যাত্রী সঙ্কটে ভুগছে পরিবহনগুলো। কাউন্টারগুলোতে নেই কোনও ঈদের আমেজ। অগ্রিম টিকিট নিয়ে বসে থাকলেও যাত্রীর দেখা নেই। পরিবহন মালিকরা বলছেন, করোনা, অর্থনৈতিক সংকট ও বন্যা পরিস্থিতি এই সঙ্কটের মূল কারণ। করোনা ভয় কেটে উঠলেও হাতে টাকা না থাকায় মানুষ ঈদযাত্রায় শরীক হতে আগ্রহী হচ্ছে না। পাশাপাশি বন্যার কারণও রয়েছে।


পরিবহন বন্ধ থাকায় গত রমজানের ঈদে নগরবাসীর অনেকেই গ্রামের বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করেননি। ফলে ধারণা করা হয়েছিল এবার ঈদে বাড়তি চাপ পড়তে পারে গণপরিবহনে। তাছাড়া ঈদকে কেন্দ্র করে রেলের ট্রেনের সংখ্যাও বাড়ানো হয়নি। ফলে ধারণা করা হয়েছিল সড়কেই চাপ থাকবে ঘরমুখো মানুষের। এসব বিষয় মাথায় রেখেই পরিবহন মালিকরা ঈদযাত্রার প্রস্তুতি নিলেও যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ বাস ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও সোহাগ পরিবহনের পরিচালক মারুফ তালুকদার সোহেল বলেন, আমাদের মোট সক্ষমতার ৩০ শতাংশ পরিবহন পরিচালনা করার ‍উদ্যোগ নিয়েছি। কিন্তু এই পরিবহনগুলোর জন্যও যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না। এই সময়ে ২০ আসনের বাসে ১৪ থেকে ১৫ জন যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে। প্রতিদিন দূরপাল্লার প্রতিটি বাসে কমপক্ষে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা ভর্তুকি দিতে হচ্ছে।

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দেখতে দেখতে ৫ মাস হয়ে গেলো। এভাবে আর কত ভর্তুকি দেব? পকেটে থেকে আর কত দেওয়া যায়? সরকারও আমাদের এই সেক্টরকে গুরুত্ব দিচ্ছে না। আমি আমাদের কর্মকর্তাদের ডেকে বলেছি তারা যেন বিকল্প চিন্তা করেন। ভর্তুকি দিয়ে আর ব্যবসা করা যাবে না।

ঈদের প্রস্তুতি কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা ৩০ শতাংশ পরিবহন চালানোর উদ্যোগ নিয়েছি। কিন্তু যাত্রী নেই। অন্যান্য বার এমন সময়ে ঈদযাত্রীদের টিকিট দিয়ে পেরে উঠতাম না সেখানে এবার টিকিটি নিয়ে বসে থেকেও যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না। এখন যে কোনও দিনের টিকিটি পর্যাপ্ত রয়েছে। যে কেউ আসলেই টিকিট পাবে।

যাত্রী না থাকার কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, করোনা ও করোনার কারণে অর্থনৈতিক ক্ষতি তো রয়েছেই তার সঙ্গে যোগ হয়েছে বন্যা। মানুষের কাছে টাকা নেই বললেই চলে। আর বন্যা পরিস্থিতির কারণে মানুষ গ্রামের বাড়িতে যেতে আগ্রহী নয়।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব ও ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, যতক্ষণ যাত্রী থাকতে ততক্ষণ পরিবহন পরিচালনা করা হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাস পরিচালনার জন্য সব মালিকদের চিঠি দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি বাসের অর্ধেক আসন ফাঁকা রাখাসহ বাস পরিচালনার জন্য যেসব স্বাস্থ্যবিধি প্রণয়ন করে দেওয়া হয়েছে সেগুলো পালন করা হবে।

তিনি আরও জানান, করোনার কারণে অধিকাংশ কোম্পানির অধিকাংশ বাস বসে আছে। যাত্রী না থাকায় চলাচল করছে না। ঈদে যদি যাত্রী পাওয়া যায় তাহলে আমাদের পরিবহন প্রস্তুত আছে। যেসব কোম্পানি তাদের টিকিটিং সিস্টেম অনলাইন করেছেন তাদের টিকিট অনলাইনে পাওয়া যাবে। যারা কাউন্টারে বিক্রি করছেন তাদে টিকিট কাউন্টারে পাওয়া যাবে। অন্যান্য বছরের মতো এবছর লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট সংগ্রহ করতে হবে না।


ভোরের আলো/ভিঅ/২৯/২০২০