কৃষককে ধানের ন্যায্য দাম দিতে হবে

কৃষককে ধানের ন্যায্য দাম দিতে হবে
সারা দেশে চলছে বোরো মৌসুম। কৃষক ধান কেটে ঘরে তোলার চেষ্টা করছেন। কিন্তু শ্রমিক না পাওয়া এবং অধিক মূল্যে শ্রমিক নিয়োগ করে ধান কাটতে আগ্রহী হচ্ছেন না কৃষক। এক মন ধান কেটে ঘরে তুলতে কৃষকের খরচ হচ্ছে ১ হাজার টাকা। আর এক মন ধান বিক্রি করে কৃষক পাচ্ছেন মাত্র ৫০০ টাকা। এর সঙ্গে চাষাবাদ খরচ ধরলে খরচ আরো বাড়বে। ধানের দাম কম ও দিনমজুর না পাওয়ায় ধানক্ষেতে আগুন লাগিয়ে অভিনব প্রতিবাদ করেছেন টাঙ্গাইলের এক কৃষক। এটা প্রতিবাদ হলেও আমাদের আাশঙ্কায় ফেলার সংকেতও বটে। কৃষকদের আস্বস্ত করতে না পারলে এবং ধানের ন্যায্য দাম না পাওয়ায় কৃষক ধান চাষে আগ্রহ হারাবে। সেটা কোনভাবেই কাম্য নয়। ধান কাটা নিয়ে সারা দেশের মতো বরিশাল অঞ্চলেও একই অবস্থা চলছে। ধান চাষের খরচের পর বাড়তি মজুরী দিয়ে শ্রমিক নিয়োগ করে ধান কাটতে আগ্রহী হচ্ছেন না কৃষক। যদিও কৃষি বিভাগের দাবি তীব্র তাপদাহের কারণে শ্রমিক সংকট রয়েছে। তবে কিছু দিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। বোরো মৌসুমের কয়েকদিন আগে অনেক কৃষকের মাঠে খেসারি ডাল ছিল। ডাল তুলে ঘরে আনতে যে খরচ হয়েছে তাতে ডালের দামের দ্বিগুণ ব্যয় হয়েছে। দেশের অনেক এলাকার কৃষকের খেসারী ডাল মাঠেই মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। এরপর মুগডাল তুলতেও একই অবস্থা হয়েছে কৃষকের। শাক-সবজি ফলিয়েও কৃষকরা ন্যাজ্য দাম পাচ্ছে না। মধ্যস্বত্বভোগীরা লাভবান হচ্ছেন। আর আমাদের কৃষক একই অবস্থায় থেকে যাচ্ছে। এখান থেকে উত্তরণ ঘটাতে না পারলে কৃষক বাঁচবে না। কৃষক না বাঁচলে আমাদের অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। আমরা খাদ্যে স্বংসম্পূর্ণ হয়েছি। এই অর্জনের মূল অংশিজন কেবল কৃষক এবং কৃষক। আমাদের সেই ধারা অব্যাহত রাখতে হলে কৃষকদের দিকে নজর দিতে হবে। কৃষক যাতে তাদের উৎপাদন খরচের পর ধান বিক্রি করে সঞ্চয় করতে পারে সেই ব্যবস্থা করতে হবে। তা না হলে কৃষকরা ধান চাষের প্রতি আগ্রহ হারাবে। কতটা অসহায় হলে একজন কৃষক নিজের ক্ষেতের ধান আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। দিন-রাত পরিশ্রম করে কৃষক যখন দেখে ধান কেটে ঘরে তুলতে উৎপাদন খরচের পরও দিগুন খরচ করতে হবে। তখন পুড়িয়ে দেওয়া ছাড়া আর কোন পথ কি থাকে কৃষকের? আমরা বিশ^াস করি বর্তমান সরকার কৃষকদের ব্যাপারে যথেষ্ট সজাগ দৃষ্টি রাখছেন। আগামীতে যেন কৃষক তাঁর উৎপাদিত স্বপ্নের ফসল ঘরে তুলতে গিয়ে এরকম অবস্থায় না পরে। কৃষকদের পাশে দাঁড়াতে হবে সরকারকেই। আমরা চাই কৃষকবান্ধব নীতিমালা তৈরি হোক। যার মাধ্যমে কৃষক উপকৃত হবে। ধান, চালসহ রবিশষ্য চাষের সঙ্গে জড়িত কৃষকরা উৎপাদন খরচের চেয়ে বিক্রি মূল্য বেশি পায় সেদিকে নজর দিতে হবে। তাহলে বাঁচবে কৃষক, বাঁচব আমরা আর বাংলাদেশ হাঁটবে সমৃদ্ধির পথে।