দেশে এখন নতুন আতংকের নাম হচ্ছে ডেঙ্গু। সারা দেশে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেলক কলেজ হাসপাতালে ভর্তি দুইজন মারা গেছে। গতকাল বৃহষ্পতিবার পর্যন্ত বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৭৯ জন। জুলাই মাসের ৩১ তারিখ পর্যন্ত ভর্তি ছিল ৫০ জন। গত ২৪ ঘন্টায় ভর্তি হয়েছে ৩৩জন। এর মধ্যে ২৪জন পুরুষ এবং ৬ জন নারী। বরিশালের এই চিত্র দেখে আতংক সৃষ্টি হয়েছে নাগরিকদের মধ্যে। বরিশালের ঘরে ঘরে এখন ডেঙ্গু আতংক তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। যদিও আতংকিত না হওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন চিকিৎকসহ বিশেষজ্ঞরা।
ডেঙ্গু। এখন এই শব্দ শুনলে শরীরে একধরণের কাঁপনী শুরু হয়। ডেঙ্গু জ¦র কিংবা চিকনগুণিয়া এখন এক আতংকের নাম। সারা দেশে ডেঙ্গুর প্রভাব চিন্তিত করে তুলছে চিকিৎসকসহ সাধারণ নাগরিকদের। নানা সচেতনতা মূলক কর্মসূচি চলছে দেশজুড়ে। তারপরও কমছে না ডেঙ্গুর প্রভাব। রাজধানীতে ডেঙ্গু ভয়াবহ মাত্রায় বাড়ছে।
বরিশালে ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্তের খবরে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে নগর ভবন। চার সদস্যর একটি টীম করা হয়েছে। সরকারি অফিস, বস্তি এলাকা, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে মশক নিধনে ওষুধ ছিটানো শুরু হয়েছে। ড্রেনেজ ব্যবস্থা সচলরাখাসহ নগর পরিচ্ছন্নতায় কাজ করছে সাড়ে ৪ শত পরিচ্ছন্নতা কর্মী। ডেঙ্গু প্রতিরোধে নগর ভবনের এই কর্মযজ্ঞে আশ^স্ত হতে পারছে না নগরবাসী। কারণ, অতিরিক্ত জনবল নিয়োগ দিলেই ডেঙ্গুর প্রভাব কমবে না। ডেঙ্গু মশার বিস্তার কমাতে হলে ডেঙ্গু (এডিস) মশার বিস্তার বন্ধ করতে হবে। কোথায় কোথায় এডিস মশার বংশবিস্তার হয় সেই স্থানগুলো চিহ্নিত করে সেখানে ওষুধ ছিটাতে হবে।
বরিশালের নাগরিকেদের ভয়ের আরো একটি কারণ হচ্ছে ঢাকা থেকে ডেঙ্গুর জীবানু বরিশালে আসছে। বরিশালের হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত যত রোগী ভর্তি হয়েছে তারা সবাই ঢাকা থেকে আক্রান্ত হয়ে বরিশারে এসেছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে ভয়াবহ অবস্থা হবে বরিশালেও। বিশেষ করে আগামী কোরবানীর ঈদে ঢাকা থেকে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ বরিশালে গ্রামের বারিতে আসবে। তাদের মধ্যে অনেকেই ডেঙ্গু ভাইরাস বহন করবে। ওই ভাইরাস বহনকারী রোগীদের সাধারণ মশায় কামড়ালেও তার মাধ্যমে অন্যের শরীরে ছড়াতে পারে। এই আশংকায় চিন্তিত বরিশালের মানুষ।
ডেঙ্গু ভাইরাস সম্পর্কে আমাদের স্বচ্ছ ধারণা না থাকার কারণেও এর প্রকোপ বাড়ছে। আমরা মনে করি মশায় কামড়ালেই ডেঙ্গু হয়। যে কোন মশার কামড়ে ডেঙ্গু ছড়ায়। তাই আমরা ঝোপঝাড় ময়লা আবর্জনা পষ্কিার করতে ব্যস্ত হয়ে পরি। তাতে মশার উপদ্রব কিছুটা কমেও বটে। কিন্তু তাতে কি ডেঙ্গুর প্রভাব কমবে বলে মনে হয়? কমবে না। কারণ ওই মশা ডেঙ্গু ছড়ায় না। এই বিষয়টি বেশি বেশি প্রচার করা দরকার। বাস্তবে প্রচারণা ও সচেনতায় কেবল ঝোপঝাড় পরিচ্ছন্নতার দিকে নজর দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু কিভাবে ডেঙ্গু ছড়ায় সেটা নগরবাসীকে জানাতে হবে। কেবল ঝোপঝাড়, ময়লা, নর্দমায় ওষুধ ছিটালে ডেঙ্গুর প্রভাব থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে না। আমাদের মনে হচ্ছে, কিভাবে ডেঙ্গু ছড়ায় সেটা নগরবাসী সেভাবে জানে না, কিংবা জানলেও মানে না।
ডেঙ্গুর প্রভাব বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মেয়র মহোদয় নগরবাসীকে আতংকিত না হতে আহ্বান জানিয়েছেন। মেয়রের আহ্বানের সঙ্গে সঙ্গে নগর ভবনের স্বাস্থ্য বিভাগ বরিশাল মহানগরীতে মশার ওষুধ ছিটানো বাড়িয়ে দিয়েছে। এটা আশার কথা যে ওই ওষুধের কারণে স্বাভাবিকভাবেই মশার উপদ্রব কিছুটা কমেছে।
কিন্তু ডেঙ্গু ভাইরাস ছড়ানোর এডিস মশার উপদ্রব কি তাতে কমবে? উত্তর হবে, কমবে না। কারণ এডিস মশার বিস্তার ঝোপঝাড় কিংবা ময়লা আবর্জনা, নর্দমায় হয় না। এডিস মশা হচ্ছে অনেকটা সৈয়দ কিংবা কুলিন মশার প্রজাতি। তাদের আভিজাত্য বজায় রাখতে তারা স্বচ্ছ পানিতে বংশ বিস্তার করে। তাও আবার স্রোত আছে এমন জলাশয় নয়। এডিশ মশা বিস্তার ঘটে বাড়ির ছাদ কিংবা আঙিনায় রাখা টবের জলে, বালতিতে কয়েকদিন ধরে জমানো জলে। ডাবের খোসায়। তাই তারা সহজেই আক্রমণ করতে পারে। ভয়ের বিষয় হচ্ছে ডেঙ্গু ভাইরাস ছড়ানো এডিস মশা রাতে নয়, দিনে আক্রমণ করে। ফলে ডেঙ্গু নামক ভাইরাসে অনায়াসেই আক্রান্ত হই আমরা। তাই বলতে হয়, এডিশ মশার উপদ্রব কমাতে সচেতনতা বাড়ানোর বিকল্প নেই।
নগর ভবনের উদ্যোগকে স্বগত জানিয়ে বলতে চাই, ডেঙ্গুর প্রভাব থেকে রক্ষা পেতে সচেতনতা বড়াতে হবে। আমাদের বাড়ির আঙিনায় স্বচ্ছ জল যাতে না জমে সেদিকে নজর রাখতে হবে। একই সঙ্গে বাড়ির ছাদে, টবে যাতে জল না জমে সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। তাহলে ডেঙ্গু ছড়াতে পারবে না। আমরা মুক্ত হবো ডেঙ্গু নামক ভাইরাসের আক্রমণ থেকে।