নগরীর অক্সিজেন পুকুর-জলাশয় ভরাট বন্ধ হোক

আজ থেকে দু’শ চার বছর আগে ১৮০১ সনে গোড়াপত্তন হয় বর্তমান বরিশাল শহরের। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত বরিশাল নগরবাসী এখনো আইনগত ভাবে সরকারের নগর পরিকল্পনার বাইরেই রয়ে গেছে। এ সুযোগে আইন লংঘন করে অহরহ পুকুর ভরাট, উন্মুক্ত স্থান স্থাপনা নির্মাণের মাধ্যমে অবরুদ্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। আর এ বিপর্যস্ত পরিস্থিতির সব চেয়ে ভয়াবহ চিত্র বিরাজ করছে নগরীর পুকুর-জলাশয়ের ক্ষেত্রে। পুকুর জলাশয়গুলো বরিশাল নগরের হৃদপি-। সবসময় এগুলো আমাদের শরীরে অক্সিজেন হিসেবে কাজ করে। আমাদের ফুঁসফুঁস বাঁচাতে পুকুর-জলাশয় ভরাট বন্ধ করতে হবে।
কয়েকদিন আগে বরিশাল কলেজের সামনে থাকা পুকুরটির অবশিষ্ট অংশ ভরাট শুরু হয়। মহাত্মা অশি^নী কুমার দত্তর বাসভবন সম্মুখে থাকা সরকারি বরিশাল কলেজ পুকুরটি দখলে দুষণে আজ ডোবায় পরিণত হয়েছে। বরিশাল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষদের হাতে পুকুরের বেশিরভাগ ভরাট হয়েছে। বর্তমান অধ্যক্ষ রাতের আঁধারে একটু একটু করে বালু, সিমেন্ট, খোয়া ফেলে পুকুরের বাকি অংশ ভরাট করে চলেছেন। কেউ তাদের বাধা দিচ্ছে না। সিটি করপোরেশন থেকে তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
জানা যায়, বরিশাল পৌরসভা থাকাকালীন সময়ে পৌরসভার নিয়ন্ত্রণে এই শহরে মোট ১১টি পুকুর ছিল। এর বাইরে আধা সরকারি ও ব্যক্তগত পুকুরের অন্ত ছিল না। এখন এর মধ্যে হাতে গুনে বিবির পুকুর, রাখাল বাবুর পুকুর, জেলা পরিষদ পুকুর, কাটপট্টি থানা পুকুর, শিশুপার্ক পুকুর, ফকির বাড়ি পুলিশ ক্লাব পুকুরের অর্ধেকের অস্তিত্ব পাওয়া যায় মাত্র। বাকিগুলো উন্নয়নের নামে ভরাট হয়ে গেছে। আর ব্যক্তিগত পুকুর তো যখন যে যেভাবে পেরেছে ভরাট করেছে।
নগরীর প্রাণকেন্দ্র সদর রোডের যেখানটায় এখন পৌরসুপার মাকের্ট নির্মাণ হচ্ছে সেখানাটায় ছিল একটি বড় পুকুর। আশির দশকের শুরুতে যা ভরাট করে পৌরসভা সেখানে মাকের্ট নির্মাণ করে। বর্তমানে সেখানে বহুতল ভবন নির্মাণ করছে সিটি করপোরেশন। একই ভাবে পৌরসভা তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন উত্তর কাউনিয়ার একটি বড় পুকুর ময়লা ফেলে ভরাট করেছে। কাউনিয়া ব্রাঞ্চ রোড প্রথম পুকুর ভরাট করে স্কুল নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া নগরীর বটতলা মুনসুর কোয়াটার এলাকায় ওয়াকফা স্টেটের একটি পুকুর ভরাট করে সেখানে হার্ট ফাউ-েশন নির্মাণ করা হয়েছে।
নগরীর ভিআইপি জোন হিসেবে পরিচিত রাজাবাহাদুর সড়কের বরিশাল মহিলা ক্লাব ও বরিশাল অফিসার্স ক্লাবের মধ্যবর্তী প্রায় দেড় একর জায়গা জুড়ে থাকা বিশাল পুকুর ভরাট করে সেখানে নির্মাণ করা হয়েছে বরিশাল মডেল স্কুল ও কলেজ। এছাড়া নগরীর বিভিন্ন সংস্থার তত্বাবধানে থাকা প্রায় প্রত্যেকটি পুকুরই কম বেশি বেদখল ও আংশিক ভরাটের মাধ্যমে সংকুচিত করে ফেলা হয়েছে। এদিকে খাল ও পুকুর-জলাশয় ভরাটের ফলে অনেক সময় অগ্নি নির্বাপণের ক্ষেত্রেও দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে নগরবাসীকে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পুকুর-জলাশয় ভরাট না করার নির্দেশনা দিয়েছেন। সারা দেশে সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাগুলোতে ওই নির্দেশনা বস্তাবায়নের নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারপরও পুকুর-জলাশয় ভরাট বন্ধ হচ্ছে না। করপোরেশনের অগচরেও অনেকে পুকুর ভারাট করে ফেলছে। তারই অংশ হিসেবে বরিশাল কলেজের পুকুর ভরাট হয়ে যাচ্ছে। আমরা চাই, বরিশাল সিটি করপোরেশন থেকে যেন পুকুর-জলাশয় ভরাট না করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। পুকুর-জলাশয় ভরাট বন্ধে মাননীয় মেয়র বিভিন্ন সময় নগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছেন। আমরা চাই সরকারি বরিশাল কলেজের পুকুরের অবশিষ্ট অংশ রক্ষায় যেন মেয়র কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।
যদিও বরিশাল সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে বেশ কয়টি পুকুর সংরক্ষণ ও সংস্কারের কাজ চলছে। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) নগরের পুকুর জলাশয় রক্ষায় কাজ করছেন। কাজ করছেন নদী-খাল ও জলাশয় রক্ষা আন্দোলন। যদি সবাই সচেতন না হয় তাহলে এসব উদ্যোগ আলোর মুখ দেখবে না। বরিশালবাসী আবার পূর্বের ঐতিহ্যে বরিশালকে ফিরে পেতে চায়। চায় সুনিদৃষ্টভাবে খাল-পুকুর সংস্কার ও সংরক্ষণ হোক। সেজন্য কেবল নির্দেশনা নয়, পুকুর-জলাশয় ভারটকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। বন্ধ করতে হবে সব ধরণের জলাশয় ভরাট। বরিশাল নগরের ফুঁসফুঁস পুকুর-জলাশয় রক্ষায় কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।