দেশের বিভিন্ন অঞ্চল এখন বন্যায় প্লাবিত হচ্ছে। বন্যা মোকাবেলা জেলায় জেলায় চলছে প্রস্তুতি। সরকার বানভাসী মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে। কিন্তু বন্যাকবলিত এলাকার মানুষের মনে ভয় ও আতংক কমছে না। বানভাসী মানুষের আশঙ্কার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন আরেক আতংক। এই আতংকের নাম হচ্ছে ডেঙ্গু। রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। গত কয়েক দিনে বরিশালে ৮জন ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। বরিশালের ঘরে ঘরে এখন ডেঙ্গু আতংক তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে।
ডেঙ্গু। এই শব্দ শুনলে শরীরে একধরণের কাঁপনী শুরু হয়। ডেঙ্গু জ¦র কিংবা চিকনগুণিয়া এখন এক আতংকের নাম। সারা দেশে ডেঙ্গুর প্রভাব চিন্তিত করে তুলছে চিকিৎসকসহ সাধারণ নাগরিকদের। নানা সচেতনতা মূলক কর্মসূচি চলছে দেশজুড়ে। তারপরও কমছে না ডেঙ্গুর প্রভাব।
বরিশালে ডেঙ্গ ভাইরাসে আক্রান্তের খবরে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে নগর ভবন। চার সদস্যর একটি টীম করা হয়েছে। সরকারি অফিস, বস্তি এলাকা, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে মশক নিধনে ওষুধ ছিটানো শুরু হয়েছে। ড্রেনেজ ব্যবস্থা সচলরাখাসহ নগর পরিচ্ছন্নতায় কাজ করছে সাড়ে ৪ শত পরিচ্ছন্নতা কর্মী। ডেঙ্গু প্রতিরোধে নগর ভবনের এই কর্মযজ্ঞে আশ^স্ত হতে পারছে না নগরবাসী। কারণ, অতিরিক্ত জনবল নিয়োগ দিলেই ডেঙ্গুর প্রভাব কমবে না। ডেঙ্গু মশার বিস্তার কমাতে হলে ডেঙ্গু (এডিস) মশার বিস্তার বন্ধ করতে হবে। কোথায় কোথায় এডিস মশার বংশবিস্তার হয় সেই স্থানগুলো চিহ্নিত করে সেখানে ওষুধ ছিটাতে হবে।
ডেঙ্গু সম্পর্কে আমাদের স্বচ্ছ ধারণা নেই বলে মনে হচ্ছে। আমরা মনে করি মশায় কামড়ালেই ডেঙ্গু হয়। যে কোন মশার কামড়ে ডেঙ্গু ছড়ায়। তাই আমরা ঝোপঝাড় ময়লা আবর্জনা পষ্কিার করতে ব্যস্ত হয়ে পরি। তাতে মশার উপদ্রব কিছুটা কমেও বটে। কিন্তু তাতে কি ডেঙ্গুর প্রভাব কমবে বলে মনে হয়? কমবে না। কারণ ওই মশা ডেঙ্গু ছড়ায় না। এ বিষয়টি নগর ভবন কর্তৃপক্ষ অবশ্য জানবে এটা আমাদের বিশ্বস। বিশেষ করে নগর ভবনের স্বাস্থ্য বিভাগ অব্যই জানে। তারা ডেঙ্গুর প্রভাব থেকে নাগরিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কিভাবে ডেঙ্গু ছড়ায় সেটা নগরবাসীকে জানাতে হবে। কেবল ঝোপঝাড়, ময়লা, নর্দমায় ওষুধ ছিটালে ডেঙ্গুর প্রভাব থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে না। আমাদের মনে হচ্ছে, কিভাবে ডেঙ্গু ছড়ায় সেটা নগরবাসী সেভাবে জানে না, কিংবা জানলেও মানে না।
ডেঙ্গুর প্রভাব বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মেয়র মহোদয় নগরবাসীকে আতংকিত না হতে আহ্বান জানিয়েছেন। মেয়রের আহ্বানের সঙ্গে সঙ্গে নগর ভবনের স্বাস্থ্য বিভাগ বরিশাল মহানরীতে মশার ওষুধ ছিটানো বাড়িয়ে দিয়েছে। এটা আশার কথা যে ওই ওষুধের কারণে স্বাভাবিকভাবেই মশার উপদ্রব কিছুটা কমেছে।
কিন্তু ডেঙ্গু ভাইরাস ছড়ানোর এডিস মশার উপদ্রব কি তাতে কমবে? উত্তর হবে, কমবে না। কারণ এডিস মশার বিস্তার ঝোপঝাড় কিংবা ময়লা আবর্জনা, নর্দমায় হয় না। এডিস মশা হচ্ছে অনেকটা সৈয়দ কিংবা কুলিন মশার প্রজাতি। তাদের আভিজাত্য বজায় রাখতে তারা স্বচ্ছ পানিতে বংশ বিস্তার করে। তাও আবার স্রোত আছে এমন জলাশয় নয়। এডিশ মশা বিস্তার ঘটে বাড়ির ছাদ কিংবা আঙিনায় রাখা টবের জলে, বালতিতে কয়েকদিন ধরে জমানো জলে। ডাবের খোসায়। তাই তারা সহজেই আক্রমণ করতে পারে। ভয়ের বিষয় হচ্ছে ডেঙ্গু ভাইরাস ছড়ানো এডিস মশা রাতে নয়, দিনে আক্রমণ করে। ফলে ডেঙ্গু নামক ভাইরাসে অনায়াসেই আক্রান্ত হই আমরা। তাই বলতে হয়, এডিশ মশার উপদ্রব কমাতে সচেতনতা বাড়ানোর বিকল্প নেই।
নগর ভবনের উদ্যোগকে স্বগত জানিয়ে বলতে চাই, ডেঙ্গুর প্রভাব থেকে রক্ষা পেতে সচেতনতা বড়াতে হবে। আমাদের বাড়ির আঙিনায় স্বচ্ছ জল যাতে না জমে সেদিকে নজর রাখতে হবে। একই সঙ্গে বাড়ির ছাদে, টবে যাতে জল না জমে সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। তাহলে ডেঙ্গু ছড়াতে পারবে না। আমরা মুক্ত হবো ডেঙ্গু নামক ভাইরাসের আক্রমণ থেকে।