পুকুরখনন থেকে দুর্নীতির চূড়ায় সাবেক মেয়র হাফিজুর রহমান হাফিজ

রাজশাহীর পবা উপজেলার নওহাটা পৌরসভার সাবেক মেয়র হাফিজুর রহমান হাফিজ ছাত্রলীগের মাধ্যমে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। তিনি ছিলেন রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। প্রথমে তিনি পুকুরখনন বাণিজ্যের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন শুরু করেন। কৃষিজমিতে পুকুর খননে উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও, স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তিনি এ কাজ চালিয়ে যান এবং মাত্র ১০ বছরে কোটি কোটি টাকা আয় করেন।
হাফিজের উত্থানে বড় ভূমিকা রেখেছেন রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য আয়েন উদ্দিন। তার আশীর্বাদে হাফিজ স্থানীয় রাজনীতি ও প্রশাসনে প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন। দলীয় প্রভাব, মেয়রের ক্ষমতা এবং সাবেক সংসদ-সদস্যের সমর্থনে তিনি অল্প সময়ের মধ্যেই জমি, মার্কেট, গাড়ি, ফ্ল্যাট, গরুর খামারসহ নানা সম্পত্তির মালিক হন।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, হাফিজ নওহাটা পৌরসভায় ২৫টি পুকুর খনন করে মাছচাষ করেছেন। এসব পুকুরের জমি তিনি জবরদখল করেন বা লিজের টাকা না দিয়ে দখলে রেখেছেন। শুধু পুকুরখননে তার বিনিয়োগ ১০ থেকে ১২ কোটি টাকা। এছাড়া, ছয় বিঘা জমিতে গরুর খামার স্থাপন করে চার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন।
২০২১ সালে নওহাটা পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর হাফিজ আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনি পৌরসভার উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেন। ঠিকাদারি কাজ থেকে কমিশন নিতেন এবং পশুহাট ইজারার আড়াই কোটি টাকা পৌর তহবিলে জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, হাফিজ পৌর সদরের কেন্দ্রস্থলে প্রায় দুই কোটি টাকা দিয়ে জমি কিনে দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে একটি মার্কেট নির্মাণ করেন। এছাড়া, তার নিজস্ব কাপড়ের দোকানে ৬০ লাখ টাকা বিনিয়োগ রয়েছে। রাজশাহী মহানগরীতে তার দুটি ফ্ল্যাটের বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় কোটি টাকা।
নওহাটা পৌরসভার সাবেক মেয়র মকবুল হোসেন অভিযোগ করেন, হাফিজ তার মেয়াদকালে পৌরসভাকে দুর্নীতির স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেন। পৌরসভার তহবিল শূন্য হওয়ায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন নিয়মিত হয়নি। ক্ষমতা পরিবর্তনের পর হাফিজ আত্মগোপনে যান। তার বিরুদ্ধে পবা থানায় দুটি মামলা হয়েছে। থানার ওসি মনিরুল ইসলাম জানান, হাফিজকে গ্রেফতারের জন্য পুলিশ কাজ করছে।