বরিশাল মেডিকেলের ৪০ ডাক্তার বদলী,আইসিইউ ও পিসিআর ল্যাবের কার্যক্রম বন্ধের উপক্রম

বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের ৪০ জন ডাক্তারকে অন্য জেলায় বদলী করায় মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা সেবায় চরম সংকট শুরু হয়েছে। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ৫জন চিকিৎসকের বদলী প্রত্যাহার না হলে করোনা ওয়ার্ডের আইসিইউ এবং পিসিআর ল্যাবসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর কার্যক্রম বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা করছেন মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মো. মনিরুজ্জামান।
এদিকে বিভাগের অন্য জেলায় করোনা সংক্রামণ বৃদ্ধি পাওয়ায় সেখানকার পরিস্থিতি সামাল দিতে তাদের অন্য জেলায় বদলী করা হয়েছে বলে জানান বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. বাসুদেব কুমার দাস। অপরদিকে গুরুত্বপূর্ণ ৫টি পদের আদেশ পুনবিবেচনার জন্য স্বাস্থ্য সচিবের কাছে অনুরোধ জানানো হয়েছে বলে জানিয়েছে বিভাগীয় কমিশনার মো. সাইফুল হাসান বাদল।
৫০০ শয্যা থেকে ১০০০ শয্যায় উন্নীত হলেও বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসকের পদ পাড়েনি। ২২৪টি পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র ১০০জন চিকিৎসক। এর মধ্যে ৫ জন চিকিৎসক প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে মেডিকেলে গড়ে প্রতিদিন রোগী ভর্তি থাকছে দেড় হাজারের উপরে। মেডিকেল কলেজের শিক্ষকদের সহায়তায় মেডিকেল হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা সামাল দেয়া হতো। কিন্তু গত সোমবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে মেডিকেল কলেজের ৪০জন সিনিয়র ডাক্তারকে (শিক্ষক) অন্য দুই জেলায় বদলী করা হয়। এর মধ্যে করোনা ওয়ার্ডের আইসিইউ বিভাগের একমাত্র বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, পিসিআর ল্যাবের একমাত্র চিকিৎসক, করোনা ওয়ার্ডের দুই জন মেডিসিনি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবং লাশ ময়না তদন্তে নিয়োজিত ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের একমাত্র চিকিৎসককে অন্য জেলায় বদলী করা হয়েছে। এতে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা করেছেন মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মো. মনিরুজ্জামান।
বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের সার্জারী বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নাজিবুল হক বলেন, বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটি চলে মূলত কলেজের শিক্ষক চিকিৎসকদের সহযোগিতায়। হাসপাতালে এমনিতেই চিকিৎসক শংকট প্রকাট। এই মহূর্তে ৪০জন চিকিৎসক বদলী হওয়ায় হাসপাতালের সেবা আরও কঠিন হয়ে যাবে।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. বাসুদেব কুমার দাস জানান, বিভাগের অন্যান্য জেলায় করোনা সংক্রামণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ওইসব জেলা থেকে বিভাগীয় সদরে করোনা উপসর্গের রোগীর ¯্রােত ঠেকাতে মেডিকেল কলেজের চিকিৎসকদের অন্য জেলায় পদায়ন করা হয়েছে। এতে জেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্য সেবার মান আরও বাড়বে বলে জানিয়েছেন তিনি।
এক সঙ্গে এত সংখ্যক চিকিৎসককে অন্য জেলায় বদলী করায় বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা সংকট আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করেন জেলা মানবাধিকার জোটের যুগ্ম সম্পাদক মো. রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেলে এমনিতেই চিকিৎসক সংকট। মেডিকেল কলেজের শিক্ষকদের দিয়ে আপদকালীন পরিস্থিতি সামাল দেয়া হতো। তিনি মেডিকেল কলেজের শিক্ষকদের অন্য জেলায় বদলীর আদেশ পুনবিবেচনার দাবি জানান।
আইসিইউ, পিসিআর ল্যাব, করোনা ওয়ার্ড এবং ফরেনসিক মেডিসিনসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের চিকিৎসকের ডেপুটেশনের (সাময়িক বদলী) আদেশ পুনবিবেচনার জন্য স্বাস্থ্য সচিবকে ইতিমধ্যে অনুরোধ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিভাগীয় কমিশনার মো. সাইফুল হাসান বাদল। স্বাস্থ্য সচিব এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার আশ^াস দিয়েছেন বলে জানান তিনি।
মন্ত্রনালয়ের ওই আদেশে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ থেকে মোট ৯১জন শিক্ষককে ডেপুটেশনে সাময়িকভাবে অন্য জেলায় বদলী করা হয়েছে। এর মধ্যে ঝালকাঠীতে ২০জন, পিরোজপুর ২০জন এবং বাকী ৫১জনকে পদায়ন করা হয়েছে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেলে। তবে তারা বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা মেডিকেল কলেজ থেকে ভোগ করবেন বলে জানান মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মনিরুজ্জামান।