বরিশালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির পদত্যাগ দাবি

বরিশালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির পদত্যাগ দাবি

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. হারুন অর রশীদকে এমপিওভুক্তির বিরোধিতাকারী আখ্যা দিয়ে তার পদত্যাগের দাবি করেছেন বাংলাদেশ বেসরকারি কলেজ অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষক ফোরাম। বরিশালে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তারা ওই পদত্যাগ দাবি করেন। আগামী ৭ দিনের মধ্যে পদত্যাগ না করলে কঠোর কর্মসূচিরও হুঁশিয়ারী দেওয়া হয় সংবাদ সম্মেলন থেকে।

আজ বুধবার ১৭ জুন বেলা ১১টায় নগরের রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ বেসরকারি কলেজ অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষক ফোরাম বরিশাল জেলা কমিটির নেতৃবৃন্দরা ওই দাবি করেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাংলাদেশ বেসরকারী কলেজ, অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষক ফোরাম, বরিশাল জেলা শাখার সভাপতি মো. ইউনুস শরীফ।

সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, ২০১৫ সালে মাউশি থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি’র কাছে অনার্স-মাষ্টার্স শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির ব্যাপারে মতামত চাওয়া হলেও বিগত ৫ বছরেও উপাচার্য হারুন অর রশিদ কোন মতামত বা সুপারিশ করেননি। অন্যদিকে বারবার জনবল অন্তর্ভুক্তি এবং এমপিও’র বিরোধিতা করেছেন। নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ হয়ে শিক্ষকদের বেতন ভাতার ব্যাপারে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। তিনি ক্রাস প্রোগ্রামের নামে শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করছেন। ভর্তি পরীক্ষা না নিয়ে লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থীদের ভর্তি পরীক্ষার ফি আত্মসাৎ করা, পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নের প্রাপ্য অর্থ বছরের পর বছর শিক্ষকদের না দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলে রেখে মুনাফা অর্জন, করছে বলে অভিযোগ তোলেন সংবা সম্মেলনে। বিশ্ববিদ্যালয় তহবিল থেকে শিক্ষকদের বেতন-ভাতা এবং প্রণোদনার প্রতিশ্রুতি দিয়েও ভঙ্গ করা হচ্ছে বলেও দাবি করেন তারা। যে কারণে আজ জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের ভিসি’র পদত্যাগ দাবি করছেন তারা। সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে অনতিবিলম্বে সংশোনাধীন জনবল কাঠামোয় অন্তর্ভুক্ত করে এমপিও প্রদানের দাবি জানিয়েছেন শেক্ষক নেতারা।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, দীর্ঘ ২৮ বছর ধরে অনার্স শিক্ষকেরা বেতন বঞ্চনার শিকার হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। যা শিক্ষা বিস্তারে সুষম নীতির ক্ষেত্রে চরম বৈষম্য এবং সংবিধানের পরিপন্থী। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগে সরকারি ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ বিধিমোতাবেক এনটিআরসিএর সনদপ্রাপ্ত হয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও মাউশির ডিজির প্রতিনিধিদের তত্বাবধানে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েও তাদেরকে এমপিওভুক্ত করা হচ্ছে না।

দির্ঘ দিনের আন্দোলন সংগ্রাম ও হাইকোর্টের নির্দেশনা, শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সুপারিশ ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একাধিক সুপারিশের প্রেক্ষিতে ২০১৮ এর সংশোনাধীন জনবল কাঠামো সংশোধন কমিটির প্রথম মিটিংয়ে সকল সদস্য বেসরকারি অনার্স মাস্টার্স স্তরের শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনীহার কারণে বিষয়টি উপেক্ষিত হচ্ছে। ১৯৯৫, ২০১০, ২০১৩ এবং ২০১৮ তে জনবল কাঠামো সংশোধন করা হলেও এসব শিক্ষকদের দাবি উপেক্ষা করা হয়েছে। তারপরেও দীর্ঘ আটাশ বৎসর হলো শিক্ষকেরা প্রতিষ্ঠান থেকে নামমাত্র বেতনে কিংবা বেতনহীন অবস্থায় লাখ লাখ শিক্ষার্থীকে শিক্ষা সেবা দিয়ে আসছেন।

লিখিত বক্তব্যে তিনি আরো বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ নীতিমালা ও সরকারি নীতিমালা মোতাবেক নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের শতভাগ বেতন-ভাতা ও সুযোগ সুবিধা প্রদানের নির্দেশনা থাকলেও সারাদেশে বেসরকারি কলেজের ৯০ ভাগ কলেজ কর্তৃপক্ষ তা আমলে নিতে চায় না।
শিক্ষকদের বেতনের নাম করে গরীব ছাত্র-ছাত্রীদের নিকট থেকে মাসে ৫০০ থেকে ১৫০০ টাকা করে বেতন নেওয়া হলেও শিক্ষকদের বেতন বাবদ ৩ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকার মধ্যে দিয়ে থাকে যা একজন শিক্ষকের বর্তমান বাজার দরে জীবন জীবিকা নির্বাহ করা অসম্ভব। শুধু তাই নয় অধিকাংশ কলেজেই মাসের পর মাস সামান্য টাকাটাও ফান্ডে না থাকার অযুহাতে বন্ধ রাখা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, শুরুতে কলেজের সংখ্যা গুটি কয়েক হলেও ২০১৮ সাল পর্যন্ত তা ৫০০ ছাড়িয়ে যায় এবং সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ৮ হাজার ৫০০। এর মধ্যে ২৬৮ কলেজ সরকার জাতীয়করণ করার পর তাদের চাকরি সরকারি হলেও একই প্রক্রিয়ায় নিয়োগপ্রাপ্ত বাকি ৩১৫ টি কলেজের ৫ হাজার ৫০০ শিক্ষকের জন্য মাত্র ১৪৬ কোটি ৫০ লাখ টাকার এমপিও বরাদ্দ না দিয়ে বঞ্চিত করা হচ্ছে। যা চুড়ান্তভাবে অমানবিক।
গত ১৭ মার্চ থেকে বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে শিক্ষকেরা যে সামান্য বেতন ভাতা পেত তাও বন্ধ থাকার কারণে মানবেতর জীবন যাপন করছে উপরন্তু এসব শিক্ষকদের নিয়োগকারী জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের বেতনভাতার ব্যাপারে কোন ভুমিকা পালন করছে না। ফলে পরিবারের ভরণ পোষন করতে না পারা শিক্ষকদের আত্মহত্যা করা ছাড়া আর কোন পথ খোলা নেই।

সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ বেসরকারি কলেজ অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষক ফোরাম কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহবায়ক মো. মোকলেসুর রহমান, কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সভাপতি আমিরুল ইসলাম জসীম,  জেলা কমিটির কোষাধ্যক্ষ পরিতোষ চন্দ্র হালদার।