বাংলা ভাষার মর্যাদা অটুট রাখতে হবে

বাংলা ভাষার মর্যাদা অটুট রাখতে হবে

 

সেদিনও এমনি নীল গগণে বসনে শীতের শেষে
রাত জাগা চাঁদ চুমু খেয়ে ছিল হেসে।
পথে পথে ফোঁটে রজনীগন্ধা অলকানন্দা যেন
এমন সময় ঝড় এলো, ঝড় এলো খ্যাপা বুনো
সেই আঁধারে পশুদের মুখ চেনা
তাহাতের তরে মায়ের বোনের ভাইয়ের চরম ঘৃণা
ওরা গুলি ছোড়ে এদেশের বুকে দেশের দাবিকে রোখে।
ওদের ঘৃণ্য পদাঘাত আজ সারা বাংলার বুকে
ওরা এদেশের নয়, দেশের ভাগ্য ওরা করে বিক্রয়
ওরা মানুষের অন্ন, বস্ত্র, শান্তি নিয়েছে কাড়ি
একুশে ফেব্রুয়ারি, একুশে ফেব্রুয়ারি।

পলাশ ফোঁটা আর শিমুলের রক্তাভ আহ্বান একুশ। সামনে যাবার প্রেরণা একুশ। মায়ের মুখের মধুর বুলি একুশ। মা আর একুশ এক ও অভিন্ন আত্মা। তাই একুশ এলে আমরা মায়ের একান্ত ¯েœহের পরশ পাই। রক্ত দিয়ে ভাষা অধিকার পাওয়া জাতি হিসেবে আমাদের  আমাদের গৌরব ও অহংকার আছে। আবার ৭১-এ এক সাগর রক্তের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি আমাদের স্বাধীনতা। তাই তো বলতেই পারি ‘রক্ত দিয়ে নাম লিখেছি বাংলা দেশের নাম’। রক্তের বিনিময়ে বাংলা ভাষার অধিকার পাওয়া জাতি বাঙালি। বিশে^র ১৮৮টি দেশ আজা মাতৃভাষা দিবস পালন করছে। কিন্তু রক্ত দিয়ে অজর্ন করা বাংলা ভাষার মর্যাদা কতটা সমুজ্জল থাকছে সেটা খতিয়ে দেখা দরকার। আজও সরকারি ও বেসরকারি অফিস-আদালতে সঠিকভাবে বাংলার ব্যবহার করা হচ্ছে না। কেবল ফেব্রুয়ারি মাস এলে ভাষার মর্যাদার দাবি ওঠে। এরপর আর কোন উদ্যোগ চোখে পড়ে না। বাংলা ভাষার মর্যাদা অটুট রাখতে কার্যকর কোন পদক্ষেপ নিতে হবে। তাহলেই সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রচলন ঘটবে।

বাংলা ভাষা অর্জনে আমাদের রয়েছে অমিত ত্যাগ। বাংলা ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছে অনেক ছাত্র-যুবক। তাঁদের মধ্যে আমরা কেবল রফিক, সালাম বরকতসহ গুটি কয়েকের নাম জানতে পেরেছি। বাকিদের নাম উচ্চারণ করতে না পারলেও তাঁদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা ভালোবাসা। ভাষা সংগ্রামে যারা আত্মত্যাগ করেছেন তাঁরাই আমাদের একাত্তরের পথে হাঁটতে শিখিয়ে গেছেন। বাংলা এবং বাঙালিতে সম্ভাবনার দিকে যারা যেতে সাহস ও শক্তি যুগিয়েছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছি।

আমরা বলি, রাষ্ট্র ভাষার হয়েছে জয়, একুশ সারা বিশ^ময়। ‘আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি...’ এই কালজয়ী গান সারা বিশে^র মানুষের কণ্ঠে ধ্বণিত হচ্ছে। যেকারণে বিশ^সভায় আমাদের গৌরবময় অবস্থান সৃষ্টি হয়েছে, সেই ভাষা দেশের মাটিতে অনেকটা মর্যাদাহীনভাবে ব্যবহার হচ্ছে। এই দায় কোনভাবে এড়ানো যাবে না। সর্বস্তরে বাংলা ভাষার চর্চা ও পচলন করতে রাষ্ট্রকে অবশ্যই নির্দেশনা দেওয়া দরকার।

একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের অন্যতম অনুপ্রেরণা। একুশ আমাদের মাথা নত না করার দৃঢ়তা দিয়েছে। তার কারণ, ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছে এমন নজির পৃথিবীর ইতিহাসে বাঙালির বাইরে খুব একটা নেই। ৫২’র ভাষা আন্দালন আমাদের ৬৬, ৬৮, ৬৯ এবং ৭১ এর মুক্তি সংগ্রামের পথে এগিয়ে নিয়ে এসেছে। সেই পথ ধরেই আজ আমরা উন্নত দেশের সারিতে উঠে আসছি।


মায়ের মুখের ভাষা তো অনন্য জাদুতে ভরা। তাই তো কবি বলেছেন, ‘কি জাদু বাংলা গানে, গান গেয়ে দ্বার মাঝি টানে’। মায়ের মুখের বোল শুনেই তো আমরা হাসি, কাঁদি, আনন্দ ভাগাভাগি করে নেই। ঘুম পাড়ানি গান শুনিয়ে মা-ই তো আমাদের পরম ¯েœহে ঘুম পাড়ান। আবার গান শুনিয়েই মা আমাদের জাগিয়ে তোলেন। সেই মায়ের পরম ভাষা বাংলা ভাষা। যে ভাষার জন্য সংগ্রাম করতে হয়েছে আমাদের। ৫২’র সেই সংগ্রামই তো আমাদের মাকে মা ডাকার অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছে। তাই ভাষার মর্যাদা অটুট রাখতেই হবে।