মেঘনার চাঁদপুর পয়েন্টে বালুবাহী নৌযানে বেপরোয়া চাঁদাবাজীর অভিযোগ

মেঘনার চাঁদপুর পয়েন্টে বালুবাহী নৌযানে বেপরোয়া চাঁদাবাজীর অভিযোগ


মেঘনা নদীর চাঁদপুরের হরিনা ফেরীঘাট ও আলু বাজার পয়েন্টে বালুবাহী বাল্কহেড থেকে বেপরোয়া চাঁদাবাজীর অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় একটি সন্ত্রাসী গ্রুপের বিরুদ্ধে। চাঁদা না দিলে প্রতিনিয়ত হামলার শিকার হচ্ছেন দক্ষিণাঞ্চলগামী বালুবাহী বাল্কহেডের শ্রমিকরা। সব শেষ গত বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে চাঁদার দাবিতে বরিশালগামী বালুবাহী ২টি বাল্ডহেডের ১০ শ্রমিককে মারধর করে ২ ঘন্টা জিম্মি করে রাখে তারা। পরে জরুরী সেবা হটলাইন ৯৯৯ এ ফোন করে ছাড়া পায় তারা।

হামলা ও চাঁদাবাজীর শিকার বাল্কহেড মালিক-শ্রমিকরা জানান, চাঁদপুরের ১০ নম্বর লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সেলিম খান ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর কাছে জিম্মি মেঘনা নদী দিয়ে বালু পরিবহনকারীরা। এর প্রতিকার চেয়ে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দেয়ার কথা জানিয়েছেন বরিশালের বাল্কহেড মালিকরা।

বরিশালের বাল্কহেড মালিক মো. কামরুল জানান, বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলে বালু আসে নৌপথে রাজবাড়ী জেলার পাকশি থেকে। পথিমধ্যে চাঁদপুরের হরিনা ফেরীঘাট ও আলু বাজার সংলগ্ন মেঘনা নদীতে ট্রলার ও স্পীডবোটযোগে লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সেলিম খান ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যরা হানা দিয়ে প্রতিটি বাল্ক হেড থেকে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। তাদের দাবিকৃত চাঁদা না দিলে বাল্কহেড শ্রমিকদের মারধর করে টাকা মুঠোফোন ও মূল্যবান মালামালা নিয়ে যায়। অনেক সময় বাল্কহেড আটকে রাখে এবং বালু নদীতে ফেল দেয় বলে অভিযোগ করেন তিনি।

বাল্কহেড মালিক হুমায়ুন কবির জানান, দাবিকৃত চাঁদা না দেয়ায় গত ১৫ জুন বিকেলে মেঘনার হরিনা ফেরীঘাট বরিশালগামী এমভি এসএম মোল্লা এবং এমভি নববন্ধন নামে বালুবাহী দুটি বাল্কহেডের কেরানী, সুকানী শ্রমিকদের মারধর করে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম এবং তার সহযোগীরা। এ সময় নিয়মিত চাঁদা না দিলে বালুসহ বাল্কহেড ডুবিয়ে দেয়ার হুমকী দেয় তারা।

গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় মেঘনার হরিনা ফেরীঘাট আলুবাজার পয়েন্টে বরিশালগামী এমভি মা জান্নাতুল-১ ও এমভি মা জান্নাতুল-২ নামে দুটি বাল্কহেড আটক করে চেয়ারম্যান সেলিম খান বাহিনী। এ সময় তাদের দাবিকৃত চাঁদা না দেয়ায় দুই বাল্কহেডের সুকানী আব্দুস সালাম ও শাহজাহান, মিস্ত্রি শমসের, রুবেল, শ্রমিক রমজান, দুলাল, রুম্মান ও শামীমসহ ১০জনকে বেদম মারধর করে তারা বাল্কহেড আটকে রাখে। খবর পেয়ে বাল্কহেড মালিক মো. জাহিদ ও মো. জব্বার মিয়া জরুরী সেবা হটলাইন ৯৯৯ এ ফোন করে স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় বাল্কহেড দুটি সন্ত্রাসীদের কাছ থেকে অবমুক্ত করেন।

\বাল্কহেড শ্রমিকরা জানান, চাঁদপুরের মেঘনায় চাঁদাবাজী এবং শ্রমিক নির্যাতনে সেলিম চেয়ারম্যান খুলনার ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী এরশাদ সিকদারকেও হার মানিয়েছে। তার বাহিনীর বেপরোয়া চাঁদাবাজী এবং নির্যাতনে মেঘনা নদী দিয়ে বালু পরিবহন বন্ধের উপক্রম। বালু পরিবহন বন্ধ হয়ে গেলে দক্ষিণাঞ্চলের কয়েক হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে যাবে। বরিশাল বালু শূন্য হয়ে পড়লে এ অঞ্চলে নির্মাণ কাজও ব্যহত হবে বলে তারা আশঙ্কা করেন।

অভিযোগের বিষয়ে মুঠোফোনে জানতে চাইলে চাঁদপুরের ১০ নম্বর লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সেলিম খান উত্তেজিত হয়ে বলেন, ‘আপনি কিন্তু একটা টেলিভিশন এবং একটা পত্রিকার মালিকের সঙ্গে কথা বলতেছেন। ভাত খাওয়ার সময় পাই না। তারপর নদীতে যাবো চাঁদাবাজী করতে। আপনার সঙ্গে বেশি কথা বলার সময় আমার নাই’ বলে ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
বরিশাল নৌ পুলিশ সুপার মো. কফিল উদ্দিন জানান, মেঘনার হিজলা সীমান্ত পর্যন্ত বরিশাল নৌ পুলিশের আওতাভুক্ত। মেঘনার হরিনা ফেরীঘাট ও আলু বাজার এলাকা চাঁদপুর নৌপুলিশের আওতাধীন।

মুঠোফোনে চাঁদপুর নৌ পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলায়েত হোসেন বলেন, মেঘনার আলু বাজার কিংবা হরিনা ফেরীঘাট পয়েন্টে বালুবাহী নৌযানে চাঁদাবাজীর কোন খবর তারা জানেন না। কেউ অভিযোগ করলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেন তিনি।