শিক্ষাঙ্গনে আধিপত্য বিস্তার বন্ধে উদ্যোগ নিন

শিক্ষাঙ্গনে আধিপত্য বিস্তার বন্ধে উদ্যোগ নিন

 

শিক্ষাঙ্গন হচ্ছে পবিত্র স্থান। পাঠদান ও পাঠ গ্রহণের মাধ্যমে সম্ভাবনাময় জনসম্পদ গড়ে ওঠে শিক্ষাঙ্গন থেকে। তাই শিক্ষাঙ্গন হওয়া দরকার পাঠোপযোগী এবং শিক্ষার্থী বান্ধব। পরিতাপের বিষয় আমাদের দেশে অসুস্থ এক সংস্কৃতি শিক্ষাঙ্গনগুলোকে কলুশিত করছে। রাজনীতির নামে ও বেনামে এক অসুস্থ প্রতিযোগিতা আমাদের পাঁকে ফেলে দিচ্ছে। কখনো কখনো ক্ষুদ্র স্বার্থে শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করা হচ্ছে। ইতিবাচক দিকনির্দেশনার অভাবে তারা জড়িয়ে পড়ছে অনৈতক কর্মকা-ে। সঠিক ছাত্র রাজনীতির চর্চ না থাকার ফলেও শিক্ষার্থীরা শিক্ষাঙ্গনের উন্নয়ন কর্মকা-ে বাণিজ্যিক অংশিদারিত্বে প্রবেশ করছে। সহজ পন্থায় অর্থ উপার্যনের সুযোগ পেয়ে তারা জড়িয়ে পড়ছে অনিয়ম দুর্নীতিতে। এই অনৈতিক সুযোগ টিকিয়ে রাখার জন্যে তারা শুরু করে দেয় আধিপত্য বিস্তার। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে হামলা, মারামারি এমনকি হত্যার ঘটনাও ঘটছে। তাই শিক্ষাঙ্গনে এই আধিপত্যবাদ রুখতে ইতিবাচক উদ্যোগ নেওয়া একান্ত জরুরী।

স্বাধীনতার আগে ও পরে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে যে সুস্থ ধারার ছাত্র রাজনীতি চর্চা ছিল সেটা আজ অনেকটা নেই বললেই চলে। এমনকি ৮০-৯০ এর দশকে যে ছাত্র রাজনীতি ছিল সেটার নিজ্জাসও অবশিষ্ট নেই। ওই সময়গুলোতেও আধিপত্য ছিল। তবে সেটা শিক্ষার্থীদের অধিকার সুরক্ষার জন্যেই বেশি প্রয়োগ হতো। সেই ধারা পরিবর্তন হতে হতে এখন এক দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে আধিপত্যবাদ বিরাজ করছে। একটা সময় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে আলোচনায় থাকতো জাতীয় ছাত্র সমাজ, ছাত্রদল এবং ছাত্রলীগ নিয়ে। পরে দেখা গেল ছাত্রদল দুই পক্ষের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দ্বন্দ্ব, হানাহানি, মারামারি। আবার ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে হামলা, দ্বন্দ্ব, মারামারি। আদর্শগত অবস্থান এক থাকলেও কেবল সুবিধা কম বেশি পাওয়ার কারণে এই দ্বন্দ্ব প্রকট হচ্ছে।

সবশেষ আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বরিশাল বিশ^বিদ্যালয়ে দুই শিক্ষার্থীকে হাতুড়িপেটা এবং মারধর করে হাত ভেঙে দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। মজার ব্যাপার হলো প্রকাশ্যে বরিশাল বিশ^াবিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি নেই ঘোষণা আছে। কিন্তু অপ্রকাশ্যে সেখানে ছাত্রলীগ তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। অন্য কোন দল সেভাবে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছে না। এব্যাপারে বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উদাসীনতাও অনেকাংশে দায়ি।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শের-ই-বাংলা হলে ঢুকে ছাত্রলীগের ২ কর্মীকে কুপিয়ে জখম করেছে হেলমেট পরিহিত একদল যুবক। তারা মঙ্গলবার ভোরে ফজরের আযানের পরে বিশ^বিদ্যালয়ের শের-ই-বাংলা হলে ঢুকে ওই হামলা ও হাতুড়িপেটা করে হাত ভেঙে দিয়েছে। আহতরা জানিয়েছে হামলাকারীরা তাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ। যেখানে ছাত্র রাজনীতি নেই সেখানে আবার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ কারা? এমন প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। প্রচার আছে ছাত্রলীগের মধ্যে দুইটি গ্রুপ বিশ^বিদ্যালয় নিয়ন্ত্রণ করে। একটি পক্ষ সদর আসনের সাংসদ ও পানি সম্পদপ্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীমের অনুসারী এবং অন্যটি বরিশাল সিটি মেয়র সাদিক আবদুল্লাহর অনুসারী। ঘটনা যদি এমন হয়, তাহলে নিজেদের মধ্যে সৃষ্ট দ্বন্দ্বের জের ধরেই বারবার এমন ঘটনা ঘটছে। এমন আধিপত্যবাদ সুস্থ শিক্ষা চর্চার পরিবেশ নষ্ট করে। এই ধারার অবসান ঘটিয়ে শিক্ষার সুন্দর পরিবেশ দিতে উদ্যোগ নিতে হবে। সেজন্যে বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসনকে ইতিবাচক ভূমিকা নিতে হবে। এই অশুভ চক্র এবং আধিপত্য বিস্তার বন্ধে উদ্যোগ নিন।