শেবাচিমে হাসপাতাল সার্জারি মহিলা ওয়ার্ডের বাইরে চলছে রোগীর চিকিৎসা

বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (শেবাচিম) পুরাতন ভবনের চারতলায় মহিলা সার্জারি ওয়ার্ডের রোগীদের হাসপাতালের বারান্দা, মেঝে ও ওয়ার্ডের বাইরে (সামনে) চিকিৎসা চলছে। এতে দুর্ভোগে পরেছেন রোগীর স্বজন ও চিকিৎসাধীন রোগীরা। কর্তৃপক্ষের দাবী, হাসপাতালে অতিরিক্ত রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের।
সরেজমিন
সার্জারি ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, ওয়ার্ডের ৪টি ইউনিটে মোট বেড সংখ্যা ৮০ টি। গতকাল মঙ্গলবার এই ওয়ার্ডে নতুন ভর্তি হয়েছে ১৫ জন। এছাড়া সোমবার থেকে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত মোট ভর্তি ছিলো ১৪৮ জন। ওয়ার্ডের ভিতরে স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে আছে। ওয়ার্ডে বৈদ্যুতিক পাখাও (ফ্যান) নেই পর্যাপ্ত। নার্সদের অফিস রুমের জানালা ভাঙাসহ রোগীদের বেডের কভার থেকে শুরু করে চারপাশ খানাখন্দে ভরা। ওয়ার্ডে বাইরে দেখা যায়, ওয়ার্ডের প্রবেশ পথেই ১০ জন রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তাদের মধ্যে একজন রয়েছেন মেঝেতে। এছাড়া ওয়ার্ডে প্রবেশপথের ডান পাশের বারান্দায় প্রায় আরো ১০জন রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এভাবেই রোগীদের চিকিৎসা প্রদান করছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
ওয়ার্ডের বাইরে ভর্তি হওয়া রোগী মাদারিপুরের বাসিন্দা সুমি বেগম (২৬) বলেন, ‘আমার স্বামীরে হাতে কোপাইছে। তাই হাত কেটে গেছে। হাসপাতালের ওয়ার্ডের ভিতরে অনেক গরম তাই আমাদের এখানে বেড দিছে। আর এখানেই এখন গত চারদিন ধরে চিকিৎসা নিতেছি।’
একই অবস্থায় চিকিৎসা নিচ্ছেন মাকসুদা বেগম। তিনি বলেন, ‘এইখানে কেন বেড দিছে জানি না। ঝামেলা করলে ভালো চিকিৎসা পাওয়া যাবে না।’ তবে হাসপাতাল থেকে ঔষধ পায় কিনা-এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘হাসপাতাল দিয়া ঔষধ কিনতে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়াইয়া আনা লাগে। এই বয়সে অতো শক্তি নাই। তাই সব ঔষধ বাইরে দিয়া কিনি।’
অন্য এক রোগী তনুজান (৭০) বলেন, ‘শনিবার বিকালে ভর্তি হইছি। ভিতরে অনেক ভিড় তাই বাইরে বইসাই চিকিৎসা নিতেছি।’
ওয়ার্ডের মধ্যে চিকিৎসারত রোগী (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন, ‘একটি ফ্যানের নিচে দুইটি বেড। প্রচন্ড গরম লাগে। এছাড়াও এমন একটি দুর্গন্ধ থাকে সবসময়, মাঝে মধ্যে মনে হয় মরে যাই। এই পরিবেশে থাকতে খুব কষ্ট হচ্ছে’।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, মহিলা সার্জারি ওয়ার্ডে চারটি ইউনিট। ওয়ার্ডে চিকিৎসক রয়েছেন চার জন। এছাড়াও চার ইউনিটের জন্য চার জন প্রফেসর রয়েছেন। অন্যদিকে প্রতিটি ইউনিটে ২জন করে রেজিস্টার ডাক্তার রয়েছে।
ওই ওয়ার্ডের স্টাফ নার্স ইনচার্জ (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন, ‘রোগীর সুবিধার জন্য বারান্দায় এবং আশপাশে খালি জায়গায় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আরো বেড বাড়ানো হবে। তাদের বেডের উপরে ফ্যানও রয়েছে।’
তিনি দাবি করেন, এতো বড় ওয়ার্ডে তিন শিফ্টে মোট ২০ জন নার্স রয়েছে। এত কম লোকবল দিয়ে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। এই ওয়ার্ডে সেবা নিশ্চিতে প্রায় ৫০ জন নার্স প্রয়োজন। কারণ চার ইউনিটের বেডসংখ্যা মোট ৮০টি। সেখানে সবসময় কমপক্ষে ১২ জন ভর্তি থাকে। তবে হাসপাতালে নতুন ভবন হওয়ায় সেখানে অনেক নার্স চলে গিয়েছে। তাই এসব ওয়ার্ডে নার্সের সংকটও রয়েছে বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. এসএম মনিরুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের নতুন ভবন তৈরী হয়েছে। সেখানে অনেক নার্স চলে গিয়েছে। এদিকে আমাদের জনবল না বাড়া সত্ত্বেও প্রতিনিয়ত রোগীর চাপ সামাল দিতে হচ্ছে। তবে সব কিছুই সমন্বয় করার চেষ্টা চলছে।’
হাসপাতালটি ১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। সেই আমলের স্থাপনায় এখনও চিকিৎসা সেবা চলছে এই হাসপাতালে। বর্তমানে সময়ে এসে রোগীদের চাপ বেড়েছে অনেকগুণ। সে অনুযায়ী রোগীদের বাড়তি সামাল দিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে পরতে হচ্ছে বিপর্যস্ত অবস্থায়। অন্যদিকে একটি নতুন ১০ তলা ভবনের কাজ চলমান। তার আগেই রোগীদের চাপে হাসপাতালের পুরাতন ভবন থেকে মেডিসিন ওয়ার্ডটি নতুন ভবনে নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য, গত ১১ জানুয়ারি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী জাহিদ মালেক এমপি হাসপাতালটি পরিদর্শনে গিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। পরে হাসপাতালের পরিচালক সপ্তাহের প্রতি মঙ্গলবার দিনব্যাপী কর্মচারীদের নিয়ে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিচালনা করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন।