সেই চেনা পথ থমকে দাঁড়িয়ে আছে

সেই চেনা পথ থমকে দাঁড়িয়ে আছে

বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারী। বাংলাদেশ জুড়ে লকডাউন ঘোষণা করেছে সরকার। চারিদিক যেন অন্ধকারে ছেয়ে গেছে। কত আশায় ছিল বাংলার মানুষ, ১৪২৮ বাংলা নববর্ষ যেন শুভ সংবাদ নিয়ে আশে। কিন্তু না। সেই নববর্ষের দিন ফের লকাডউন ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছে সরকার। আনন্দ, উচ্ছ্বাস থেমে গেছে। নিস্তদ্ধ দেশ। নিস্তব্ধ সেই আঙিনা যারা ব্যস্ত হয়ে উঠত নববর্ষকে বরণ করে নেয়ার জন্য। তেমনই আমার আঙিনা উদীচী, বরিশাল নাটক। দীর্ঘ এক থেকে দেড় মাস খেটে মঙ্গল শোভাযাত্রার উপকরণ তৈরির জন্য কাজ করে যেতাম একটি পরিবার মিলে। আজ সেই চেনা পথ, সে পথের মানুষগুলো থমকে দাঁড়িয়ে আছে। 

এই দুইবছর ধরে সেই প্রাণের উৎসব থেমে আছে। এত দিনে নতুন করে হারিয়েছি অনেক নতুন, পুরাতন মুখ। যাদের সঙ্গে কথা ছিলো আমারা আবার একসঙ্গে প্রাণ খুলে হাসবো, নি:শ্বাস নেব। গত বছর নববর্ষের ঠিক সকাল ৬ টায় উদীচীর মঙ্গল শোভ যাত্রা ও বৈশাখী মেলার প্রাঙ্গণ বিএম স্কুল এর মাঠে দাঁড়িয়ে নতুন দিনের সূর্যের প্রতি আহবান জানিয়েছিলাম এই মহামারী কেটে যাক। আসুক নতুন দিন। সবার মুখে ফুটুক হাসি। সেই হাসি আজও ফুটে ওঠেনি। তবে পৃথিবীর এ ক্যামন যাত্রা? আর কতদূর? কোথায় পরিত্রাণ?

আজ আবার সেই দিনটায় দাঁড়িয়ে। চারিদিক থমথমে। গাছের পাতাগুলো যেন একটু ভিন্ন আঙ্গিকে নড়াচরা করছে। মাথার উপর কাক ডাকছে। কি বলতে চাচ্ছে ওরা? বাতাসের গন্ধ এমন কেন? সেই চেনা মাঠের মাটিও যেন দূরে সরে যেতে বলছে। জ্যেষ্ঠদের মুখে তাকাতে ভয় পাই। নিজেকে মনে হয় পৃথিবীর সব থেকে বিষাক্ত মানুষ। যে ছুঁয়ে দিলে নির্ঘাত মৃত্যু। ভাবতে গেলে দম বন্ধ হয়ে আসে। আজকাল দম বন্ধ করেই থাকতে ইচ্ছে করে। ইচ্ছে করে ঘুমিয়ে যেতে। যেন আবার একটি সুন্দর সকাল ফিরে পাই সেই অপেক্ষায়।

জ্যেষ্ঠদের কথা শুনেছিলাম। যেন কন্ঠের সুর থেমে আসছে। যেমন করে থেমে গেছে সেই ঢাকের শব্দ, রাখি বন্ধন, প্রভাতে মানুষের ঢল, প্রাণের মেলবন্ধন। সৃষ্টির কেমন নির্ণয়। যেন এক পলকেই সবকিছু শূণ্য হয়ে আসছে। আজও আশা রাখি, যেন একসঙ্গে বাঁচি।