হালদা নদীতে দ্বিতীয় দফায় ডিম ছেড়েছে মা মাছ

দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননক্ষেত্র হালদা নদীতে দ্বিতীয় দফায় ডিম ছেড়েছে মা মাছ। ডিম ছাড়ার খবর পেয়ে আহরণকারীরা উৎসবে নেমেছে।
বুধবার বিকেল সাড়ে ৪টার পর থেকে ডিম ছাড়া শুরু হয়। মাছের আকার অনুযায়ী হালদাপাড়ে ১০০ থেকে ২০০ গ্রাম পর্যন্ত নমুনা ডিম পাওয়া যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন হালদা বিশেষজ্ঞরা।
জানা গেছে, বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে হালদার বিভিন্ন স্থানে মা মাছ নমুনা ডিম ছাড়ে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে নদীতে মা মাছ পুরোদমে ডিম ছেড়েছে। হালদা নদীর রাউজান ও হাটহাজারী অংশের আজিমের ঘাট, অংকুরি ঘোনা, কাগতিয়ার মুখ, গড়দুয়ারা নয়াহাট, রাম দাশ মুন্সির ঘাট, মাছুয়া ঘোনাসহ বিভিন্ন পয়েন্টে ডিম আহরণ চলছে। প্রায় তিন শতাধিক নৌকা নিয়ে ডিম আহরণকারীরা মা মাছের ডিম সংগ্রহ করেছে।
গড়দুয়ারা নয়াহাট এলাকায় ডিম আহরণকারী আবদুর রহিম বলেন, প্রতি নৌকায় তিন থেকে চার বালতি করে ডিম পাওয়া যাচ্ছে।
হালদা গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, অনুকূল পরিবেশ পেলে মা মাছ আবারও ডিম ছাড়বে। সেই অনুকূল পরিবেশ পাওয়ায় মা মাছ ডিম ছেড়ে দিয়েছে। নদীর পানির লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় প্রথম ধাপে মা মাছ আশানুরূপ ডিম ছাড়েনি। প্রথমবার যখন ডিম ছেড়েছে, তখন হালদার পানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ ছিল ৭২ শতাংশ। গতকাল (মঙ্গলবার) ছিল শূন্য দশমিক ৪৬ শতাংশ অর্থাৎ এক শতাংশেরও কম। মা মাছ মিঠা পানি পেয়েছে। গত তিনদিন প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে, গতকাল পাহাড়ি ঢলও নেমেছে।
বিশেষজ্ঞরা জানান, মে মাসের চতুর্থ জো অর্থাৎ পূর্ণিমা তিথিতে হালদায় ডিম ছাড়ে মা মাছ। এবার পূর্ণিমা তিথি ছিল ২৩ থেকে ২৯ মে। এই সময়ে চট্টগ্রাম অঞ্চলে বৃষ্টিপাত হয়নি বললেই চলে। আবার ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে জলোচ্ছ্বাসের কারণে সাগরের লবণাক্ত পানি ঢুকে পড়ে হালদায়। বৃষ্টিপাত না হওয়া এবং ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাওয়ায় মা মাছ ডিম ছাড়েনি। এছাড়া মঙ্গলবার (১ জুন) চট্টগ্রামে ১২৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে, সাথে ছিল বজ্রপাতও। আর সাথে পাহাড়ি ঢল আশা জাগিয়েছে, গত পূর্ণিমা তিথির ডিমশূন্যতা কাটতে যাচ্ছে এবার।
নদী গবেষক ড. ইদ্রিস আলী বলেন, মা মাছের ডিম ছাড়ার জন্য অতি অনুকূল পরিবেশ প্রয়োজন হয়। হালদার পানি প্রতিবেশের ভৌত-রাসায়নিক বিভিন্ন মানদণ্ড এবং প্রতিবেশ-পরিবেশের প্রাকৃতিক অবস্থার দ্বারা মাছের ডিম ছাড়া, ডিম প্রাপ্তি প্রভাবিত হয়। এবার কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় বৃষ্টি হয়নি।
তিনি বলেন, উজানে বৃষ্টির স্বাদু পানির প্রবাহের স্রোত, মেঘের কাঙ্ক্ষিত গর্জন, বাতাসের ঝাপটা প্রবাহ, পানির স্রোত এবং ঘূর্ণি, কার্প মাছের ডিম ছাড়তে প্রভাবিত করে। পানির বিওডি, পানির দ্রবীভূত অক্সিজেন, খরতা, অম্লতা, পিএইচ, টারবিডিটি, বাতাস ও তাপমাত্রা এবং বাতাসের প্রবাহ, অমাবস্যা-পূর্ণিমার প্রাকৃতিক প্রভাব, জোয়ার-ভাটার মিথস্ক্রিয়া, পানিতে দ্রবীভূত রাসায়নিক বিভিন্ন পদার্থের অতি অনুকূল অবস্থা- সবকিছু অতি অনুকূল থাকলে মাছ ডিম ছাড়ে।