৭৫-এর ১৫ আগস্টের শহীদ, সঙ্গীত পাগল আবদুল নঈম খান রিন্টু

নাম তাঁর আব্দুল নঈম খান রিন্টু। ছোট্ট বয়স থেকে সঙ্গীত পাগল রিন্টু গিটারে তালিম শুরু করেন। স্কুল জীবনেই গিটারে দক্ষতা অর্জনে হয়ে যান লিড গিটারিস্ট। বরিশালের প্রথম ব্যান্ড দল ‘ক্রিডেন্স’-এর অনন্য হয়ে ওঠেন রিন্টু। বরিশালে গন্ডি ছাড়িয়ে ঢাকায়ও নানা অনুষ্ঠান করতো এই ব্যা- দল। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবার এবং শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাতের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ দেন এই তরুণ সঙ্গীত পাগল রিন্টু। শোকাবহ আগস্টে নানা আয়োজন হলেও আবদুল নঈম খান রিন্টু ইতিহাসের পৃষ্ঠার নীচেই থেকে যাচ্ছে। কিন্তু তাঁর আত্মজনেরা আজো রিন্টুর কণ্ঠে গাওয়া সেই সমেয় ব্যাপক সাড়া জাগানো গান ‘এই যে দুনিয়া কিসের লাগিয়া, এত যতেœ গড়াইয়াছেন সাইঁ?’ শুনতে পান।
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের অমর একুশে ফেব্রুয়ারি স্মরণে রচিত ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গানের সুরকার আলতাফ মাহমুদ, বাংলার বাঘ শেরেবাংলা এ.কে ফজলুল হকের জন্মস্থানে এক শোকাতুর মা তাঁর ১৭ বছরের সন্তান হারিয়ে প্রতিবছর ছেলের মৃত্যু মাসে সারা দিন জায়নামাজে বসে থাকতেন।
যার বোনেরা হারিয়ে যাওয়া ভাইয়ের স্মৃতি মনে করে এখনও কেঁদে বুক ভাসান। যার অনুপস্থিতি বন্ধুদের এখনও কষ্ট দেয়, ক্ষণজন্মা সেই উদ্দমী সঙ্গীত পাগল মানুষটির আমাদের আব্দুল নঈম খান রিন্টু। মাত্র ১৭ বছর বয়সে জীবন প্রদীপ থেমে যায় তাঁর। যার সাধনা ছিল গিটার বাজানো। সপ্তম শ্রেণিতে পড়াকালীন ভাইবোনেরা তাকে একটি গিটার কিনে দেন। তরুণ নঈম বন্ধুদের সঙ্গে সাইকেল চেপে গিটার শিখতে চলে যেতেন বাদকের কাছে। বন্ধুদের স্মৃতিতে সে স্মৃতি আজও অম্লান হয়ে আছে। সাধনার একপর্যায়ে তিনি হয়ে যান লিড গিটারিস্ট।
৭০ দশকে তখন বরিশাল জেলা শহরে ব্যান্ড গোষ্ঠী তেমন ছিল না। ১৯৭৪ সালের নভেম্বরে কীর্তনখোলা নদীর তীরঘেঁষে বরিশাল টাউন হলে তাদের জন্য বরাদ্দকৃত একটি কক্ষে চার জন বন্ধু মিলে গড়ে তোলেন বরিশাল শহরের প্রথম ব্যান্ড দল ‘ক্রিডেন্স ব্যান্ড’। এই শিল্পীগোষ্ঠীর অন্যতম একজন প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন আব্দুল নঈম খান রিন্টু। তখন রিন্টু মাত্র বরিশাল জিলা স্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিলেন। বন্ধুদের নিয়ে মঞ্চে গানের সঙ্গে গিটার বাজাতেন। স্বপ্ন দেখেন সুন্দর আগামীর। কিন্তু নিষ্ঠুর নিয়তি তাঁর মূল্যবান জীবন কেড়ে নিয়েছে।
১৯৭৫-এর প্রথম দিকে বরিশালের তৎকালীন পৌর চেয়ারম্যান আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী এ.এইচ.এম কামরুজ্জামানের মন্ত্রীত্ব গ্রহণে অভিনন্দন জানানোর লক্ষ্যে বরিশাল অশি^নী কুমার হল চত্বরে নাগরিক সংবর্ধনার আয়োজন করেন। ওই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তৎকালীন ভূমি প্রশাসন, ভূমি সংস্কার, ভূমি রাজস্ব ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ, পানিসম্পদ ও বিদ্যুৎমন্ত্রী আব্দুর রব সেরনিয়াবাত। উক্ত অনুষ্ঠানে ব্যান্ড দল ক্রিডেন্স সঙ্গীত পরিবেশন করে।
ওই গানে মুগ্ধ হয়ে সংবর্ধিত মন্ত্রী কামরুজ্জামান বলেন, ঢাকায় একদিন তাঁর বাসায় গিয়ে গান শোনাতে। তারুণ্যে ভরপুর ১০ সদস্যবিশিষ্ট গানের দলটি তাঁর আমন্ত্রণে ১৯৭৫ সালের ১১ আগস্ট বরিশাল থেকে ঢাকা যান। ঢাকাগামী অস্ট্রিচ স্টিমারে চড়ে বন্ধুদের সঙ্গে রিন্টুও ঢাকা আসেন। সঙ্গে ছিলেন তাঁর বোন। ঢাকায় নেমে তাঁর বোন সুলতানা নাদিরা জলি (বর্তমানে সংসদ সদস্য) ঢাকার আলুবাজারের বাসায় থেকে যান। তাকে থাকতে বলা হলে তিনি বলেন, তাঁর বন্ধুদের সঙ্গে থাকবেন।
১৪ আগস্ট বিকালে বোনের বাসায় এসে কিছু টাকা চেয়েছিলেন, বন্ধুদের নিয়ে একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করবেন তাই। বোন কিছু টাকাও দিয়েছিলেন তাকে। এই ছিল বোনের সঙ্গে তাঁর শেষ দেখা।
আব্দুল নঈম খান রিন্টুর স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তাঁর বন্ধু খ.ম জিল্লুর রহমান বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৪ আগস্ট ঢাকার মিন্টো রোডে শিল্পমন্ত্রী এ.এইচ.এম কামরুজ্জামানের বাসায় সঙ্গীত পরিবেশন করে রাত ১১টার দিকে আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের বাসায় অবস্থান করেন তারা। সেখানে এসে ড্রইংরুমে শুয়ে পড়েন সবাই। ফজরের আজানের সময় প্রচ- গোলাগুলির শব্দে তাদের ঘুম ভেঙে যায়। এরপর দেখতে পান লম্বা চওড়া কালো পোশাকে অস্ত্রহাতে অনেক সৈন্য বন্দুক তাক করে আছে। তারা আত্মরক্ষার জন্য প্রথমে দোতলার সিঁড়ির নিচে গার্ড হাউজে আশ্রয় নেন। কিন্তু পেছনের কক্ষ থেকে রিন্টু এবং তাঁর বন্ধু তপন মাহমুদ বের হয়ে পালাতে চাইলে আর্মিরা তাদের ধরে আনেন। ততক্ষণে আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, বেবি সেরনিয়াবাত ড্রইংরুমে দাঁড়ানো ছিলেন, তাদের পাশে গিয়ে দাঁড়ালেন আব্দুল নঈম খান রিন্টু। ভেবেছিলেন তাদের পাশে দাঁড়ালে হয়তো আর্মিরা তাকে মারবেন না। কিন্তু বিধিবাম। আর্মিরা প্রথম চার জনকে এলোপাতাড়ি ব্রাশফায়ার করে। তারা হলেন আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, বেবি সেরনিয়াবাত, সুকান্ত আব্দুল্লাহ ও আব্দুল নঈম খান রিন্টু।
রিন্টুসহ অন্য সদস্যরাও আর্মিদের গুলিতে আহত হন। তাঁদের চোখের সামনে দেখেছেন মায়ের সামনে শিশু সন্তান সুকান্ত আব্দুল্লাহর মৃত্যুর ছটফটানি। যে বেদনাতুর স্মৃতি তারা এখনও ভুলতে পারেননি। রমনা থানার পুলিশ বাহিনীর সদস্যবৃন্দ এসে পুলিশ ভ্যানে করে ঢাকা মেডিকেল কলেজের পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডে আহতদের নিয়ে যান। আহত রিন্টু মৃত্যুর আগমুহূর্তে এক ফোঁটা পানি পান করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু পাশে শুয়ে থাকা তাঁর বন্ধু খ.ম. জিল্লুর রহমানের শরীরে ঘাতকদের গুলির জখম থাকায় তিনি ছিলেন শক্তিহীন। তাঁর চোখের সামনে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন আব্দুল নঈম খান রিন্টু।
ভাইবোনেরা তখনও জানতে পারেননি রিন্টু মারা গেছে। তখন ঢাকায় কারফিউ জারি করা হয়। ঘর থেকে বের হওয়ার সুযোগ নেই। রেডিও বাংলাদেশ বেতার থেকে প্রচারিত দেশের সংবাদ শুনতে পান রিন্টুর বড় বোন, সেই সংবাদ ছিল ‘আমি মেজর ডালিম, আমি শেখ মুজিবকে মেরে ফেলেছি, বাংলাদেশে অভ্যুত্থান হয়েছে’। তখনও তারা জানতেন না বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তাঁর আদরের ভাইও হারিয়ে গেছে।
ওদিকে আহত ক্রিডেন্স ব্যান্ড দলের সদস্যরা দীর্ঘ ২৭ দিন পর হাসপাতালে থেকে ছাড়পত্র পেয়ে বাসায় গিয়ে জানতে পারেন আর্মিরা তার বন্ধুর লাশ কোনও রকমে মাটিচাপা দেয়। পরে তার পরিবারের হস্তক্ষেপে কবর থেকে তাঁর লাশ তুলে কফিনে করে লঞ্চে বরিশালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরবর্তীকালে বরিশালের মুসলিম কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়। যদিও ঢাকার বনানী কবরস্থানে ১৫ আগস্টের শহীদের নামের তালিকার সঙ্গে তার নামফলকটি রয়েছে। এভাবে নিঃশেষ হয়ে যায় একটি প্রতিভা। প্রয়াত হন একজন উদীয়মান শিল্পী।
ক্রিডেন্স ব্যান্ড দলের বাদ্যযন্ত্রগুলো তখন আর্মিরা নিয়ে গিয়েছিল। পরবর্তীকালে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে দলটিকে ফোন দিলে দলের একজন সদস্য কয়েকটি বাদ্যযন্ত্র ফিরিয়ে নিয়ে আসেন।
‘নঈম’ শব্দের অর্থ ‘সুবোধ’ এবং ‘রিন্টু’ শব্দের অর্থ ‘সক্রিয়’। সত্যিকার অর্থে তিনি ভীষণ সুবোধ ছিলেন। তাঁর পরিবারের কাছে তা-ই শোনা যায়। বন্ধুদের কাছে ছিলেন একজন সক্রিয় শিল্পী হিসেবে।
ক্ষণজন্মা এই মানুষটি জন্মগ্রহণ করেন বরিশালের বগুড়া রোডের নিজ বাড়িতে ১৯৫৭ সালের ১ ডিসেম্বর। বাবার নাম আব্দুল খালেক খাঁন। মাতার নাম দেল মনোয়ারা বেগম। তারা ছিলেন চার ভাই দুই বোন। বড় বোন তাকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, রিন্টু যখন স্কুলে পড়তেন তখন স্কুলের টিফিন বাসায় এনে বোনকে হাতে দিয়ে বলতেন, আপা তোমার জন্য এনেছি। এ স্মৃতি মনে করে বড় বোন এখনও কাঁদেন।
পাসপোর্ট করার জন্য একটি ছবি তুলেছিলেন রিন্টু, সে ছবিটি আঁকড়ে ধরে আছেন তিনি। ভাইকে হারিয়ে তিন ভাই স্তব্ধ। তিন ভাই নীরবে নিঃশব্দে বয়ে বেড়ান ভাই হারানোর যন্ত্রণা। তিনি বরিশাল জিলা স্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিলেন। মৃত্যু পর তাঁর পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়। এমন একটা তরতাজা প্রাণ হারিয়ে গিয়েছে সেদিনের ১৫ আগস্টের রক্তঝরা দিনে। উদীয়মান এই শিল্পী হতে পারতেন দেশবরেণ্য একজন লিড গিটারিস্ট। অথচ এমন একটি তরতাজা ফুলের কলি ফুটতেই ঝরে গেলো। বন্ধুদের সঙ্গে দলবেঁধে যে গানটি গাইতেন সেটি ছিল ‘এই যে দুনিয়া কিসের লাগিয়া, এত যতেœ গড়াইয়াছেন সাইঁ?’। গাইতেন ক্রিডেন্সে দলের মূল গান ‘ধান, নদী আর খাল/এই তিনে বরিশাল।’ তখনকার সময় এই গানটি বরিশাল অঞ্চলে ভীষণ জনপ্রিয় ছিল। বন্ধুমহলে এখনও তিনি সেই চিরতরুণ রয়ে গিয়েছেন।
প্রতিবছর আগস্ট মাসের ১৫ তারিখে বন্ধুরা তাঁর কবরে ফুলের শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। তাঁর স্মরণে প্রতিবছর তাঁর মৃদ্যুদিবসে বন্ধুমহল কাঙালিভোজ, রক্তদান কর্মসূচি আয়োজন করেন। এখনও বন্ধুরা তাঁর ছবি দেখে চোখের জল ফেলেন। আঁকড়ে ধরে আছেন তাঁর সঙ্গে ঘটে যাওয়া শত শত স্মৃতি। পৃথিবীতে স্বজন হারানোর মতো বেদনা আর নেই। রিন্টুর জন্য স্বজনেরা যেমন চোখের জল ফেলেন, তেমনি বছরের পর বছর চোখের জল ফেলছেন তাঁর বন্ধুরা। এটা একজন মানুষ হিসেবে তাঁর জন্য পরম প্রাপ্তি। আব্দুল নইম খান রিন্টুরা পৃথিবীতে একবারই আসেন। এরপর পদচিহ্ন রেখে চলে যান দূর নীলিমায়।
ক্ষণজন্মা কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য লিখেছেন, ‘অবশেষে সব কাজ সেরে /আমার দেহের রক্তে নতুন শিশুকে /করে যাব আশীর্বাদ/ তারপর হবো ইতিহাস’। ঠিক তেমনি ক্ষণজন্মা আব্দুল নঈম খান রিন্টুর দেহের রক্ত ঝরেছে, কলঙ্কিত হয়েছে তার ঘাতকেরা। অতঃপর তিনি হয়েছেন ইতিহাস। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট একটি শোকের ইতিহাস। সে ইতিহাসে আব্দুল নঈম খান রিন্টু বেঁচে থাকবেন একজন টগবগে তরুণ হিসেবে।
কবি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ রচিত ‘মাগো ওরা বলে’ কবিতাটি মিলে যায় আব্দুল নঈম খান রিন্টুর মায়ের আর্তনাদের সঙ্গে ‘খোকা তুই কবে আসবি’? হয়তো যতদিন তিনি বেঁচেছিলেন, আনমনে, অকপটে ছেলের ফিরে আসার প্রমোদ গুনেছেন। এই তো বুঝি ছেলে ফিরে এলো। সেই অপেক্ষা করে হয়তো মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মা সন্তানের পছন্দ খাবার মুখে তোলেননি। সন্তান হারানোর ব্যথা কতটা বইতে হয়েছে তা হয়তো তিনি জানেন। যাদের সন্তান হারায় তারাই অনুভব করতে পারেন। ওদিকে ভাইবোনেরা বছরের পর বছর রিন্টুর পছন্দের ফল পাকা আমের স্বাদ নেননি। হারিয়ে যাওয়া ভাইয়ের প্রতি ভাইবোনের এই অনন্ত অসীম ভালোবাসা ভীষণ অনুসরণীয়। সেদিন ঘাতকের নৃশংসতায় একজন রিন্টু হারায়নি। হারিয়েছে পরিবারের স্নেহভাজন আদরের ভাই। বন্ধুমহলের লিড গিটারিস্ট আব্দুল নঈম খান রিন্টু। তিনি বেঁচে থাকবেন যতদিন লেখা হবে শোকাবহ আগস্টের ইতিহাস।
২৪ জানুয়ারি, ১৯৭১ সংগীত শিল্পীদের সংবর্ধনার জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, ‘প্রয়োজনবোধে শিল্পীদের বিপ্লবের গান গাইতে হবে।’ বেঁচে থাকলে রিন্টু হয়তো দেশের জন্য, বিপ্লবের জন্য গানের সুর তুলতেন। অকালে ঝরে যাওয়া আব্দুল নঈম খান রিন্টুর জন্য রইলো এক আকাশ সমান প্রার্থনা। তাঁর প্রতিষ্ঠিত ক্রিডেন্স ব্যান্ড দলটি এখনও আছে। সেখানে হয়তো কেউ লিড গিটারিস্ট আছেন। শুধু নেই আব্দুল নঈম খান রিন্টু। তিনি বেঁচে থাকবেন ক্রিডেন্স ব্যান্ডের গানের মূর্ছনায়। প্রার্থনা ক্রিডেন্স ব্যান্ডের সবার মঙ্গলের জন্য। রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশের ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতার মতো হয়তো বা আব্দুল নঈম খান রিন্টুও দূর আকাশ থেকে বলেন, ‘রূপসার ঘোলা জলে হয়তো কিশোর এক শাদা ছেঁড়া পালে / ডিঙ্গা বায়; রাঙা মেঘ সাঁতরায়ে/ অন্ধকারে আসিতেছে নীড়ে/ দেখিবে ধবল বক; আমারেই পাবে তুমি ইহাদের ভীড়ে’। বন্ধুবৎসল এই মানুষটিকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি সেদিনের সেই শোকাবহ দিনের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ সব শহীদদের।
পুনশ্চ: ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের শহীদ আব্দুল নঈম খান রিন্টু সম্পর্কে গুগল, উইকিপিডিয়া এবং অন্য কোনও ওয়েবসাইটে লিখিত কোনও প্রকাশিত প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি। স্মৃতিকথাটি সাক্ষাৎকারভিত্তিক। তাঁর বড় বোন মাননীয় সংসদ সদস্য সুলতানা নাদিরা, ক্রিডেন্স ব্যান্ডের সদস্য ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টে আহত আব্দুল নঈম খান রিন্টুর মৃত্যুর প্রত্যক্ষদর্শী বন্ধু খ. ম. জিল্লুর রহমান এবং রফিকুল ইসলাম থেকে জানা। তাঁদের সহযোগিতা ছাড়া এমন একজন উদীয়মান লিড গিটারিস্টকে ইতিহাসের বাঁকে তুলে আনা কষ্টকর হতো। আমি কৃতজ্ঞ সাক্ষাৎকার প্রদানকারীদের কাছে।
লেখক: ড. জেবউননেছা, অধ্যাপক, লোকপ্রশাসন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।