ঈদ হোক সবার মিলন মেলা

ঈদ হোক সবার মিলন মেলা

আজ পবিত্র ঈদ-উল-আযহা। মানুষের ভেতরের পশুত্বকে নিয়ন্ত্রণ করার অঙ্গীরের আরেক নাম হচ্ছে ঈদ-উল-আযহা বা কোরবানী। জীবনের বড় সম্পদকে ত্যাগ করার মানসিকতা হচ্ছে কোরবানী। কোরবানীর ঈদ মানুষের ত্যাগকে আরো ভাস্বর করুক। বরিশালসহ বাংলাদেশ এবং গোটা পৃথিবীর মানুষদের পবিত্র ঈদ-উল-আযহা শুভেচ্ছা।

ধনী-গরীব, চাষী, মুটে, মজুর, কুলি সবার জন্য ঈদ আনন্দ বয়ে আনুক। ঈদ সবার মিলন মেলায় রূপ নিক। সব ভেদাভেদ ভুলে আমরা ঈদের দিন এক কাতারে ঈদের নামাজ পড়তে দাঁড়াবো। সেই কাতার যেন কোন কারণে ভেঙে না যায়। এক সারিতে দাঁড়িয়ে যেন আমরা বলতে পারি ‘আর নয় হিংসা, আর নয় হানাহানি, আর নয় মানুষ হত্যা, পশু জবাইয়ের মাধ্যমে আমদের ভেতরের পশুটাকেও যেন যবাই দিতে পারি।’

ঈদ-উল-আযহা কিংবা আমদের কোরবানী সব মানুষের জন্য সমানভাবে হয়ে ওঠে না। যারা দরিদ্রসীমার নীচে বাস করেন তাদের কাছে কোরবানী হচ্ছে আহার না করে দিন কাটানো। দিনমজুর ও প্রন্তিক মানুষরা কোরবানীর কথা চিন্তাও করতে পারেন না। আর ধনীদের কোরবানী হচ্ছে এক ধরণের আভিজাত্য। ধনী আর চাষীর কোরবানীর মধ্যে এখনো বিস্তর ফারাক থাকছে। আমাদের কৃষক পশুর হাটে গিয়ে হা হয়ে তাকিয়ে থাকে। পশুর মূল্যের সঙ্গে তার সামর্থের কোন মিল খুঁজে পান না তারা। অথচ আমরা কেবল আমাদের আনন্দ নিয়েই ব্যস্ত থাকছি। কোরবানী এখন প্রতিযোগিতার বাজার হয়ে গেছে।

এখনো কৃষক ধানের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না। ধানের দাম না পাওয়ায় কৃষক মনের দুঃখে ধান ক্ষেতে আগুন দিয়ে দিচ্ছে। যাদের ধান বিক্রি করার নিশ্চয়তা নেই। সেই কৃষক কোরবানীর আনন্দ করবে কি দিয়ে? যে কৃষক মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ফসল উৎপাদন করলো, যারা জীবনকেই কোরবানী দিয়ে চলে প্রতিদিন। তাদের ঘরে কোরবানীর আনন্দ ফিকে হয়েই থাকে। কোন মতে তারা কোরবানীর কয়েকটা দিন পার করেন। আর মনে মনে প্রার্থনা করেন, হে রাব্বুল আল-আমিন তুমি ঈদ দিয়ো না, তুমি কোরবানী দিয়ো না। এমন মানুষদের সামেন আমরা দামি দামি পশু কিনে স্বগৌরবে হেঁটে চলি। এমন কোরবানী কাম্য নয়।

আজ মানুষের পশু কোরবানী দেওয়ার নামে প্রতিযোগিতা দেখে পশুরাও লজ্জা পাচ্ছে। কিন্তু আমাদের লজ্জা হচ্ছে না। পশু বাজারে নিয়ে বিক্রি করার জন্য অমানবিক আচরণ করছি পশুর সঙ্গে। ট্রাকে ঝুলিয়ে গরু বাজারে নিয় যাওয়া কিংবা পাহাড়ের চূড়া থেকে গরু সমতলে ফেলে দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটছে। পশু কোরবানী দিতে গিয়ে আমরা যেন আরেক পশুর মত আচরণ করছি। পশু কোরবানী দিতে গিয়ে ‘আশরাফুল মকলুকাত’ শ্রেষ্ঠ জীব মানুষ জানোয়ারের মতো আচরণ করছে। বাজারে গরু-ছাগল কিংবা দুম্বা, উট কেনার প্রতিযোগিতা বন্ধ হচ্ছে না।

একদিকে কোরবানীর পশু কেনা নিয়ে ধনীদের প্রতিযোগিতা অন্যদিকে চোখের সামনে সন্তানের ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে থাকার দৃশ আমদের ব্যথিত করছে। এমন দৃশ্য আমরা দেখতে চাই না। কোরবানীর ঈদ আমদের মধ্যে ধনী-দরিদ্রের সীমানা বড় করে দেখিয়ে দিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। এই রেখাচিত্র বন্ধ করতে না পারলে কোরবানীর মূল উদ্দেশ্য সফল হবে না।

এইভাবে কোরবানী দিয়ে কি মানুষের ভেতরের পশুত্বকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব? যেহেতু কোরবানী নিয়ে প্রতিযোগিতা বন্ধ হচ্ছে না। তাই মানুষের পশুত্ব বেড়ে যাচ্ছে। ভেতরের পশুকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। ফলে বাড়ছে হিংসা, হানাহানি, মারামরি। সমাজে বাড়ছে অশান্তি।

কোরবানীর সঠিক মর্ম অনুধাবন করে কোরবানীর মর্যাদা রক্ষা করতে হবে। লোক দেখানো কোরবানী দেওয়া বন্ধা হওয়া দরকার। এবারের কোরবানী আমাদের সেই শিক্ষা দিক এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

আসুন, আমরা সবাই মিলে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেই। আমার আপনার যা আছে সেটা নিয়ে সবাই যেন এক হয়ে এক কাতারে কাতারবন্দি হতে পারি। তাহলে আমাদের ঈদ আনন্দ স্বার্থক হবে। আমরা সেই প্রত্যাশায় থাকলাম।