নির্বাচনে অংশগ্রহণের ইচ্ছা বিএনপির নেই: ফখরুল

বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণের ইচ্ছা বিএনপির নেই বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশন এ সরকারের আজ্ঞাবহ। এ কমিশনের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। এ কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণের ইচ্ছা আর বিএনপির নেই।
তিনি বলেন, বিএনপি গণতন্ত্র হত্যা করেনি, হত্যা করেছে আওয়ামী লীগ। জিয়াউর রহমান বহুদলীয় রাজনীতির সুযোগ তৈরির মাধ্যমে গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছিলেন।
গতকাল সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) আয়োজিত জিয়াউর রহমানের ৪০তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব এসব বলেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এ সরকার জনগণের সরকার না। তারা জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে ক্ষমতায় টিকে আছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পারত না। এ সরকার মিডিয়া, বিচার ব্যবস্থা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ম্যানেজ করেই ক্ষমতায় এসেছে।
এ সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে চুক্তি হয়েছিল। এই সরকার যদি শাহেদ করিমকে গ্রেপ্তার করতে পারে তবে স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে কেন বিচারের আওতায় আনলো না?’
তিনি বলেন, ‘করোনা মহামারি মোকাবিলায় এ সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ। জনগণকে টিকা দেওয়ার বিষয়ে সরকারের কোনো স্বদিচ্ছাই নেই। তারা ক্ষমতায় বসে আছে শুধু দুর্নীতি করে কানাডায় বাড়ি করতে’।
বর্তমান সরকারকে হঠাতে তরুণদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এ ফ্যাসিস্ট সরকারকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করতে মুখ্য ভূমিকা পালন করতে পারে তরুণরাই। কারণ তরুণরা চাইলে যে কোনো বাধা অতিক্রম করতে পারে’।
জিয়াউর রহমানের অবদান স্মরণ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘যখন কেউ সাহস করেনি তখন মেজর জিয়া স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে এ জাতিকে স্বাধীনতার স্বাদ পাইয়ে দিয়েছিলেন। আবার ৭৫ এ দেশ যখন দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনায় ডুবে গিয়েছিল তখন আবার ত্রাণকর্তার ভূমিকায় ক্ষমতায় এসেছিলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। এ সরকার এসব সত্যকে নতুন প্রজন্মকে জানতে দিতে চায় না, এ জন্য তারা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিল করতে চায়’।
এসব বিষয়ে জনগণকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া আজ মৃত্যুশয্যায়। অথচ এই ফ্যাসিস্ট সরকার তার চিকিৎসার জন্য কোনো ব্যবস্থাই নিচ্ছে না। অবিলম্বে বেগম জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে। বেগম জিয়ার কিছু হলে এর দায় এই সরকারকেই নিতে হবে’।
ড্যাব সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুণ আল রশিদ বলেন, ‘আমরা আশা করেছিলাম বর্তমান স্বাস্থ্য খাতের দুরাবস্থা কাটাতে সরকার স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ বাড়াবে। কিন্তু সরকারের এ দিকে কোনো নজর নেই। সব নাগরিককে ভ্যাকসিনের আওতায় নিয়ে আসতে না পারলে ঢাকার পরিস্থিতি দিল্লির চেয়েও খারাপ হবে’।
আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন ডা. মাজারুল ইসলাম দোলন, ডা. মো. সিরাজুল ইসলাম, ডা. আবু হেনা ও ডা. আবুল হাসান।
৪ মাসে ১০০ কিলোমিটার হেঁটে ভারত থেকে বাংলাদেশে বাঘ
একেই বলে ‘বাঘের বাচ্চা’-চার মাসে তিনটি দ্বীপ, একাধিক নদী, বড় বড় জঙ্গল পার হয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে ফিরে এসেছে একটি পুরুষ রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার!
গত বছরের শেষ দিকে পশ্চিমবঙ্গে সুন্দরবনের রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের গতিবিধি জানতে বাঘটির গলায় রেডিও কলার পরানো হয়। সেটি চার মাস ১৫ দিন বাদে ১০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে এখন বাংলাদেশে অবস্থান করছে।
বাঘটির গলায় থাকা রেডিও কলার থেকে মে মাসের ১১ তারিখ পর্যন্ত সংকেত পান ভারতের বন দপ্তরের কর্মকর্তারা। এরপর কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। বাঘটির নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে কয়েক দিন ধরে ভারতীয় গণমাধ্যমে বেশ লেখালেখি হয়েছে।
অনলাইন ফোরাম রেডিটে বাঘটির বিষয়ে আলোচনা করতে দেখা যায় ভারতের বনবিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ভিকে (বিনোদ কুমার) যাদবকে। তিনি সেখানে জানান, বাঘটি বাংলাদেশে চলে গেছে।
পরে আরও তথ্য ঘাটতে গিয়ে টাইমস অব ইন্ডিয়ায় তার একটি সাক্ষাৎকার পাওয়া গেছে। সেখানে তিনি বিস্তারিত উল্লেখ করেছেন।
যাদব জানান, গত বছর ২৭ ডিসেম্বর বাঘটির গলায় রেডিও-কলার পরানো হয়। পুরুষ লিঙ্গের এই বাঘ মূলত বাংলাদেশ অঞ্চলেই থাকত। বশিরহাট রেঞ্জের ঠিক বিপরীত দিকের হরিখালী এলাকা থেকে প্রাণীটিকে ধরে নিয়ে যায় ভারতীয় কর্মকর্তারা।
গত বছর সুন্দরবনে মাছ, কাঁকড়া ধরতে ধাওয়া কয়েকজন মৎস্যজীবী অতর্কিতভাবে বাঘের মুখে পড়েন। কারও কারও প্রাণও যায়। এরপর সুন্দরবনের বাঘের গতিবিধি জানতে বাঘের গলায় রেডিও কলার পরানোর উদ্যোগ নেয় ভারতের বন দপ্তর।
হরিখালি জঙ্গলে লোহার খাঁচায় একটি ছাগল রেখে বাঘ ধরার ফাঁদ পাতে বন দপ্তর। তাতেই আটকা পড়ে পুরুষ রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার।
খবর পেয়ে বিনোদসহ কয়েক জন কর্মকর্তা চলে আসেন। আটকা বাঘটিকে অজ্ঞান করে রেডিও কলার পরান। এরপর ৫ কেজি মুরগির মাংস খাইয়ে হরিখালি জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া হয়। মার্কিন প্রযুক্তিতে তৈরি রেডিও কলারটি সরবরাহ করে ভারতের বন দপ্তর ও ডব্লিউডব্লিউএফ ইন্ডিয়া।
ঘরের ‘ছেলের’ ঘরে ফেরা: কলার পরানো অবস্থায় বাঘটি কয়েক দিন ভারতের জঙ্গলে ঘোরাফেরা করে। পরে সে তালপট্টি দ্বীপের দিকে যাত্রা শুরু করে। ছোট হরিখালি, বড় হরিখালি এমনকি রাইমঙ্গলও পাড়ি দিয়েছে সে। সর্বশেষ তার অবস্থান সম্পর্কে ১১ মে তথ্য পায় ভারত, তখন তার অবস্থান ছিল বাংলাদেশের তালপট্টি দ্বীপে।
এর আগে ২০০৭ থেকে ২০০৮ ও ২০১৬ সালে একাধিক বাঘকে এই রেডিও কলার পরানো হয়েছিল। কিন্তু সুন্দরবনের নোনা পানির কারণে সেটি বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। বাঘেরা নদী ও খালবিলে সাঁতার কাটার কারণে তা নষ্ট হয়ে যায়।
বাঘ কোন ধরনের জঙ্গলে থাকতে ভালোবাসে, কতক্ষণ ঘোরাফেরা করে, কতক্ষণ সাঁতার কেটে নদী পার হয়, কেন লোকালয়ে আসে-সেসব জানার উদ্দেশ্যে এটি পরানো হয়।
সরাসরি উপগ্রহের মাধ্যমে বন দপ্তরের কাছে সংকেত যায় এই রেডিও কলার থেকে।
বাঘের মৃত্যু হলেও রেডিও কলার থেকে বোঝা যায়। বিশেষ এক ধরনের সেনসরের মাধ্যমে মৃত্যুর বিষয়ে তথ্য আসে। ১১ মে পর্যন্ত এই ধরনের সংকেত না আসায় ভারতীয় কর্মকর্তারা বলছেন, বাঘটি বেঁচেই আছে। মারা গেলে আগেই মারা যেত।
বিনোদ কুমার যাদবের ধারণা, ‘হয়তো কলারটি গলা থেকে পড়ে গেছে। অথবা নষ্ট হয়ে গেছে।’