রাশিয়ার মূর্তিমান আতঙ্ক চেচেন বীর শামিল বাসায়েভ ও আজকের পুতিন

রাশিয়ার মূর্তিমান আতঙ্ক চেচেন বীর শামিল বাসায়েভ ও আজকের পুতিন

সমসাময়িক মুসলিম বিশ্বের ইতিহাসে চেচনিয়ার মুসলমানদের স্বাধীনতা আন্দোলন এবং রাশিয়ার পক্ষ থেকে তাদের দমন-পীড়নের ইতিহাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল। এই সংগ্রামের দীর্ঘ ইতিহাস বর্তমান প্রজন্মের অনেকের কাছেই অজানা।

সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের একটি মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চল হলো চেচনিয়া। ১৯৯১ সালের ২৫ ডিসেম্বর যখন সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে ১৫টি স্বাধীন প্রজাতন্ত্রে বিভক্ত হয়, তখন চেচনিয়া স্বাধীনতা ঘোষণা দেয়। এটি ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের বাইরে একটি স্বায়ত্ত্বশাসিত অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত। চেচনিয়ার অধিকাংশ অধিবাসী তুর্কি বংশোদ্ভূত মুসলমান, যারা দীর্ঘসময় ধরে রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে নিজেদের স্বাধীনতা সংগ্রামে অবিচল ছিলেন।

ইতিহাসে জানা যায়, চেচনিয়া কখনোই রাশিয়ার অংশ ছিল না। ঊনবিংশ শতাব্দীতে জোরপূর্বক রুশ সাম্রাজ্যের অধীন করা হয় চেচনিয়াকে। দীর্ঘ সময় ধরে রুশ বাহিনী চেচনিয়ার উপর হামলা চালিয়েছে, কিন্তু চেচেন মুসলমানরা সবসময় রুশ শাসনের বিরুদ্ধে এক আন্দোলনে ছিলেন আপোসহীন।

১৯৯১ সালে সোভিয়েত কমিউনিস্ট সরকারের পতনের পর চেচেনরা স্বাধীনতার ডাক দেন। ১৯৯৪ সালে রুশ বাহিনী চেচনিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। প্রথম চেচেন যুদ্ধটি ছিল ভয়াবহ, যেখানে রাশিয়ার ব্যাপক গণহত্যা ঘটানো হয়। শামিল বাসায়েভ এবং আরব যোদ্ধা সামির সালেহ আবদুল্লাহ আল সুয়াইল্লিম (ইবনুল খাত্তাব) এর নেতৃত্বে চেচেনরা রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তোলে।

১৯৯৬ সালে চেচেন যোদ্ধারা রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে জোরালোভাবে যুদ্ধ শুরু করে এবং গ্রোজনির উপর আরোপিত অবরোধ তুলে নিতে সক্ষম হয়। শামিল বাসায়েভের নেতৃত্বে চেচেনরা যেসব কৌশল অবলম্বন করেন তা রুশ বাহিনীর জন্য চরম বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

রুশ বাহিনী প্রথমবার শামিল বাসায়েভকে হত্যার জন্য ১৯৯৫ সালে একটি অপারেশন চালায়, তবে আল্লাহ্ তাকে বাঁচিয়ে রাখেন। এরপর ২০০৪ সালে একটি নতুন হামলায় শামিল বাসায়েভ নিহত হন।

২০০৭ সালে তার ছেলে রমজান কাদিরভ চেচনিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। রমজান কাদিরভ পরবর্তীকালে চেচনিয়াকে রুশ ফেডারেশনের অন্তর্ভুক্ত করে শান্তিপূর্ণ ভাবে সরকার পরিচালনা করছেন।

চেচনিয়ার এই সংগ্রাম ইতিহাসের অংশ হলেও, রাশিয়ার কঠোর নিয়ন্ত্রণ ও দমন-পীড়নের মধ্যে স্বাধীনতা সংগ্রামের ঐতিহাসিক দিকটি আজও পূর্ণরূপে দমন করা যায়নি।