অভিনেতা মুক্তিযোদ্ধা দিলু আর নেই

অভিনেতা মুক্তিযোদ্ধা দিলু আর নেই

বিশিষ্ট অভিনেতা, নাট্য পরিচালক মুক্তিযোদ্ধা মজিবুর রহমান দিলু মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।

মঙ্গলবার সকাল ৬টা ৩৫ মিনিটে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

দিলুর বড় ভাই নাট্যকার আতাউর রহমান ফেইসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে বিষয়টি জানান।

তিনি লিখেন, ‘আমার ছোট ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা, কীর্তিমান মঞ্চ ও টেলিভিশন অভিনেতা মজিবুর রহমান দিলু নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে আজ সকাল ৬টা ৩৫ মিনিটে এই পৃথিবীর মায়া ছেড়ে অসীমের যাত্রী হয়েছেন।’

‘সে  জীবনযুদ্ধে যেমন ছিল এক পরাক্রান্ত সৈনিক, তেমনি ছিল এক বর্ণিল জীবনের অধিকারী। তার আত্মার চির শান্তি কামনাই দেশবাসীদের কাছে আমাদের প্রত্যাশা’ যোগ করেন আতাউর রহমান।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, করোনা পরীক্ষায় নেগেটিভ আসলেও দিলুর ফুসফুসে সংক্রমণ ৭০ ভাগ ছাড়িয়ে যায়। একই সঙ্গে হার্টবিট কমে যায়। তাকে রাখায় হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ)।

চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, পরীক্ষায় নেগেটিভ আসলেও এসব করোনা আক্রান্তের উপসর্গ এবং সাইটোকাইন স্ট্রোম বয়ে যায় দিলুর শরীরে।

বিটিভিতে প্রচারিত শহীদুল্লাহ কায়সারের ‘সংশপ্তক’ নাটকে বড় মালু চরিত্রে অভিনয় করে সবচেয়ে বেশি পরিচিতি পেয়েছিলেন মজিবুর রহমান দিলু। অনেকে তাকে বড় মালু নামেই চেনেন।

খ্যাতিমান এই অভিনেতার উল্লেখযোগ্য মঞ্চনাটক হচ্ছে- ‘আমি গাধা বলছি’, ‘নানা রঙ্গের দিনগুলি’, ‘জনতার রঙ্গশালা’, ‘নীল পানিয়া’, ‘আরেক ফাল্গুন’, ‘ওমা কী তামাশা’ প্রভৃতি।

এ ছাড়া বাংলাদেশ টেলিভিশনের জনপ্রিয় নাটক ‘তথাপি’, ‘সময় অসময়’ ও ‘সংশপ্তক’-এ অভিনয়ের মধ্য দিয়ে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন দিলু।

মুক্তিযোদ্ধা এই অভিনেতা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ‘ঢাকার ড্রামা’ নামে একটি নাট্যগোষ্ঠী।

স্কুলে পড়ার সময়ই স্বাধিকার আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিলেন দিলু। ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানে যে মিছিলে গুলিতে আসাদ শহীদ হয়েছিলেন সেই মিছিলে ছিলেন তিনিও।

দিলু ১৯৭০ সালে মেট্রিক পরীক্ষা দিয়েই যুদ্ধে চলে যান। ভারত থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে বাংলাদেশে ফিরে ঢাকায় সরাসরি রণাঙ্গনে ছিলেন তিনি। নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু ছিলেন সেকেন্ড ইন কমান্ড। সেসময় তিনি ঢাকায় কয়েকটি দুঃসাহসিক অভিযান পরিচালনা করেছিলেন।

গুলেন বারী সিনড্রোমে (জিবিএস) আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন বেকার ছিলেন দিলু। দুই ছেলে এক মেয়ে নিয়ে তাদের সংসার চলছিল কোনোমতে। মৃত্যুর আগে নিজ খরচে চিকিৎসা চালানোর সামর্থ্যও ছিল না রণাঙ্গনের এই মুক্তিযোদ্ধার।


ভোরের আলো/ভিঅ/১৯/০১/২০২১