কাজী নজরুল ইসলাম এর কবিতায় ক্ষুব্ধতা

কাজী নজরুল ইসলাম এর কবিতায় ক্ষুব্ধতা

অপূর্ব গৌতম:


আরতির থালা আর তসবির মালা
আসিবে না কোন কাজে
মানুষের সেবা মানুষ করিবে
আর সব কিছু বাজে
যেথায় মানবতার পরাজয়
সেথায় কাজ হইবে না তর নামাজ পূজায়
প্রভূ চাহিয়া রহিয়াছে
যাহারা মানবতার ধ্বংস না করিয়া রোধ
বেআক্কেল এর মত প্রার্থনায় মত্ত সে মহা নির্বোধ

বর্তমান সময়ে ধর্মীয় গোড়ামী এবং কুসংস্কার অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে বলে মনে হয়। তারপরও নজরুলের মতো এতো বীরত্ব নিয়ে ধর্মীয় কুসংস্কারের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে কবিতা লেখার বুকের পাটা কারো আছে কি ? অনেক কবি সাহিত্যিক আছেন, যাদের লিখতে মন চায় কিন্তু লিখতে পারেন না। কারণ ? কারণ তারা ধর্ম ব্যবসায়ী এবং রাষ্ট্র পরিচালনাকারীদের ভয়ে সন্ত্রস্ত। অনেক কবির জীবন হুমকির মুখে। অনেক কবিকেই তার পরিবার এবং স্বজনরা পেছন থেকে টেনে ধরেন। বারণ করেন ধর্ম নিয়ে লেখালেখি করতে। তারা মনে করেন, ধর্ম বা ধর্মীয় কুসংস্কার নিয়ে লিখলেই ঝামেলা তৈরি হবে। তারা এও মনে করেন, যে লেখায় ঝামেলা তৈরি হয় তা লেখারইবা কি দরকার। কবি কবিতা লিখবে- ফুল, ফল, নদী, প্রকৃতি নিয়ে। নির্ঝঞ্জাট, ঝামেলা মুক্ত।

পড়ুন-নজরুলকাব্যে প্রেম ভাবনা

বেশিরভাগ মানুষ ঝামেলায় জড়াতে চান না একথা যেমন সত্য তেমনি কেউ কেউ বীরত্বের সাথে সত্য বলে যান। যদিও এর সংখ্যা নেহায়েতই কম। সংখ্যা যতই কম হোক না কেন আমি এঁদেরকেই সমাজ-সংস্কারক বলে তৃপ্তি পেতে চাই। আর ঘৃণা করতে চাই যারা সত্যকে এড়িয়ে চলেন।

প্রিয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের যৌক্তিক বর্ণনা আমাকে সবসময় আকৃষ্ট করে। পাঠক হিসেবে আমি বারবার মুগ্ধ হই আর নিজেকে তার অনুসারী করার চেষ্টায় রত থাকি। মানুষ আগে ছিল ধর্মান্ধ আর এখন ধর্ম ব্যবসায়ী। একদল সচেতন মানুষ ধর্মান্ধদের কুসংস্কার মুক্ত করার জন্য নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে। তারা একটি সুন্দর-সমৃদ্ধ-অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেন। পক্ষান্তরে ধর্ম ব্যবসায়ীরা সাধারণ মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে একটি অশান্ত-অমানবিক-সাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ হিসেবে বিশ্বের কাছে উপস্থাপনে কৌশলী ভূমিকা রাখে। যা চরমভাবে নিন্দনীয়। নজরুল কথা বলতেন এদের বিরুদ্ধে। এদের কাজের বিরুদ্ধে। সর্বস্তরের মানুষকে তিনি আহবান করতেন ‘কে আছো জোয়ান, হও আগুয়ান’।

পড়ুন: অসাম্প্রদায়িক নজরুল ও আমাদের বোধ

নজরুলের অসাম্প্রদায়িক মনোভাবে আমরা যেমন উজ্জীবিত হই, আশা করি বাংলার প্রতিটি তরুণ নজরুলের কবিতা বার বার আওরিয়ে তেজস্বী হবে, শক্তিমান হবে। উঁচু কন্ঠে তারা চিৎকার করে বলবে-

‘যাহারা মানবতার ধ্বংস না করিয়া রোধ
বেআক্কেল এর মত প্রার্থনায় মত্ত সে মহা নির্বোধ’