কোরবানী ভেতরের পশুকে নিয়ন্ত্রণ করার অনুপ্রেরণা যোগায়

বৈশ্বিক বাজার উর্ধ্বগতি বির্যস্তু করে দিচ্ছে আমাদের। এমন পরিস্থিতির মধ্যে উদযাপিত হচ্ছে ঈদ-উল-আজ¦হা। কোরবানী মানুষের মনের ভেতরের হিংসাকে নিয়ন্ত্রণ করার অনুপ্রেরণা যোগায়। মানুষের ভেতরের পশুবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করতে শেখায়। রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে সৃষ্ট দামামাও ভেতরের পশুবৃত্তিকে জাগিয়ে তুলেছে। যার খেসারত দিচ্ছে গোটা দুনিয়া। আমরা কায়মনবাক্যে প্রার্থনা করি ক্ষমতাধরদের ভেতরের পশুবৃত্তি দমন হোক। বাজারের পশু কোরবানী দিয়ে আমাদের ভেতরের পশুকে দমন করা যাবে না। আমরা সবাই যেন পশু কোরবানীর মাধ্যমে নিজের ভেতরের পশুকে নিয়ন্ত্রণ করি। তাহলেই আমাদের পশু কোরবানী সার্থক হবে। নিজেরা যেন নূন্যতম স্বার্থকে ত্যাগ করে মানুষের কল্যাণে দাঁড়াতে পারি। ক্ষমতার দম্ভ আর হিংসা যেন পাথেয় না হয়। ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে আমরা যেন বিশ্বমানবতার জয়যাত্রার পথে থাকতে পারি। ঈদ-উল-আজ¦হা উপলক্ষে পৃথিবীর সকল মানুষের মঙ্গল কামনা করছি। সেই সঙ্গে কৃতজ্ঞতা ী নিরন্তর শুভেচ্ছা আমাদের পাঠক, সুভানুধ্যায়ীসহ বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিককে।
যুদ্ধ বিগ্রহ পৃথিবীর অর্থনীতিকে ভঙ্গুর করে দিয়েছে। রাশিয়া ইউক্রেনের যুদ্ধ আমাদের এক কঠিন বাস্তবতার দিকে ঠেলে দিয়েছে। একদিকে বাজারের উর্ধ্বমখি চাপ সামাল দিতে হচ্ছে, অন্যদিকে কঠিন অর্থনৈতিক সংকটে ফেলছে। যার ফলে উন্নত দেশগুলোও সংকটে পড়ছে। আর আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশের চ্যালেঞ্জ পাহাড় সমান। বর্তমান অবস্থায় ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সবক্ষেত্রেই হাতাশার ছায়া। যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই, যুদ্ধ পরবর্তী সময় অবশ্যই একদিন সুন্দর পথের দিশা পাবো।
করোনা কিছুটা হলেও হিংসা দ্বেষ, বিভেদ, অহংকার, দম্ভ, প্রভাব-প্রতিপত্তির ভীত নাড়িয়ে দিয়েছেছি। শান্তির সোপান রচনা কওে দিয়েছিল করোনা। বিশে^ও সকল পরাশক্তির পারমানবিক অস্ত্রো অকেজো হয়েছিল। দেশে দেশে দখল, নিয়ন্ত্রণ শক্তি পরীক্ষার লড়াই বন্ধ হয়েছিল। কিন্তু করোনার থাবা থেকে মুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেওয়ার আবারও পশুবৃত্তির উত্থান ঘটতে শুরু করে। সেই উত্থান গোটা দুনিয়াকে করোনার মতোই বিপর্যস্তু করে ফেলে। যুদ্ধ থামাও, আমরা শান্তি চাই, আমরা মানুষের মঙ্গল চাই, আমরা পৃথিবীকে মানুষের বাসোপযোগী করতে চাই।
ত্যাগের অপার মহিমার নাম হচ্ছে কোরবানী। আল্লাহ তাআলা ইসমাইল (আ:)কে তাঁর প্রিয় জিনিষ কোরবানী দিতে বলেছিলেন। ইসমাইল (আ:) বুঝতে পেরেছিলেন তার প্রিয় জিনিষ হচ্ছে তার প্রাণের ধন, প্রিয় সন্তান। আল্লাহর আদেশে তিনি সেই পুত্র সন্তানকেই কোরবানী করছিলেন। কিন্তু মহান আল্লাহ ইসমাইল (আ:) এর কোরবানী কবুল করে নেন। তবে তার সন্তান নয়, সন্তানের পরিবর্তে পশুা কোরবানীর মাধ্যমে। ইসমাইল (আ:) তাঁর ভেতরের পশুকে কোরবানী দিয়ে আল্লাহর কাছে কোরবানী কবুল করান। মানুষের ভেতরের পশুত্বকে নিয়ন্ত্রণের জন্যই কোরবানীকে ফরজ করা হয়েছে। কিন্তু আমরা কি করছি? কোরবানীর নামে প্রতিযোগিতায় নামছি। একধরণের অসুস্থ্য প্রতিযোগিতা। আমাদের ভেতরের অহম দূর করে আমরা কোরবানী দিতে পারছি ক’জন? কোরবানী দিতে গিয়েও যদি হিংসা, দ্বেষ, দম্ভ, ক্ষমতার ব্যবহার হয়, তাহলে সেটা লোক দেখানো কোরবানী ছাড়া অন্য কিছু হতে পারে?
আসুন, এই কোরবানীর মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের রাগ, ক্ষোভ, ক্রোধ, পাপবোধ, অহংকার এবং ক্ষমতাকে একটু নিয়ন্ত্রণ করি। ভেতরের পশুবৃত্তিকে নিবৃত্ত করে মানুষের কল্যাণে নিবেদিত হই। বিশ্বমানবতার জয়গানের কথা চিন্তা করে শান্তির পথ রচনা করি। আগামী সুন্দর পৃথিবী বিনির্মাণে যে যেখানে আছি, সেখান থেকেই অবদান রাখার চেষ্টা করি।