বাবার পুরনো নোটবুকটি আজও আলমারিতে রেখেছে মা

বাবার পুরনো নোটবুকটি আজও আলমারিতে রেখেছে মা

বাবার সেই পুরনো নোটবুকটি আজও আলমারিতে রেখেছে মা। যত্নে তুলে রেখেছে ফ্রেমে একটি ছবি আরও কত কাগজপত্র। মনে হয় এ বুঝি বাবা এসে মাকে বলবে ‘এই দাও আমার নোটবুক আর কাগজপত্র আমি চেম্বারে যাবো’। আর দিনভর অপেক্ষার প্রহরের সাথে আমি আজও যেন প্রতীক্ষায় রয়েছি কখন বাবার ফোন এসে ভেজে উঠবে আর স্নেহভরা কন্ঠে বলবে ‘সাগর’ কেমন আছ? -জানি এ অপেক্ষার শেষ নেই। অপেক্ষার সাগরে আরো একটি বছর যোগ হয়ে ১৬ বর্ষে পদার্পণ করবে ২১শে ফেব্রুয়ারি  ২০২২। ভীষণ মনে পড়ছে বাবা তোমায় আজ এ মৃত্যুবার্ষিকীর দিনটিতে ভীষণ। “রাব্বির হাম হুমা কামা রাব্বাইয়ানিস সাগিরা” -আল্লাহ তোমায় জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুন…!!

বাবাকে আজ বড্ড মনে পড়ছে- কি কর তুমি? সজিব, সোহাগ, সুমি ওরা কোথায়? জানতে বড় ইচ্ছে হয়! তোমার জন্য আমার বুকের গহীনটায় কেমন যেন পুড়ে দিবারাত্রি। এই সেই ২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাস যে মাসে তুমি শুধু আমাদেরকেই নয় সমস্ত পৃথিবীকেই বিদায় জানিয়ে চলে গেছ সকল মায়াজাল ছিন্ন করেছ না ফেরার দেশে। যখন তোমাকে দেখলাম তখন তুমি গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ছিলে। শত-হাজারো ডেকেছি, তোমায় ধরে কত কেঁদেছি – শুধু তোমার মুখের একটি বর্ণমালা শুনার জন্য, তা হয়নি – সেজন্য আজও হৃদয়ে রক্তক্ষরণ থামেনি। তুমি দেখতে পাওনি হাজারো মানুষের ভালবাসায় সিক্ত হয়ে ঠাই নিয়েছ তোমার আসল বাশের ঘেরা ঘরে। তুমি এও দেখতে পাওনি মায়ের কান্না আহাজারি! এ কথার মাঝে যে কতটুকু ব্যাথা জড়িয়ে আছে যদি তুমি শুনতে!

বাবাকে আজ বড্ড মনে পড়ছে- পড়ালেখার জন্য তুমি কত শাসন দিতে আমাদের সকল ভাইবোনদের মাঝে মধ্যে গালাগাল দিতে, পরক্ষনেই আদর করে ‘বাবা’ বলে ডাকতে, গল্প শুনাতে, বাবা কতদিন হল তোমার কোন শাসন পাইনা, খুব ইচ্ছা হচ্ছে শাসন পেতে, শুনেছি বাবা-মায়ের হাতে মার খেলে নাকি শরীরের ঐ অংশ বেহেস্তে যায়। কিন্তু তুমি কখনই মারোনি কেনো মারোনি। রেখে যাওয়া তোমার ভিটে-মাটিকে সবাই এখনও “আজাহার আকন বাড়ি বলে” বলে। বাবা তোমার অনুভূতি, ভালোবাসা, অস্তিত্ব সবসময় যেন আমাদেরকে আষ্টেপৃষ্টে ঘিরে আছে, যদিও তুমি আছ অনেক দূরে, অচীনপূরে।

বাবাকে আজ বড্ড মনে পড়ছে- বাবা ছিল আমাদের আসল বন্ধু । হাজারো কথা শেয়ার করতেন, বিভিন্ন উপদেশ দিতেন। বাবা- আপনার দৈনিক পেপার পড়ার অভ্যাস ছিলো আসুন পেপার পড়ুন আজ আপনার ছোট ছেলে সাংবাদিক আসুন আমার লেখা পড়ুন! বাবা কত কাছের বন্ধু ছিল -তা আজ মনে পড়ছে বাবা সকালে হাটতে বেরহতো আমাকেও সাথে নিয়ে নাস্তা করতে যেতো আজ আর কেউ নেয়না। আজ শুধু বলতে ইচ্ছা করছে, বাবা তুমি কি পার না আমাদের মাঝে আবার ফিরে আসতে, আজ ১৬ টা বছর তোমাকে ছাড়া আমরা কেমন আছি তোমার কি একবারো দেখতে ইচ্ছে করে না?

বাবাকে আজ বড্ড মনে পড়ছে- মনে হয়, আমাদের মাথার উপর বটবৃক্ষের ছায়াটা নেই। সন্তানদের একটু ব্যাথা ও কষ্ট হলে তোমার সহ্য হতোনা। সব সময় আগলে রেখেছিলে অক্টোপাসের মত । কোন কারনে মন খারাপ থাকলে বা কিছুতে ভেঙ্গে পড়লে, তোমার মত করে কেউ শান্তনা দেয়নি, সাহস দেয়নি তুমি যেমন দিতে, মাথায় হাত ভুলায়নি তুমি যেমন ভুলিয়েছিলে। বাবা যে কি পরম বস্তু তা আজ বুঝছি-যখন আমিও আজ একজন “বাবা”। কতদিন বাবা ডাকা হয়নি তোমায়- আর হবেনা কোনদিনই? তোমাকে এখনো মাঝেমধ্যে স্বপ্নে দেখি, আমি আর তুমি হাঁটছি পাশাপাশি। জানো বাবা, বুকের গভীরে একটা স্মৃতিসৌধের আয়না আছে যার মুখোমুখি দাঁড়ালেই তোমাকে দেখতে পাই, অনুভবে স্পর্শ করতে পারি তোমার অস্তিত্ব।

বাবাকে আজ বড্ড মনে পড়ছে- আমার বাবা মরহুম আজাহারুল ইসলাম আকন ছিলেন একজন আদর্শবান ও কর্তব্যপরায়ন একচিলতে মানুষ । মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি বিভিন্ন সমাজ সেবামূলক কাজ করে গেছেন। অপরের দু:খে তিনি দূ:খিত হতেন, হাত বাড়িয়ে দিতেন অনায়াসে। তিনি নিজের সন্তানের চেয়েও অপরের সন্তানকে বেশি ভালবেসেছেন। তিনি এ‍্যাডভোকেট ক্লার্ক ছিলেন তাই এলাকার সবাই “মহুরি সাহেব” বলেই ডাকতো। তুমি ছাড়া আমি একজন অসম্পূর্ণ মানুষ। তুমি থাকলে যা শিখতাম, তা হয়নি আর আমার জীবনে। তবে বাবা তোমার আদর্শ যেন জীবনে প্রতিফলিত হয় আর তোমার এ আদর্শ নিয়েই আগামী পথগুলো যেন চলতে পারি সে দোয়া কর।

বাবাকে আজ বড্ড মনে পড়ছে- বাবা তোমাকে নিয়ে লিখলে শেষ হবে না আমার হৃদয়ের হার্ডডিস্কের এক মেগাবাইটটা । ডিলেট করতে পারিনা তোমার হাজারো স্মৃতির কোন ফাইলটা । স্মৃতিপটে রয়ে যাবে তোমার স্মৃতি চিহ্নটা । শুধু মন খারাপ হয়ে যায়- হাত বাড়ালে তোমাকে আর ছোঁয়া যাবে না, পা ছুঁয়ে সালাম করা হবে না, কোনদিন আর আদর করবে না, খুশী হবে না আমার সাফল্যে। সৃষ্টিকর্তা জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুক ।-আমীন!!